১০০ দিনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যেসব গুরুত্বপূর্ণ অর্জন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:১২ অপরাহ্ন, ১৬ই নভেম্বর ২০২৪
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্ত সরকার দেশের দায়িত্ব নেয়। গত ১৫ নভেম্বর এ সরকারের ১০০ দিন পূর্ণ হয়েছে। এ উপলক্ষে সরকারের মূল অর্জনগুলো তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) এক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টে সরকারের অর্জনগুলোর কথা তুলে ধরেন তিনি।
স্ট্যাটাসে শফিকুল আলম লিখেছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্ণ হয়েছে। এই সময়ে সরকারের মূল অর্জনগুলো কী কী, তা নিম্নে প্রকাশ করা হলো-
আরও পড়ুন: গণপিটুনির মৃত্যু নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ, পুলিশের বিশেষ সতর্কতা
মসৃণ উত্তরণ:
একবার সাবেক সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করলে লাখ লাখ মানুষ মারা যাবে। কিন্তু তার উৎখাতের পর কতজন নিহত হলো?
অন্তর্বর্তী সরকার, রাজনৈতিক দলগুলো এবং সব বাংলাদেশি একত্রিত হয়ে আগস্টের প্রথম কয়েক সপ্তাহে সমাজের শৃঙ্খলাব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছিল। বিশেষ করে ওই সময়টায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেকাংশে অনুপস্থিত ছিল। মাসিক অপরাধ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকাংশে স্থিতিশীল হয়েছে।
জুলাই-আগস্ট গণহত্যার জন্য জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচার:
জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার তদন্তের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার জাতিসংঘের নেতৃত্বে একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনকে আমন্ত্রণ জানায়। যা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করছে। আশা করা যাচ্ছে, তদন্তের ভিত্তিতে তারা প্রথম রিপোর্টটি আগামী মাসের প্রথম দিকে জমা দেবে। আর সেটি পাওয়ার পর জানা যাবে, জুলাই-আগস্টের গণহত্যার নির্দেশ কে দিয়েছিল।
আরও পড়ুন: ২১ নভেম্বর ঢাকা সেনানিবাসে সীমিত থাকবে যান চলাচল
এ ছাড়া, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পৃথকভাবে এসব হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করছে। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের বিচারকার্য সত্যিকার অর্থে আন্তর্জাতিক মানের করা হবে, যাতে করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই রায়ের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে।
জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে আহতদের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেছে। এ লক্ষ্যে শহীদদের পরিবারের জন্য ৩০ লাখ টাকা ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত ও শহীদদের পরিবার দেখভালে একটি ফাউন্ডেশন তৈরি করা হয়েছে।
অর্থনীতি পুনরুদ্ধার:
অন্তর্বর্তী সরকার যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে, তখন দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ছিল। তবে ১০০ দিনের মাথায় দেখা যাচ্ছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আসা শুরু হয়েছে। রিজার্ভে হাত না দিয়েই বিলিয়ন ডলারের পেমেন্ট পরিশোধ করা হয়েছে। রপ্তানি খাতেও বইছে সুবাতাস। সেপ্টেম্বরে ৭ ও অক্টোবরে ২০ শতাংশের বেশি রপ্তানি আয় বেড়েছে।
একইসঙ্গে ব্যাংকিং খাতও অনেকটা স্থিতিশীল হয়েছে। অর্থনীতিকে পুনরায় গতিশীল করতে দেশের সেরা অর্থনীতিবিদদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং তারা নিঃসন্দেহে অনেক প্রশংসনীয় কাজ করেছে।
সংস্কার রোডম্যাপ:
দশটি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশনগুলো আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে। তখন সেই রিপোর্টগুলো নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে। দেশে কী ধরনের সংস্কার প্রয়োজন, সে বিষয়ে ঐক্যমত গড়ে উঠলে সরকার নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে।
ইতোমধ্যে আলাদাভাবে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। নতুন ও গ্রহণযোগ্য সিইসি ও ইসি খুঁজতে গঠন করা হয়েছে সার্চ কমিটি। নির্বাচন কমিশন গঠিত হলে ভোটার তালিকা তৈরির কাজ শুরু করা হবে।
আরও পড়ুন: সাবেক প্রধান বিচারপতি ফজলুল করিম আর নেই
বৈশ্বিক সমর্থন:
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগের জন্য ইতোমধ্যে পৃথিবীর প্রায় সব দেশ অভূতপূর্ব সমর্থন দিয়েছে। সম্প্রতি নিউইয়র্ক ও বাকুতে বছরের সবচেয়ে বড় দুটি বিশ্ব সম্মেলনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে রকস্টারের মতো সম্মানিত করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সংস্থা ও দাতারা আট বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে কিছু জায়গা থেকে প্রচুর পরিমাণে ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। যা সম্পর্কে বিশ্ববাসী অবহিত।
দুর্নীতি শূন্য:
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, এর উপদেষ্টা ও কর্মকর্তাদের কোনো দুর্নীতির গল্প এখন পর্যন্ত কেউ শুনেছেন কি না, তা নিয়েও স্ট্যাটাসে প্রশ্ন তোলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।
অস্থিরতা ও সংকট সমাধানে দক্ষ ও শান্তিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা:
অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা। এই ১০০ দিনের মধ্যে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ে অনেক দল রাস্তায় নেমেছে। তবে, এখন পর্যন্ত সরকার আলোচনার মাধ্যমে সেসব মোকাবিলা করেছে। আর এসব বিক্ষোভ দমনে সামান্যতম শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে কিনাও সন্দেহ!
স্থানীয়ভাবে অস্থিরতার কারণে পোশাক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু সমস্যা এখনও রয়েছে, কিন্তু সেগুলো আমাদের রপ্তানি কার্যক্রমে প্রভাব ফেলেনি।
আরও পড়ুন: আমাদের তরুণদের বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে: ড. ইউনূস
এর বাইরে সরকার ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলা ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করেছে। এ ছাড়াও আনসার বাহিনীর বিক্ষোভ কোনো ঝামেলা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা হয়েছে। অন্যদিকে, একটি বড় ধরনের নতুন রোহিঙ্গা সংকট কেউ বুঝে ওঠার আগেই সমাধান করা হয়েছে।
পররাষ্ট্রনীতিতে নতুন দিকনির্দেশনা:
ড. মুহাম্মদ ইউনূস সার্ক পুনরুজ্জীবিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া আসিয়ানে সদস্যপদ পাওয়ার জন্য তিনি জোরালো পদক্ষেপও নিয়েছেন।
এর বাইরে, ক্যাম্পে চাপ কমানোর জন্য রোহিঙ্গাদের তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনের প্রকল্প দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘের নেতৃত্বে একটি নতুন সম্মেলনেরও আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ:
বিগত ১০০ দিনে আমাদের সমাজে অভূতপূর্ব বিতর্ক দেখা গিয়েছে। মাদরাসা ছাত্র থেকে শুরু করে শহুরে অভিজাত, নারীবাদী থেকে ডানপন্থী, সবাই এই বিতর্কে অংশ নিয়েছেন। প্রতিদিন আমরা নতুন সেমিনার এবং আলোচনা দেখতে পাচ্ছি। ইতিহাসকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে নতুনভাবে দেখা হচ্ছে। নতুন-নতুন আইডিয়া শেয়ার করা হচ্ছে। জাতীয় মঞ্চে আগমনের ঘোষণা দিয়েছেন তরুণ তারকারা।
আশা করা যাচ্ছে, আসন্ন ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় বইমেলায় আমরা যে ধরনের সমাজ গড়তে চাই, সেই কল্পনার সমাজ নিয়ে ভালো কিছু বই দেখা যাবে।
এমএল/