জুলাই গণঅভ্যুত্থান
নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভ আরও উস্কে দিয়েছিল: জাতিসংঘ প্রতিবেদন
জনবাণী ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫:২৩ অপরাহ্ন, ২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫

জাতিসংঘের অধিকার অফিস (ওএইচসিএইচআর) বলেছে, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে আগস্টের প্রথম দিকের ধারাবাহিক ঘটনাবলীর কারণে বিগত শেখ হাসিনা সরকার উৎখাত হয়েছে এবং গণঅভ্যুত্থানের শেষ দিনগুলোতে ‘সাময়িকভাবে ভাটা পড়া’ আন্দোলনে নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা রাস্তায় বিক্ষোভকে পুনরায় আরও উস্কে দিয়েছিল।
ওএইচসিএইচআর রিপোর্টে বলা হয়েছে, চাকুরিতে কোটা ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের রায় আসতে অনেক দেরি করেছিল এবং সর্বোচ্চ আদালতের আদেশের আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ বৈষম্যবিরোধী বিক্ষোভকারীদের নেতাদের কাছে ‘কুটিল’ বলে মনে হয়েছিল।
এতে বলা হয়েছে, ‘বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার জন্য, ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই বিগত সরকার হাইকোর্টের কোটা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দাখিল করে, যা মূলত বিক্ষোভের মূল সূত্রপাত করেছিল।’
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, পরের দিন সন্ধ্যায় পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী এক জনসভায় শিক্ষার্থীদের সুপ্রিম কোর্টের প্রত্যাশিত ইতিবাচক সিদ্ধান্তের জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে বলেছিলেন, ১৬ জুলাই প্রাণহানির জন্য সমবেদনা জানিয়েছিলেন এবং দাবি করেছিলেন যে, ‘আমাদের বিক্ষোভকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ বাহিনী সহযোগিতা করেছিল।’
চলতি মাসের শুরুতে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টের বিক্ষোভের সাথে সম্পর্কিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতন’ শীর্ষক তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘(কিন্তু) প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ বিক্ষোভকারী নেতাদের কাছে আন্তরিকতাহীন বলে মনে হয়েছিল।’
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেশজুড়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির আহ্বান জানিয়ে বলেছিল, ‘হাসপাতাল ও জরুরি পরিষেবা সমূহু খোলা থাকবে, তবে অন্যকোনো প্রতিষ্ঠান চালু থাকবে না এবং অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া কোনো যানবাহন সড়কে চলতে দেওয়া হবে না।’
আরও পড়ুন: মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলা ভাষায় শুভেচ্ছা জানালেন সৌদি রাষ্ট্রদূত
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব একই সাথে তাদের অনুসারীদের হরতাল সমর্থন করার আহ্বান জানিয়েছিল, যার ফলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আইন, শিক্ষা এবং তথ্য মন্ত্রীদের বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের নেতাদের সাথে আলোচনার জন্য মনোনীত করেছিলেন, পাশাপাশি ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) এর চলমান প্রচেষ্টাও সমানভাবে অব্যাহত ছিল।
এতে বলা হয়েছে, ‘তবে, সেই পর্যায়ে, ছাত্ররা আর আলোচনার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিল না, কারণ তারা তাদের ওপর এর আগে ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলার কারণে সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দিহান ছিল।’
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ১৮ জুলাই থেকে, যখন বিক্ষোভকারীরা গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে যান চলাচল ব্যাহত করার চেষ্টা করছিল তখন সাধারণ জনগণও রাস্তায় নেমে আসে এবং নিরাপত্তা বাহিনী ‘এই পর্যায়ে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের দিকে ঝুঁকে পড়ে’।
এতে বলা হয়েছে, ‘তারা শান্তিপূর্ণ হলেও বিঘ্ন সৃষ্টিকারী বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে কম প্রাণঘাতী অস্ত্রের পাশাপাশি রাইফেল, পিস্তল ও শটগান ব্যবহার করেছিল, এতে উত্তরায় (৩টি ঘটনা) ও অন্যান্য অনেক জায়গায় হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল, পাশাপাশি তারা আহতদের চিকিৎসা সেবা (৮টি ঘটনা) সক্রিয়ভাবে বাধাগ্রস্ত করেছিল।’
এতে বলা হয়েছে, বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী জনতা যখন আরও ভিন্নরূপ ধারণ করে তখন জনতার কিছু অংশ পুলিশ, পরিবহন অবকাঠামো এবং বিটিভি ভবনসহ সরকারি ভবনগুলোতে আক্রমণ করেছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘১৮ জুলাই সন্ধ্যায়, সরকার বিজিবি (বর্ডার গার্ডকে বাংলাদেশ) সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ দেয় এবং ২৩ জুলাই পর্যন্ত দেশে ইন্টারনেটসেবা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া হয়।’
ওএইচসিএইচআর প্রমাণ পেয়েছে যে, ১৯ জুলাই, বিজিবি, পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং অন্যান্যরা রামপুরা ও বাড্ডা ছাড়াও ঢাকা ও সারা দেশে জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়, কিন্তু শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ বা সহিংস অস্থিরতা দমন করতে ব্যর্থ হয়।
আরও পড়ুন: ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে মেলাপ্রাঙ্গণে যাচ্ছেন বইপ্রেমীরা
সন্ধ্যায়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মধ্যরাত থেকে কার্যকর দেশব্যাপী কারফিউ জারি, ও ২৭,০০০ সেনা সদস্য মোতায়েন করেন। ২০ ও ২১ জুলাই নিরাপত্তা বাহিনী বড় ধরনের অভিযান চালায়।
এতে বলা হয়েছে, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানের মাধ্যমে নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো অবরোধ মুক্ত করতে বিশেষ করে যাত্রাবাড়ী মোড়ে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি খালি করার জন্য সামরিক রাইফেল ও শটগানের গুলি ব্যাবহার করে।
ওএইচসিএইচআর উল্লেখ করেছে যে, ২১ জুলাই, সুপ্রিম কোর্টের একটি নতুন রায় মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরদের জন্য সংরক্ষিত সরকারি চাকরির কোটা ৫ শতাংশে কমিয়ে দেয় এবং ‘সরকার দ্রুততার সঙ্গে আদালতের মতামত মেনে নিয়ে প্রকাশ্যে এই পরিবর্তনকে সমর্থন জানায়।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘তবে, সেই সময়ে, ছাত্র আন্দোলন ইতোমধ্যেই তাদের নিজস্ব দাবির মধ্যে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং আরও বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত, সেইসাথে ছাত্রদের হত্যাকারী পুলিশ অফিসার এবং ছাত্রলীগ সমর্থকদের জন্য ফৌজদারি জবাবদিহিতার দাবি অন্তর্ভুক্ত করেছিল।’
২৬ জুলাই, বিএনপি সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং অন্যান্য সংগঠনের মধ্যে ‘জাতীয় ঐক্য’ প্রতিষ্ঠার এবং সরকারের পতনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য প্রকাশ্যে জোর আহ্বান জানিয়েছিল।
ওএইচসিএইচআর জানিয়েছে যে, রাস্তার বিক্ষোভ ‘সাময়িকভাবে শান্ত থাকলেও’ নিরাপত্তা বাহিনী ছাত্র, বিরোধী সমর্থক এবং বিক্ষোভে জড়িত থাকার সন্দেহে অন্যদের বিরুদ্ধে গণগ্রেফতার অভিযান চালায় এবং ছয়জন বিশিষ্ট ছাত্রনেতাকেও আটক করা হয়।
জাতিসংঘের কার্যালয় জানিয়েছে যে, এই ব্যক্তিদের প্রায়শই অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ ছাড়াই আটক করা হতো এবং অনেক ক্ষেত্রে নির্যাতন ও অন্যান্য ধরণের অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছিল।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘২৮ জুলাই, গোয়েন্দা শাখার প্রধান একটি জোরপূর্বক বিবৃতির একটি ভিডিও রেকর্ডিং প্রকাশ করে। এতে আটক ছয়জন ছাত্রনেতা বিক্ষোভের নিন্দা করেছিলেন। এই ঘটনায় জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন: একুশের সঙ্গে আমার এক আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে: প্রধান বিচারপতি
ওএইচসিএইচআর আরও জানিয়েছে যে, ২৫ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাঙচুর করা মেট্রো স্টেশন এবং পরের দিন পুড়ে যাওয়া বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন পরিদর্শন করেছিলেন এবং একই দিনে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল পরিদর্শন করে পুলিশ ও বিজিবির গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন আহত রোগীদের সাথে মতবিনিময় বলেছিলেন।
তিনি ২৮ জুলাই নিহত ছাত্রদের পরিবারবর্গকে তার বাসভবন গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং ‘এই সময়ে, তিনি প্রকাশ্যে বিরোধী দলগুলোর ওপর সহিংসতা ও প্রাণহানির জন্য সমস্ত দোষ চাপিয়েছিলেন’।
৩০ জুলাই, সরকার জামায়াতে ইসলামী এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তে উপনীত হয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এসব ঘটনা ২০২৪ সালের আগস্টের শুরুতে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সহিংসতা উস্কে দিতে জোর অবদান রেখেছিল। নতুন করে জোরদার গণবিক্ষোভ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল।’
ওএইচসিএইচআর উল্লেখ করেছে যে, বিক্ষোভ পুনরায় শুরু হওয়ার পর গণআন্দোলন ‘তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পদত্যাগ’ করার একটি নতুন, একক দাবির ভিত্তিতে সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সরকারের প্রতিক্রিয়ায় প্রাণঘাতী অস্ত্রসহ ব্যাপক শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছিল। নিরাপত্তা বাহিনীর শক্তি প্রয়োগ সম্পর্কে আগস্টের শুরুতে একজন ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং মন্ত্রিসভার একজন সদস্য ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি জানিয়েছিলেন।’
এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাস্তায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছিল। কিন্তু ‘বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে বল প্রয়োগের জন্য অফিসার ও সৈন্যদের মধ্যে সমর্থন ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছিল’। ৩ আগস্ট সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান একটি বড় সেনা সভা আহ্বান করেন, যেখানে জুনিয়র অফিসাররা তাকে জানান যে, তারা বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাতে অপারগ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বিক্ষোভকারীরা আন্দোলন কর্মসূচিতে ৫ আগস্ট ঢাকায় একটি গণমিছিলের পরিকল্পনা করেছিল। ৪ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের একটি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন, যেখানে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা এবং স্বরাষ্ট্র, শিক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাসহ অন্যান্যরা অংশগ্রহণ করেন। তারা ঢাকায় গণমিছিল ঠেকাতে পুনরায় কারফিউ আরোপ এবং তা কার্যকর করার বিষয়ে বিস্তর আলোচনা করেন।
৪ আগস্ট সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি প্রধানদের সাথে দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সেনাপ্রধান ও অন্যান্য নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাকে আশ্বস্ত করেন যে, ঢাকায় সমাবেশ করতে দেয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুন: তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিতে সরকার কাজ করছে: প্রধান উপদেষ্টা
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি পরিকল্পনায় তারা সম্মত হয়েছিল যে, ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে বিক্ষোভকারীদের প্রবেশে বাধা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করতে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করা হবে।
এতে বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট, লাখ লাখ বিক্ষোভকারী ঢাকার কেন্দ্রস্থলের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ ও সশস্ত্র আওয়ামী লীগ সমর্থকরা অনেক স্থানে বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়, যদিও সেনাবাহিনী ও বিজিবি বেশিরভাগ সময় পাশে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভকারীদের মিছিল করতে দেয়। তবে, সৈন্যরা অন্তত একবার যেমন যমুনা ফিউচার পার্কে (ঘটনা ৭) গুলি চালিয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সকালে, সেনাপ্রধান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলেন যে, সেনাবাহিনী বিক্ষোভকারীদেরকে তার বাসভবনে পৌঁছাতে বাধা দিতে পারবে না। দুপুর ২টার দিকে শেখ হাসিনা সশস্ত্র বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে দেশ ত্যাগ করে চলে যান।’
এমএল/