নাফিজ সরাফাত ও তাহের ইমামের বিরুদ্ধে সিআইডির অনুসন্ধান শুরু


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩:১৮ অপরাহ্ন, ১লা সেপ্টেম্বর ২০২৪


নাফিজ সরাফাত ও তাহের ইমামের বিরুদ্ধে সিআইডির অনুসন্ধান শুরু
ফাইল ছবি

প্রতারণা, জালিয়াতি, অর্থপাচারসহ নানা অভিযোগে চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ও তার স্ত্রী আনজুমান আরা শহীদ এবং হাসান তাহের ইমাম ও তাদের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। 


রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম অনুসন্ধান শুরু করেছে।


আরও পড়ুন: শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইতে পারে বাংলাদেশ: রয়টার্সকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা



সিআইডি সূত্রে জানা যায়,  চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ২০০৮ সালে রেইস ম্যানেজমেন্ট পিসিএল নামে একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানীর লাইসেন্স নেন। তার  সঙ্গে সহযোগী হিসেবে ছিলেন ডক্টর হাসান তাহের ইমাম। সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানীটি সে সময়ে বিভিন্ন কর্মশালার  মাধ্যমে পুজি-বাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বেশ সারা ফেলে দিয়েছিল। রেইস ২০০৮ সালে যাত্রা শুরুর পর ২০১৩ সালের  মধ্যেই ১০টি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডে সম্পদ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পায়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির অধীনে ১৩টি ফান্ড রয়েছে।  মূলত এসব মিউচুয়াল ফান্ডকে ব্যক্তি স্বার্থে অর্থ উপার্জনের কাজে লাগিয়ে চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ও তার স্ত্র্রী আনজুমান  আরা শহীদ এবং হাসান তাহের ইমাম ফান্ডের অর্থ বিনিয়োগ করে তৎকালীন ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক)  শেয়ার কিনে ব্যাংকটির পর্ষদের পরিচালক বনে যান। ব্যাংকটির উদ্দ্যোক্তাদের তালিকায় এ দুজন ছাড়াও নাফিজের স্ত্রী  আনজুমান আরা শহীদ ও ছিলেন। যদিও এ বিনিয়োগ থেকে ফান্ড গুলোর কোন লাভ হয়নি। পরবর্তী সময়ে কৌশলে চৌধুরী নাফিজ সরাফাত তার স্ত্রী আনজুমান আরা শহীদকে সাউথ ইস্ট ব্যাংকের পরিচালক বানান।


আরও পড়ুন: যেসব দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন প্রধান উপদেষ্টা


সিআইডি  জানায়, সম্প্রতি বেস্ট হোন্ডিংসের বন্ডে  ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের জন্য চৌধুরী নাফিজ সরাফাত চাপ দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ইনফ্রস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড লিমিটেড (বিআইএফএফএল) প্রতিষ্ঠানকে। জঅঈঊ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির নিকট হতে  অর্থ সংগ্রহ করে ১০ টি মিউচুয়াল ফান্ড গঠন করেছে। ফান্ডসমূহের সম্মিলিত আকার-প্রায় ৪৫০০ কোটি টাকা। ফান্ডের অর্থ  দিয়ে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য যে এফডিআর খোলা হয়, মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজেশ  করে সে এফডিআরগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয় । এর ফলে ফান্ডে বিনিয়োগকারীরা কোটি কোটি টাকার মুনাফা হতে বঞ্চিত  হচ্ছে। ঝঞউ/ঝঘউ একাউন্টে মাত্র ৩-৪ শতাংশ সুদে ফান্ডের ৬৫০/৭০০ কোট টাকা জমা রাখা হয়। 


আরও জানায়, সুদের ২-৩ শতাংশ  অর্থ ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজেশ করে আত্নসাত করা হয়। শেয়ার বাজার হতে প্রাপ্ত লভাংশের ন্যূনতম ৭৫ % বিনিয়োগকারীদের মাঝে বন্টনের নিয়ম থাকলেও রেইস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানী কর্তৃক অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ নিয়ম না মেনে লভ্যাংশের অধিকাংশ টাকা আত্নসাত করে থাকে। ইএওঈ নামক ব্রোকারেজ হাউজ (যার অধিকাংশ শেয়ার সিইও  হাসান ইমামের আত্নীয়-স্বজনের নামে ক্রয় করা) এ শেয়ার ক্রয়ের নিমিত্তে যে টাকা হয়,তার একটি বড় অংশের টাকা দিয়ে ফান্ডের নামে শেয়ার ক্রয় না করে বিভিন্ন আত্নীয় স্বজনের নামে শেয়ার ক্রয় করা হয়। এভাবে ফান্ডের বিনিয়োগকারীদের  শেয়ার বাজারের কোটি কোটি টাকার মুনাফা হতে বঞ্চিত করে উক্ত টাকা আত্নসাত করা হয়। মাঝে মাঝে ফান্ডের টাকা  (৫০০-৭০০ কোটি) দিয়ে খুবই কৌশলে শেয়ার বাজারের কোন একটি কোম্পানীর বিপুল পরিমান শেয়ার ক্রয় করে  ইচ্ছাকৃতভাবে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে দিয়ে সাধারন শেয়ার হোল্ডারদের কোটি কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতিসাধন করে থাকে।


মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর মেয়াদ (১০ বছর) উত্তীর্ণ হলেও ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের মুনাফাসহ সমূদয় অর্থ ফেরত না দিয়ে  SEC এবং ICB এর যোগসাজেশে মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ পুনরায় ১০ (দশ) বছর করে বৃদ্ধি করা হয় কানাডিয়ান  ইনভাসিটি অব বাংলাদেশের ট্রাষ্টি বোডের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফত । ২০১৮ সালের ২ রা ডিসেম্ভর পূর্বাচল নুতন  শহর প্রকল্পে ১৭১ দশমিক ১৬ কাঠার একটি প্লট কানাডিয়ান ইউনিভারসিটিকে বরাদ্দদে দেয় রাজুক। এতে সরকারের ক্ষতি হয় ৭৭ কোটি টাকা। মিউচুয়াল ফান্ড গুলের মালিকানার পাশাপাশি নাফিজ সরাফত আরগাস ক্রেডিট রেটিং সার্ভিস এর চেয়ারম্যান। 


জেবি/এসবি