যুক্তরাজ্যে ব্যাপক তদন্তের মুখে টিউলিপ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০১:০৯ অপরাহ্ন, ৫ই জানুয়ারী ২০২৫
লন্ডনে ফ্ল্যাট উপহার নেওয়ার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর ক্রমবর্ধমান তদন্তের মধ্যে রয়েছেন শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে ও যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের সাবেক সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন ডেভেলপারের কাছ থেকে তিনি ফ্ল্যাট উপহার পেয়েছিলেন।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের সাবেক সরকারের সাথে যুক্ত একজন ডেভেলপারের কাছ থেকে সেন্ট্রাল লন্ডনের একটি সম্পত্তি উপহার নেওয়ার খবর সামনে আসার পর ক্রমবর্ধমান তদন্তের আওতায় আসছেন।
আরও পড়ুন: লন্ডনে টিউলিপকে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট দিয়েছিলেন ব্যবসায়ী
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকায় অবস্থিত ২ শয্যাকক্ষের সেই ফ্ল্যাটটি ২০০৪ সালে টিউলিপকে উপহার দিয়েছিলেন আবদুল মোতালিফ নামের এক ডেভেলপার। মোতালিফ বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী এবং টিউলিপের খালা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান হাসিনা।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ কোটি ৯৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকা) দিয়ে ২০০১ সালের জানুয়ারিতে ফ্ল্যাটটি কিনেছিলেন আবদুল মোতালিফ। ফ্ল্যাটটি বেশ সস্তাতেই পেয়েছিলেন তিনি। কারণ একই বছরের আগস্ট মাসে সেই ফ্ল্যাটটির পার্শ্ববর্তী আরেকটি ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯ কোটি ৭৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা)।
সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ বলছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের সাবেক সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন ডেভেলপারের কাছ থেকে সেন্ট্রাল লন্ডনের একটি ফ্ল্যাট উপহার নেওয়ার খবর প্রকাশিত হওয়ায় টিউলিপ সিদ্দিকের ওপর চাপ বাড়াতে পারে। যদিও গত মাসে বাংলাদেশে পৃথক দুর্নীতির তদন্তে টিউলিপের নাম আসার পর দুর্নীতির অভিযোগে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছিলেন তিনি। আর এই অভিযোগ যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন সরকারের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। কারণ সিটি মিনিস্টার হিসাবে টিউলিপ সিদ্দিকের ভূমিকা দেশটিতে আর্থিক দুর্নীতি মোকাবিলায় প্রশ্ন তুলতে পারে।
ব্লুমবার্গ বলছে, এই অভিযোগে বিষয়ে মন্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলেও টিউলিপ সিদ্দিক তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেননি। তবে তার একজন মুখপাত্র ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের কাছে দাবি করেছেন, “টিউলিপ সিদ্দিকের এই সম্পত্তি বা অন্য যেকোনও সম্পত্তির মালিকানার সঙ্গে আওয়ামী লীগকে সমর্থনের ধারণাটি স্পষ্টতই ভুল হবে।”
অন্যদিকে ৭০ বছর বয়সী আবদুল মোতালিফ বর্তমানে পূর্ব লন্ডনে মুজিবুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে থাকেন। মুজিবুল ইসলাম আওয়ামী লীগের একজন সাবেক এমপির সন্তান। এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। মুজিবুল ইসলাম স্বীকার করেছেন, তিনি ফ্ল্যাটটি ২০০১ সালে কিনেছিলেন।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে ভিড়ের মধ্যে উঠে গেল গাড়ি, নিহত ১০
এর আগে বাংলাদেশের অবকাঠামো প্রকল্প থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। আর সেই অভিযোগের তদন্তে নাম আসে শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে ও যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকেরও।
আর এই ঘটনায় গত মাসে যুক্তরাজ্যে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দেশটির কর্মকর্তারা। মূলত দেশটির মন্ত্রিপরিষদ অফিসের ন্যায় এবং নৈতিকতা দল তাকে এই জিজ্ঞাসাবাদ করে।
সংবাদমাধ্যম সানডে টাইমস সেসময় জানিয়েছিল, দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ সামনে আসার পর টিউলিপ সিদ্দিক দেশটির মন্ত্রিপরিষদ অফিসের ন্যায় এবং নৈতিকতা দলের (পিইটি) প্রতিনিধির সাথে বৈঠকে যোগ দিতে সম্মত হন। গত ১৯ ডিসেম্বর পিইটি’র ওই কর্মকর্তা টিউলিপ সিদ্দিকের অফিসে যান। পরে ওই কর্মকর্তার কাছে ১০ বিলিয়ন পাউন্ডের রূপপুর প্রকল্পের দুর্নীতির সাথে তার জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়ে জবাব দেন টিউলিপ।
আরএক্স/