Logo

কক্সবাজারে পানিবন্দি শতাধিক গ্রাম, পাহাড় ধসে নিহত ৬

profile picture
জনবাণী ডেস্ক
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০২:০৬
47Shares
কক্সবাজারে পানিবন্দি শতাধিক গ্রাম, পাহাড় ধসে নিহত ৬
ছবি: সংগৃহীত

টানা তিন দিন কক্সবাজারে ভারি বৃষ্টি এবং ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

টানা তিন দিন কক্সবাজারে ভারি বৃষ্টি এবং ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত রয়েছে। আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘন্টায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে কক্সবাজারে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ( ১২ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৩ টা থেকে শুক্রবার ৩ টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় মোট বৃষ্টিপাতের পরিমান ৫০১ মিলিমিটার। এটি ২০১৫ সাল থেকে আজ পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। বৃষ্টি আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভারি বৃষ্টিতে পর্যটন শহরের ৯০ শতাংশ এলাকায় একণ জলাবদ্ধতা রয়েছে। প্রধান সড়কসহ শহরের ৫০ টি টি উপসড়ক বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে। ওই সব এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করে নষ্ট হয়েছে মালামাল। বসত বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে।

পর্যটন জোন কলাতলীর হোটেল মোটেল এলাকার সকল সড়ক, সৈকত সংলগ্ন এলাকা, মাকের্ট সমুহ ডুবে আছে পানিতে। কলাতলী সড়কের দুই পাশের পাঁচ শতাধিক হোটেল গেস্ট হাউসে যাতায়াতের ২০টি উপসড়কও ডুবে যায়। ফলে আগত কয়েক হাজার পর্যটক হোটেলের কক্ষই বন্দি আছেন।

বিজ্ঞাপন

শহরের প্রধান সড়কের বাজারঘাটা, বড়বাজার, মাছবাজার, এন্ডারসন সড়ক, টেকপাড়া, পেশকারপাড়া, বার্মিজ মার্কেট এলাকা, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, গোলদিঘিরপাড়, তারাবনিয়াছড়া, রুমালিয়ারছড়া, বাাঁচা মিয়ার ঘোনা, পাহাড় তলী, সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, ফদনারডেইল, নুনিয়াছড়া, বৈদ্যঘোনা, ঘোনারপাড়া, বাদশাঘোনা, খাজা মঞ্জিল, লাইটহাউস, কলাতলী, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, লারপাড়া এলাকা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। যেখানে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সংখ্যা অন্তত ৫ লাখ।

বিজ্ঞাপন

কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকতার কামাল বলেন, ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে এই ওয়ার্ডের ১০ হাজার ঘরবাড়ি ডুবে যাবে। এই ওয়ার্ডে ৮০ হাজার শ্রমজীবী মানুষের বসবাস।

বিজ্ঞাপন

৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওসমা সরওয়ার টিপু জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢলের পানিতে পাহাড়তলীর তিনটি সড়ক ডুবে কয়েক শ ঘরবাড়ি পানি ঢুকে পড়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে ৩ টি ব্রীজ। ফলে যান চলাচলও বন্ধ হয়ে গেছে। দুর্ভোগ আছেন মানুষ।

বিজ্ঞাপন

কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ভারী বর্ষণে হোটেল মোটেল জোন এখন পানিতে পানিতে সয়লাব। কলাতলী সড়ক, সকল উপ সড়ক, সৈকত সংলগ্ন ছাতা মাকের্ট, হোটেল লাবণী থেকে সুগন্ধা এলাকা এখন পানি আর পানি।

বিজ্ঞাপন

এই বৃষ্টিতে কক্সবাজারে সদর উপজেলা এবং উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৃথক পাহাড় ধসের ঘটনায় ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এর মধ্যে সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের দক্ষিণ ডিককূল এলাকায় পাহাড় ধসে একই পরিবারের তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে উখিয়া উপজেলার ১৪ নম্বর হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়।

বৃহস্পতিবার (১২  দিবাগত মধ্যরাতের পর কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের ২ ওয়ার্ডের দক্ষিণ ডিককুল এলাকা এবং উখিয়া উপজেলার ১৪ নম্বর হাকিম পাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৃথক এ পাহাড় ধসের এঘটনা ঘটে।

বিজ্ঞাপন

নিহতরা হলেন, কক্সবাজার সদরের দক্ষিণ ডিককূল এ মিজানুর রহমানের স্ত্রী আখি মনি (২১) এবং তার দুই শিশু মিহা জান্নাত নাঈমা (৫) ও লতিফা ইসলাম (১)।

এছাড়া নিহত অপর তিনজন উখিয়ার ১৪ নম্বর হাকিম পাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই-২ ব্লকের কবির আহমেদের ছেলে আব্দুর রহিম, আব্দুল হাফেজ ও আব্দুল ওয়াহেদ।

ঝিলংজা ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মিজানুর রহমান সিকদার বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে ২ টার দিকে ভারী বৃষ্টি হওয়ার সময় মিজানুর রহমানের বাড়ীর উপর বিকট শব্দে আকস্মিক পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়ে। এতে গৃহকর্তাসহ পরিবারের ৪ জন মাটিচাপা পড়ে।

পরে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবেশীরা ঘটনা মিজানুরকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এরপর স্থানীয়রা মাটি সরিয়ে অপর ৩ জনকে মৃত উদ্ধার করে।

স্থানীয় এ ইউপি সদস্য জানান, মিজানের বাড়িটি খাড়া পাহাড়ের পাদদেশে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিতে মাটি নরম হয়ে যায়। পরে মধ্যরাতে অব্যাহত ভারী বর্ষণের সময় পাহাড় ধসে বাড়ীর উপর চাপা পড়েছে।

এদিকে পাহাড় ধসের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দৌজা নয়ন বলেন, অব্যাহত ভারী বর্ষণে উখিয়ার ১৪ নম্বর হাকিম পাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে তিনটি বসত ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে মাটি চাপায় একই পরিবারের তিন সহোদরের মৃত্যু হয়েছে। পরে খবর পেয়ে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকেরা বিধ্বস্ত ঘর বাড়িতে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে মাটি সরিয়ে ৩ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে।

ভারী বৃষ্টিতে টেকনাফ ও উখিয়ার অন্তত ৮০ টি গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে টেকনাফের ৬০ টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি রয়েছি। টেকনাফ সদর, হোয়াইক্যং, হ্নীলা, বাহারছাড়া ও সাবরাং ইউনিয়নের এসব গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উখিয়ার রাজাপালং, জালিয়াপালং, হলদিয়াপালং ও পালংখালী ইউনিয়নের আর ২০ টি গ্রাম প্লাবিত হওয়া তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিভীষণ কান্তি দাশ জানিয়েছেন, ঝিলংজায় পাহাড় ধসে নিহত তিন জনের পরিবারকে ৭৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে কাজ চলছে। পানিবন্দি এলাকা তালিকা তৈরি, ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তার কাজ করা হচ্ছে।

এসডি/

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD