সাধন চন্দ্রের পেট যেন দুর্নীতির গোডাউন
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭:১০ অপরাহ্ন, ৭ই অক্টোবর ২০২৪
যদি থাকে নসিবে আপনা আপনিই আসিবে। এমটাই ছিল সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধনের সাধনা। দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি সাধনা করেছেন কাড়ি কাড়ি টাকার। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সাড়ে পাঁচ বছরের খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন নওগাঁর ধান ব্যবসায়ী সাধন চন্দ্র মজুমদার। মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারের সন্তান। বাবাও ছিলেন ধানের ব্যবসায়ী। ধান-চালের ওই আড়তের ব্যবসা দিয়েই চলেছে নয় ভাইবোনের বড় সংসার। সেই সাধন চন্দ্র শেখ হাসিনার ছাতায় ভর করে মন্ত্রিত্ব নিয়ে অসাধ্য সাধন করেছেন। যিনি নিজেও কখনো কল্পনা করেননি কোনো দিন মন্ত্রী হবেন। সাধন চন্দ্রের সাড়ে পাঁচ বছরের মন্ত্রিত্বকালে ঘুষ, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়নে হাজার হাজার কোটি টাকার চাঁদের হাট বসিয়েছেন তাঁর পুরো পরিবারে। সেই দুর্দান্ত দুর্নীতির বরপুত্র মন্ত্রী সাধন চন্দ্র সরকার পতনের পর লাপাত্তা ছিলেন। এরপর গত বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) রাতে তাকে রাজধানীর ভাটারা থেকে আটক করে পুলিশ।
নওগাঁর নিয়ামতপুর হাজীনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থেকে নসিব তাঁকে টেনে নিয়ে গেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর মহাদায়িত্বে। টানা চারবার এমপি হয়েছেন। গত সাড়ে ১৫ বছর সাধন চন্দ্রের জনপ্রতিনিধির জমানা ছিল নৈরাজ্য ও অরাজকতায় ভরা। ক্ষমতাকে তিনি মনে করতেন ‘জাদুর কাঠি’। সেই জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় নানা অপকর্মে জড়িয়ে নিজের ভাতিজা রাজেশ মজুমদার, ছোট ভাই মনোরঞ্জন মজুমদার মনা, ছোট মেয়ে তৃণা মজুমদার এবং দুই জামাতা আবু নাসের বেগ ও নাসিম আহম্মেদকে নিয়ে গড়ে তোলেন দুর্নীতির এক দুর্ভেদ্য সিন্ডিকেট। টাকার বিনিময়ে সব ‘অসাধ্য সাধন’ হতো মন্ত্রী সাধন চন্দ্রের আস্তানায়। শুধু তাই নয় তার পেটে ছিল খাদ্য বিভাগও।
১৮ কোটি মানুষের এ দেশে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের রয়েছে খাদ্য মজুদ ও জোগানের এক বিস্তৃত নেটওয়ার্ক। যেখানে খাদ্য বিভাগের প্রতিটি পদ অত্যন্ত লোভনীয়। প্রতিটি পদায়নে অন্তত ৩০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ কোটি টাকা পর্যন্ত নিলাম উঠত মন্ত্রীর আস্তানায়। লোভনীয় পদের মধ্যে ছিল আরসি ফুড (রিজিওনাল কন্ট্রোলার অব ফুড), ডিসি ফুড (ডিস্ট্রিক্ট কন্ট্রোলার) এবং ওসি এলএসডি (গুদাম কর্মকর্তা)। এ ছাড়া ধান-চাল বেশি উৎপাদন হয় এমন তালিকাভুক্ত জেলার বাইরেও যে কোনো স্থান ও পদে পদায়নের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দিতে হতো সাধন সিন্ডিকেটকে। খাদ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন এসব তথ্য। ঘুষ, র্দুর্নীতির সব অপকর্ম সমন্বয় করতেন মন্ত্রীর ভাতিজা রাজেশ মজুমদার। তিনি ছিলেন খাদ্যমন্ত্রীর সহকারী; বসতেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ে। সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রীর একান্ত সচিব সাধন চন্দ্রের বড় জামাতা আবু নাসের বেগ (মাগুরার সাবেক ডিসি) ও মন্ত্রীর এপিএসের দায়িত্বে থাকা ছোট মেয়ে তৃণা মজুমদার। টাকার বিনিময়ে দপ্তরের যে কোনো পদায়ন, বদলি, বরাদ্দ-সবকিছু মন্ত্রণালয়ে বসে তাঁরাই সামলাতেন। টাকার লেনদেন হতো মন্ত্রীর বেইলি রোডের সরকারি বাসায়। সেই বাসভবন সন্ধ্যা থেকেই খাদ্য বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার পদভারে মুখর থাকত। প্রায় প্রকাশ্য নিলামের মাধ্যমে দরদাম ঠিক করে পছন্দমাফিক বদলি কিংবা পদায়ন নিতেন খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
ভাইলীগ ও সিন্ডিকেটলীগ গড়ে হাতিয়েছেন শত কোটি টাকা:- সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার নওগাঁয় গড়েছিলেন ভাইলীগ ও সিন্ডিকেটলীগ। এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেই প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতেন। এর সঙ্গে সরকারি সব দপ্তরের নির্মাণ কাজের ২০ শতাংশ কমিশন চালু করেছিলেন ভাই লীগের সদস্যরা। ক্ষমতার অপব্যবহার করে ও খাদ্য নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। খাদ্যমন্ত্রী হলেও নওগাঁ জেলায় সড়ক, এলজিইডি, কৃষি, খাসপুকুর, সরকারি জমি ও বিভিন্ন নিয়োগ বাণিজ্য ছিল তাঁর দখলে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নওগাঁয় গড়ে তোলেন মজুমদার সাম্রাজ্য। যার প্রতিটি ধাপে ছিল অনিয়ম, দুর্নীতি ও দখল বাণিজ্য। সরকারি সব দপ্তরের নির্মাণ কাজের ২০ শতাংশ কমিশন সিন্ডিকেট চালু করেছিলেন। যে কোনো কাজ শুরু হলেই সাবেক মন্ত্রী সাধন চন্দ্রকে ২০ শতাংশ দিতে হতো। তাঁর ইশারা ছাড়া কোনো অফিস চলত না। তিনি এক পৃথক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন।
অপকর্ম-দুর্নীতির অভয়ারণ্য:- সিন্ডিকেট গড়ে নওগাঁ-১ আসনের সাবেক এমপি সাধন চন্দ্র মজুমদার মাফিয়া হয়ে ওঠেন। গড়ে তোলেন দুর্নীতির অভয়ারাজ্য। এলাকায় পুকুর লিজ, জমি দখল, সরকারি কাজের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, সরকারি প্রকল্প, সরকারি কেনাকাটা, বরাদ্দ সবই নিয়ন্ত্রণ করতেন এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা। সিন্ডিকেটের প্রধান ছিলেন সাধন মজুমদারের ভাই মনোরঞ্জন মজুমদার মনা। সঙ্গে ছিলেন ছোট মেয়ে তৃণা মজুমদার ও বড় মেয়ের জামাতা আবু নাসের বেগ। সিন্ডিকেট সদস্যদের সঙ্গে ছিল বিশাল গুন্ডাবাহিনী। এমপি নির্বাচিত হয়েই ধীরে ধীরে সবকিছু দখলে নেন সাধন। ২০১৯ সালে মন্ত্রী হওয়ার পর তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
নওগাঁয় অঘোষিত রাজতন্ত্রের রাজা:- গত ৪ আগস্ট পর্যন্ত নওগাঁ জেলায় ছিল অঘোষিত রাজতন্ত্র। রাজ্যজুড়ে এক নাম-সাধন চন্দ্র মজুমদার। শুধু তাঁর নামে মুদ্রা প্রচলন বাকি ছিল। এ ছাড়া উদ্বোধন, উদ্যাপন, পালিত, গঠিত সব অনুষ্ঠানেই তাঁর নাম রাখা চাই। না থাকলেই বরং বিপত্তি হতো সংশ্লিষ্টদের। সরকারি নির্মাণ কাজ, রাস্তাঘাট উন্নয়ন, নিয়োগসংক্রান্ত, স্কুল ম্যানেজিং কমিটি, ধর্মীয় উপাসনালয়, খাসজমি ও জমি দখল, বিচার সালিশ, বাজারব্যবস্থা, বিশেষ দিবস, নিজ দলের নেতৃত্ব গঠনসহ সবখানেই অনুমোদন লাগত খাদ্যমন্ত্রী সাধনের। নওগাঁ জেলাকে নিজের আয়ত্তে নিতে যা দরকার সবকিছুই তিনি করেছিলেন।
নওগাঁ জেলা সদরের বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা জানান, তিনি মন্ত্রী হয়ে বড় বড় সরকারি কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। সেসব কাজের লাভের সিংহভাগই যেত মন্ত্রীর পকেটে। ফলে বঞ্চিত হচ্ছিলেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। এ নিয়ে দলের ভিতরেও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু পদ হারানোর ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি।
প্রতিপক্ষকে রাখতেন কোণঠাসা:- প্রভাব খাটিয়ে প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা রেখেছিলেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। জেলার সব হাটবাজারের ডাক নিতেন তিনি। সাধন মজুমদারের ভয়ে বাঘে-মহিষে এক ঘাটে পানি খেতে বাধ্য ছিল। এলাকার পাতিসন্ত্রাসীরাও সাধনের কথামতো ওঠবস করতেন। কোনো কোনো এলাকায় বিএনপি নেতা-কর্মীরা কথামতো না চললে দেওয়া হতো মামলা। দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত প্রায় ২০ কোটি টাকার সরকারি খাসজমিতে মন্ত্রী প্রভাব খাটিয়ে গড়েছেন ট্রাক টার্মিনাল। নওগাঁয় হাজার কোটি টাকার সিএসডি নির্মাণের তথ্য জনগণ জানে না। সাপাহারে যে স্থানে অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলা হবে সেখানে অধিকাংশ জমি রয়েছে মন্ত্রী ও তাঁর লোকজনের। কম দামে জমি কিনে বেশি দামে সরকারের কাছে বিক্রির নীলনকশা তৈরি করেছিলেন মন্ত্রী।
দখলে নিয়েছিলেন সরকারি পুকুর:- নওগাঁ জেলার সরকারি পুকুরগুলো প্রভাব খাটিয়ে দখলে রেখেছিলেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন মজুমদার। এসব নিয়ন্ত্রণ করত তাঁর সিন্ডিকেট বাহিনী। নওগাঁ-১ আসনের সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর-এ তিন উপজেলায় ব্যাপক মাছের চাষ হয়। লাভজনক এ চাষে আয় আসে কোটি কোটি টাকা। এতে নজর পড়ে সাধন চক্রের। যে কারও নামেই পুকুর লিজ থাকুক না কেন, তা সিন্ডিকেটের কাছে ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হতো। সরকারি এমন অনেক জলাশয় আছে, যেগুলো গত পাঁচ বছরের মধ্যে লিজ দেওয়া হয়নি। পুকুরগুলো ছিল সাধন সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে। দলীয় লোকজন ছাড়াও ব্যবসায়ীর কাছে কমিশনের মাধ্যমে মাছের ব্যবসাও চলত মন্ত্রীর। সাধন মজুমদারের নামে কোনো পুকুর বা বড় জলাশয় লিজ না থাকলেও তাঁর সিন্ডিকেটের সদস্যরা রাতারাতি পুকুর দখল করতেন।
তাকে গ্রেফতারের পর নওগাঁর নিয়ামতপুরে এখন খুশির আমেজ। মাছ ব্যবসায়ী আবদুল হাকিম মন্ডল বলেন, ‘অনেক বছর নিজের সম্পত্তি ভোগ করতে পারিনি। পুকুর ভরা মাছ তুলে নিয়ে বিক্রি করেছেন সাবেক মন্ত্রীর লোকজন। ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারিনি। আমার নিজের পুকুরসহ আরও অনেক পুকুর তারা ছিনিয়ে নিয়েছিল। নিজের জলার ধারেকাছে ঘেঁষতে পারিনি এতদিন। আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছিলাম। আল্লাহ কথা শুনেছেন। শেখ হাসিনার পতনের পর মন্ত্রী গ্রেফতার হয়েছেন। নিজের পুকুরটা ফেরত পেয়েছি। সেখানে মাছ চাষ করে সংসার চালাব।
কোটি টাকার পদায়ন বাণিজ্য:- সামান্য চাল ব্যবসায়ী থেকে অঢেল সম্পদের মালিক দাপুটে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ কথা বলছেন। সাধন সাম্রাজ্যের বেশ কয়েকজন সেনাপতি ছিলেন। তাঁর সেনাপতিরা দেনদরবার করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে মন্ত্রীর কোষাগারে জমা দিতেন। অভিযোগ রয়েছে, কমিশন বুঝে নিয়ে কাগজে স্বাক্ষর করতেন। প্রধান সেনাপতি ছিলেন তাঁর ভাতিজা রাজেশ মজুমদার। রাজেশ ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অলিখিত জুনিয়র মন্ত্রী। খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের বদলি বাণিজ্য, চাল-গম কেনায় নয়ছয়ের মূল মাস্টারপ্ল্যানার তিনি। মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব হওয়ার সুবাদে তিনিও সুযোগ পেয়ে গড়ে তুলেছেন বিপুল সম্পদ। মন্ত্রণালয়ের কাজকর্ম রাজেশ করলেও নওগাঁ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতেন সাবেক মন্ত্রীর ছোট ভাই মনোরঞ্জন মজুমদার মনা ও মেয়েজামাই নওগাঁ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহম্মেদ। নওগাঁ জেলা থেকে মন্ত্রণালয়ের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন (একান্ত সচিব) আবু নাসের বেগ। একজন এপিএসের দায়িত্ব পালন করতেন ছোট মেয়ে তৃণা মজুমদার। এ পাঁচজনই ছিলেন মূলত সাবেক মন্ত্রী সাধন মজুমদারের সেনাপতি। এ কজন মিলে পদায়ন, বদলি, বরাদ্দ সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করতেন। অর্থের লেনদেন হতো ঢাকায় বেইলি রোডে। দরদাম ঠিক করে পদায়ন নিয়েছেন কয়েকজন খাদ্য কর্মকর্তা। প্রতিটি পদায়নে সর্বনিম্ন ৩০ লাখ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হতো। গত ৫ আগস্টের আগে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে বগুড়ায় যোগদান করেন এক কর্মকর্তা। শোনা যায়, তিনি ১ কোটি টাকা লেনদেন করে বগুড়ার চেয়ারটি বাগিয়ে নেন। এ কর্মকর্তার দায়িত্ব ছিল বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ, গাইবান্ধা, রংপুরসহ কয়েকটি জেলার খাদ্য বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘুষ হিসেবে কমিশন সংগ্রহ করে দেওয়া। এ কমিশন চলে যেত সাবেক মন্ত্রীর কোষাগারে।
ধান-চাল মজুদকারীরা মন্ত্রীর আত্মীয়:- দেশের চালের অন্যতম মোকাম হিসেবে পরিচিত উত্তরের জেলা নওগাঁ। এখানে সামান্য হেরফের হলেই নড়েচড়ে বসে চালের বাজারদর। অথচ এ জেলায়ই বিভিন্ন গুদামে হতো অবৈধভাবে ধান-চাল মজুদ। মিলারের বেশির ভাগই সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের আত্মীয়। বাজার সিন্ডিকেট তৈরি করতে নওগাঁর গুদামগুলোয় অবৈধভাবে ধান-চাল মজুদ করতেন তাঁরা। হঠাৎ ধান-চালের দাম বাড়িয়ে দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতেন সিন্ডিকেটে তাঁর আত্মীয়রা।
নওগাঁ জেলার চাল ব্যবসায়ী মানিক প্রামাণিক জানান, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ক্ষমতায় থাকাকালে বড় বড় মিলাররা গোডাউনে হাজার হাজার টন পুরনো চাল ও ধান মজুত করে রাখতেন। তাঁদের সিন্ডিকেটের কারণেই চালের বাজারে কখনই অস্থিরতা কাটেনি। এসব করে তারা সে সময় শত শত কোটি টাকা লুটে নিয়েছেন।
মজুমদারের পেটে ছিল খাদ্য বিভাগ:- গম ও চালসহ খাদ্যপণ্য আমদানীতে রামরাজত্ব কায়েম করেছিলেন সাবেক মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। পছন্দের লোক দিয়ে গোপনে টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি ছাপানোসহ নিজস্ব লোককে সেই টেন্ডার পাইয়ে দিতেন। সরকারিভাবে সংগ্রহের চাইতে বিদেশ থেকে আমদানীতেই বেশি আগ্রহ ছিল তার। এসব কর্মকান্ডে তাকে সহযোগিতা করতো সোহেল নামে এক ঠিকাদার। গম সোহেল নামেই যার পরিচিতি গোটা খাদ্য বিভাগে। এভাবেই হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, সাবেক মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের পেটে ছিল খাদ্য বিভাগ।
জানা গেছে, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত অর্থ বছরে সরকার ১০ লাখ মেট্রিকটন গম আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানে রাশিয়ার সরকার ও বাংলাদেশ সরকার এর মাধ্যমে সরাসরি ৬ লাখ মেট্রিকটন গম আমদানি করা হয়। আর ৪ লাখ মেট্রিকটন গম ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে কেনা হয়। সিরাজগঞ্জের ন্যাশনাল ইলেকট্রিক নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক সোহেল ওরফে গম সোহেল রাশিয়া থেকে গম এনে সরকারি গোদামে সরবরাহ করতেন। এই গম সোহেল মূলত মন্ত্রী মজুমদারের লোক ছিলেন। ওপেন টেন্ডারের কথা বলা হলেও এসব গম আমদানি করতেন শুধু গম সোহেলই।
পোরশা, নিয়ামতপুর ও সাপাহার উপজেলা সদরের বেশ কয়েকজন জানান, সাবেক খাদ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা হলেও তিনি থাকতেন শহরে। তার ভাই ও সিন্ডিকেট সদস্যরা পুরো জেলাজুড়ে রাজত্ব চালাতো। জেলার খাদ্য বিভাগের সকল কিছু নিয়ন্ত্রন করতো তারা। সিন্ডিকেট করে কোটি কোটি টাকা নিজেরদের পকেটে নিতো সাবেক মন্ত্রীসহ তার বাহিনী।
জেবি/এসবি