১৫ বছর একটি দস্যু পরিবারের শাসন ছিল: প্রধান উপদেষ্টা
বিশেষ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৪৭ অপরাহ্ন, ১০ই মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ এবং সেসময় দেশের পরিস্থিতি কেমন ছিল তার বর্ণনা দিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, হাসিনার শাসনামলে (১৫ বছর) কোনো সরকার ছিল না, ছিল একটি দস্যু পরিবারের শাসনের মত। সরকারপ্রধানের যেকোনো আদেশই তখন অক্ষরে অক্ষরে পালিত হতো।
সোমবার (১০ মার্চ) সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছে।
শেখ হাসিনার শাসনামল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন, হাসিনার শাসনামলে কোনো সরকার ছিল না, একটি দস্যু পরিবারের শাসন ছিল। সরকারপ্রধানের যেকোনো আদেশই তখন পালিত হতো। কেউ সমস্যা তৈরি করছে? আমরা তাদের উধাও করে দেব। নির্বাচন করতে চান? আমরা নিশ্চিত করব যে আপনি যেন সব আসনে বিজয়ী হন। আপনি টাকা চান? এই যে ব্যাংক থেকে এক মিলিয়ন ডলার ঋণ, যা আপনাকে কখনোই ফেরত দিতে হবে না।
আরও পড়ুন: সেমিস্টার ফির নামে পাচার ৪০০ কোটি টাকা: প্রেস সচিব
গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনা ব্যাপক নৃশংসতা ঘটান। তবে বিক্ষোভ দমনে ব্যর্থ হয়ে বিক্ষুদ্ধ জনতার প্রতিশোধের ভয়ে হেলিকপ্টারে করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান তিনি। দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখনও তিনি সেখানেই আছেন।
ভারতে আশ্রয় নিয়ে শেখ হাসিনা নতুন বাংলাদেশ নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন এবং এতে দেশ অস্থিতিশীল হচ্ছে বলে মনে করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ভারত তাকে আশ্রয় দিচ্ছে, এটা মানা যায়। ভারতকে ব্যবহার করে আমরা যা যা করছি, তা নষ্ট করার প্রচারণা চালাতে দেওয়াটা বিপজ্জনক। এটি দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত সরকারই ড. ইউনূসের একমাত্র সমস্যা নয়। গার্ডিয়ান বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফিরে আসাও ড. ইউনূসের জন্য সুসংবাদ নয়।
তবে, ড. ইউনূসের মনে করেন, বাংলাদেশে ট্রাম্প ‘বিনিয়োগের ভালো সুযোগ’ এবং ‘বাণিজ্যিক অংশীদার’ হিসেবে দেখতে পারেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প একজন ডিলমেকার। তাই আমি তাকে বলছি, আমাদের সঙ্গে ডিলে আসুন। তিনি যদি তা না করেন, তাহলে বাংলাদেশ কিছুটা কষ্ট পাবে। কিন্তু, এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থামবে না।
আরও পড়ুন: সংসদ নির্বাচনে প্রক্সি ভোটের সুযোগ পাবেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা
গার্ডিয়ান বলছে, বাংলাদেশে হাসিনার শাসনামল ছিল স্বৈরাচার, সহিংসতা এবং দুর্নীতির অভিযোগে ভরপুর। জুলাই ও আগস্ট মাসে রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এর সমাপ্তি ঘটে। জাতিসংঘের মতে, ওই সময় বাংলাদেশে সরকারবিরোধী আন্দোলনে এক হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়।
ওই আন্দোলনে পুলিশের সহিংস দমনপীড়ন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শেখ হাসিনা।
দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করেছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তারপরও বরাবরই তাকে রাজনৈতিক হুমকি বলে মনে করতেন শেখ হাসিনা। এ কারণে বছরের পর বছর ধরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের হয়রানি-অপমান-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি। গত ১৫ বছরের বেশিরভাগ সময়ই অবশ্য বাংলাদেশের বাইরেই কাটিয়েছেন ইউনূস।
কিন্তু বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা যখন তাকে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান হওয়ার আর্জি জানান, তিনি তাতে সম্মতি জানান। ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছরে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা বিশাল এবং অভূতপূর্ব। বিগত সরকার দেশকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ফেলেছে। বাংলাদেশ এখন আরেকটি গাজা। বিগত সরকার এই দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠান, নীতি, জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে ধ্বংস করে ফেলেছে।
আরও পড়ুন: কেম্যান আইল্যান্ডস ও পাঁচ দেশে শেখ হাসিনার সম্পদের সন্ধান মিলেছে
ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের সাংবাদিক হান্না এলিস-পিটারসেনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের পর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। এরপর অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীরা শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করার অনুরোধ জানান। হাসিনার শাসনামলে ‘ভয়াবহ’ বিপর্যস্ত বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দিতে রাজি হন ড. ইউনূস।
গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন খাতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে, শুরু হয়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যার বিচার।
এমএল/