‘জয় শ্রীরাম’ বলে আগরতলায় বাংলাদেশিদের ওপর হামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৭ অপরাহ্ন, ৩রা ডিসেম্বর ২০২৪
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, ভাঙচুর ও জাতীয় পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে অবমাননার মতো ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থায় সেখানে ভ্রমণ ও চিকিৎসার কাজে যাওয়া বাংলাদেশিরা বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।এমনকি ‘জয় শ্রীরাম’ বলে তাদের ওপর হামলারও একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) ও মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সেখানে হামলা ও হয়রানির শিকার ব্যক্তিরা সংবাদমাধ্যমের কাছে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন।
মুজিবুর রহমান নামে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের এক ব্যবসায়ী বলেন, একটি মেলায় অংশগ্রহণের জন্য সোমবার (২ ডিসেম্বর) ভারতের ত্রিপুরায় গিয়ে একটি আবাসিক হোটেলে উঠি। রাত ১২টার দিকে একদল লোক এবং সেখানকার পুলিশ এসে আমাকে হোটেল থেকে বের করে দেয়। পরে ‘জয় শ্রীরাম’ বলে হামলা করে ও আমার সঙ্গে থাকা বেশ কয়েকটি জামদানি শাড়ি ছিঁড়ে ফেলে। এরপর অনেকটা অরক্ষিত অবস্থায় খোলা আকাশের নিচে রাত কাটিয়ে মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে নিজ দেশে ফিরেছি।
আরও পড়ুন: আগরতলায় বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করছে নাগরিক কমিটি
অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, গত ৩০ বছর ধরে আমি ভারতে আসা-যাওয়া করি। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। ওই দেশের মানুষজন রাস্তায় আমাদের দেখলেই মারধর করছেন। অটোচালক থেকে রিকশাচালক, সবাই আমাদের মারতে আসছেন।
ত্রিপুরা থেকে ফিরেছেন কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বাসিন্দা ফরিদ মিয়া। নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সোমবার (২ ডিসেম্বর) আখাউড়া স্থলবন্দর হয়ে আগরতলাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। বাংলাদেশি ও মুসলিম হওয়ায় ভাড়া নেওয়ার একঘণ্টা পরই আমাকে হোটেল থেকে বের করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
ফরিদ মিয়া আরও বলেন, হোটেল থেকে বের করে দেওয়ার পর আমি টাকা ফেরত চাই, কিন্তু তারা আমাকে টাকা দেয়নি। পরে বাধ্য হয়ে শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে রাত কাটিয়ে সকালে দেশে ফেরার জন্য চেকপোস্টের দিকে রওনা হই। সেখানে এসে দেখি বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশবিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে। আর বলা হচ্ছে, বাংলাদেশি ও ইউনূসের (প্রধান উপদেষ্টা) লোক পেলেই পেটাবে। সারাদিনের চেষ্টার পর বিকেলে দেশে ফিরতে পেরে মনে হচ্ছে, প্রাণে বেঁচে ফিরেছি।
তিনি বলেন, নতুন করে যেন আর কেউ সেখানে না যায়। কারণ, যারা গেছেন তারা আসতেই হয়রানির শিকার হবেন। হোটেল থেকে বের করে দেওয়া ও বাজে ব্যবহারের অভিযোগ মো. রাজীব নামে আরেক পর্যটকেরও।
আরও পড়ুন: আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে সেবা বন্ধ ঘোষণা
তিনি আরও বলেন, আমাদের হোটেল থেকে বের করে দিয়ে বলেছে, কোনো বাংলাদেশিকে যেন হোটেলে জায়গা না দেওয়া হয়। আমাদের সঙ্গে তারা উগ্র ব্যবহার করেছেন। রাজীব বলেন, প্রতিবেশী দেশ থেকে এমন আচরণ কখনোই আমরা প্রত্যাশা করিনি।
এদিকে আগরতলা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টের সামনের সড়কে আড়াআড়িভাবে বাঁশের বেড়া দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে যাত্রীদের সীমান্তে ফিরতে বেশ সমস্যা হচ্ছে।
আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশিদের হয়রানির ঘটনায় আখাউড়া দিয়ে মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) স্বাভাবিকের চেয়ে কম যাত্রী পারাপার হয়েছে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত ১৪১ জন যাত্রী ভারতে গেছেন ও ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছেন ১৪০ জন।
এ বিষয়ে আখাউড়ার স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা মো. খাইরুল আলম বলেন, ভারতফেরত বাংলাদেশি যাত্রীরা হোটেল থেকে বের করে দেওয়া, মার্কেটে বাংলাদেশি পরিচয় পেয়ে পণ্য বিক্রিতে বাধা এবং ইমিগ্রেশনে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
আরও পড়ুন: ছাত্রনেতা-রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা
ভারতের সঙ্গে চলমান এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে সীমান্তে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি কিংবা অপতৎপরতা রোধে সম্পূর্ণ প্রস্তুত ও সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা।
এ ব্যাপারে ৬০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের কোম্পানি কমান্ডার লে. কর্নেল এ এম জাবের বিন জব্বার বলেন, সীমান্তে যেকোনো ধরনের অপতৎপরতা রোধে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আখাউড়া সীমান্তে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
এমএল/