কক্সবাজারে চিকিৎসককে মারধর ও ভাংচুর, চিকিৎসা সেবা বন্ধ
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২:১০ অপরাহ্ন, ১১ই সেপ্টেম্বর ২০২৪
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে সিসিইউতে ভর্তি এক রোগির মৃত্যুর জেরে কর্তব্যরত চিকিৎসককে মারধর করা হয়েছে। এ সময় আইসিইউ, সিসিইউসহ হাসপাতালে ভাংচুর চালানো হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে সকল প্রকার চিকিৎস সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেফতার করা না হলে কাজে ফিরবে না চিকিৎসক নার্সসহ সব ধরণের কর্মচারীরা এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে নিখোঁজ পর্যটকের ২০ ঘন্টার পর মৃতদেহ উদ্ধার
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত দেড়টার সময় সিসিউতে ভর্তি থাকা কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া এলাকার আবদুল আজিজ নামের এক রোগির মৃত্যু হয়।
স্বজনদের অভিযোগ, ব্যথানাশক ইনজেকশন পুশ করার পরই তার মৃত্যু হয়। ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে দাবি করে হাসপাতালের ভেতরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন তার স্বজনেরা।
এক পর্যায়ে তারা কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সজিব কাজিকে মারধর করা হয়। চালানো হয় ভাংচুর।
হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. জাহিদুল মোস্তফা জানিয়েছেন, জটিল রোগি সংকটাপন্ন রোগিকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দেয়ার পরও কয়েকজন যুবক চিকিৎসককে ব্যাপক মারধর করে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালানো হয়। ভাংচুর চালানো হয় আইসিইউ, সিসিইউসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে। নিয়ে যাওয়া হয় নানা সরঞ্জামও। আহত চিকিৎসক আশংকাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরা ঘটনার একটি ফুটেজে দেখা যায়, ৪ জন যুবক চিকিৎসক সজীবকে ধরে মারধর করছে। এক পর্যায়ে চিকিৎসক জ্ঞান হারিয়ে নিচে পড়ে যায়। ফুটেজে হামলাকারি ২ জনকে ইতিমধ্যে শনাক্তও করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আসিফ ও মেহেদী নামের এই ২ জন মৃত্যু হওয়া রোগির স্বজন না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে চিকিৎসকে মারধর ও লাঞ্ছিত হওয়াকে কেন্দ্র করে ইন্টার্ন চিকিৎসক হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। এই ঘটনার সুরাহা না হলে হাসপাতালের আবাসিক রোগীদের কোনো ধরনের সেবা দেওয়া হবে না বলেও জানিয়ে দেন তারা। এমনকি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রবেশ করে জোরপূর্বক চিকিৎসা কার্যক্রমও বন্ধ করে দেন। জরুরি বিভাগে সেবা সচল থাকলেও বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে সেটিও বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করছে চিকিৎসক-ওয়ার্ড কর্মীসহ হাসপাতালটির নানা শ্রেণীর স্টাফরা।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার নুরুল হুদা বলেন, যদি নিরাপত্তা দিতে না পারে তাহলে কোন স্টাফই কাজে ফিরবে না। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে তা নিশ্চিত করতে হবে। কথায় কথায় চিকিৎসকসহ স্টাফদের উপর হামলা হচ্ছে। তাতে সবাই নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। তারপর সেবা।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে পুলিশ হত্যা মামলায় আসামির ফাঁসি রায়
ওয়ার্ড কর্মীদের নেতা শোভন দাশ বলেন, গেল তিন মাস কোন ধরণের বেতন পায়নি। তারপরও আমরা সেবা নিশ্চিত করেছি। কিন্তু এখন নিজের উপর হামলা হচ্ছে। নিরাপত্তা যদি না থাকে তাহলে কিভাবে কাজ করবো আমরা।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কলেজের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (প্রশাসন) ডা. জি. আর. এম জিহাদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি সমাধানে আলোচনায় বসেছে চিকিৎসক-নার্স ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। বৈঠকটিতে সিদ্ধান্ত না আসলে অনির্দিষ্টকালের কর্ম-বিরতিতে যেতে পারে হাসপাতালের দায়িত্বরতরা।
এসডি/