ঘরমুখো মানুষের এবার বাড়ি ফেরার পালা


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭:২৩ অপরাহ্ন, ২৭শে মার্চ ২০২৫


ঘরমুখো মানুষের এবার বাড়ি ফেরার পালা
ছবি: সংগৃহীত

অফিস আদালত আজ থেকে বন্ধ হয়ে গেছে। মুসলমানদের দোর গোড়ায় পবিত্র ঈদুল ফিতর কড়া নাড়ছে, ঈদের আনন্দ পরিবার-পরিজনের সাথে ভাগাভাগির জন্য এবার নাড়ির টানে বাড়িতে ফেরার পালা ঘরমুখো মানুষের।


তাই বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) বিকেলেই শুরু হয়ে গেছে ঘরমুখো মানুষের বাস-লঞ্চ টার্মিনাল ও রেলস্টেশনে উপচেঁ পড়া ভিড়। অন্যদিকে মানুষের এই বিপুল প্রস্থানের কারণে ফাকা হতে শুরু করেছে রাজধানী ঢাকা। এবার ঈদের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ রয়েছে আগামী সোমবার (৩১ মার্চ)। ঈদের আগে আজই ছিলো শেষ কর্মদিবস।


সরকারি চাকরিজীবীরা এবার টানা ৯ দিনের ছুটি পাচ্ছেন। তাই অফিস শেষ করেই বাড়ি ফেরার দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে সবার মধ্যে। যদিও সকাল থেকেই অনেককে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে। আর উপস্থিতিও স্বাভাবিক ছিল। শেষের কাজ গোছাতেই সময় কেটেছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস হওয়ায় অনেকেই সহকর্মীদের সঙ্গে ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা বিনিময় করে নিচ্ছেন।




এবারের ঈদযাত্রার আজ চতুর্থ দিন। এদিন সকাল থেকেই কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে বাস টার্মিনালগুলোতে ভোরে কিছুটা চাপ থাকলেও দুপুর নাগাদ ছিল স্বাভাবিক।


আরও পড়ুন: গণতন্ত্রের সুষ্ঠু উত্তরণে বান কি মুনের সহযোগিতা-পরামর্শ চেয়েছেন ড. ইউনূস


এদিকে টার্মিনাল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে আবার বিকেল থেকে চাপ বাড়তে শুরু করেছে। বাস মালিক সমিতির ধারণা, আজ অফিস শেষেই মূলত বাসে ভিড় বাড়বে। তবে ঈদের আগে সময় বেশি পাওয়ায় এবার যাত্রা বেশ স্বস্তির হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।


কমলাপুর স্টেশনের কর্মকর্তা ও যাত্রীরা জানিয়েছে পূর্বনির্ধারিত ট্রেনগুলো যথাসময়ে ছেড়ে যাচ্ছে। এদিকে বুধবার (২৬ মার্চ) পর্যন্ত প্রত্যাশিত ভিড় দেখা যায়নি লঞ্চ ঘাটেও। তবে সেই পুরনো কোলাহল বা ভিড়টা এখনও শুরু হয়নি সদরঘাটে। 


রাজশাহীগামী ব্যক্তিগত গাড়ির চালক জাহাঙ্গীর হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, ঢাকা থেকে সকাল ৭টা ৩০মিনিটে রওনা হয়ে পৌনে তিন ঘণ্টায় এলেঙ্গা পৌঁছেছেন। কোথাও কোনো যানজটে পড়তে হয়নি।


নাওজোর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রইছ উদ্দিন বলেন, মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে কখনো কখনো জটলার সৃষ্টি হলেও তাতে খুব একটা সমস্যার সমুখ্যিন হতে হচ্ছে না। যানজট নিরসনে পুলিশের ৩০০ এবং জেলা পুলিশের ৩০০ সদস্য তিন শিফটে দায়িত্ব পালন করছেন।


আরও পড়ুন: বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবসে ড. ইউনূসকে মোদির চিঠি


দূরপাল্লার বাসচালকরা জানান, বিগত বছরগুলোর মতো এবার মহাসড়কের কোথাও যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে না তাদের। বর্তমান সময়ের মতো আগামী ৩ থেকে ৪ দিন থাকলে যাত্রীদের যাত্রা অনেকটা স্বস্তির হবে।


ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা গণপরিবহনগুলোর সিট খালি না থাকার সুযোগে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে পরিবহনসংশ্লিষ্টরা। উত্তরের ঘরমুখো মানুষ বলছে, সুযোগ বুঝে ৩০০ টাকার ভাড়া ৬০০ টাকার বেশি আদায় করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের কোনো হস্তক্ষেপ নেই বলছেন তারা।




কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন বলেন, নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি সোয়া এক ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে। রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটিও আধাঘণ্টা দেরিতে ছেড়ে যাবে। মূলত ঢাকায় ফিরতে দেরি হওয়ায় সামান্য এই বিলম্ব হচ্ছে। তবে ঢাকা থেকে দ্রুত ছেড়ে দিচ্ছি।


গত ২০ মার্চ পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আগামী ৩ এপ্রিল নির্বাহী আদেশে ছুটি দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এ জন্য টানা ৯ দিনের ছুটি মিলেছে। চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে আগামী ৩১ মার্চ (সোমবার) দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হতে পারে। সেই হিসাব করে সরকারি ছুটির তালিকা নির্ধারণ করা হয়।


ঈদ উপলক্ষে নিরাপত্তাবিষয়ক পরামর্শ 


এদিকে বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঈদ উপলক্ষে নিরাপত্তাবিষয়ক পরামর্শ দিয়েছেন।


আরও পড়ুন: অক্সফোর্ডের অনারারি ফেলো হলেন প্রধান বিচারপতি


পরামর্শগুলোর মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে ঈদের ভ্রমণ করা। ভ্রমণকালে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় রাখা। চালককে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাতে তাগিদ না দেওয়া। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে বাসের ছাদে কিংবা ট্রাক, পিকআপ ও অন্যান্য পণ্যবাহী যানবাহনে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকা।


রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে জেব্রা ক্রসিং অথবা ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করা। যেখানে জেব্রা ক্রসিং বা ফুট ওভারব্রিজ নেই সেখানে যানবাহনের গতিবিধি দেখে নিরাপদে রাস্তা পার হওয়া। প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তা নেওয়া। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি না চালানো। অপরিচিত কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে খাবার কিংবা পানীয় গ্রহণ থেকে বিরত থাকা।


বাস মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে অদক্ষ, অপেশাদার, ক্লান্ত বা অসুস্থ চালককে যাত্রীবাহী বাস ও গাড়ি চালাতে না দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় বের না করা এবং চালক যাতে নিয়ম মেনে গাড়ি চালায় এবং ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং না করে সেজন্য চালককে নির্দেশ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।




ওভার স্পিডে গাড়ি না চালাতে, ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং না করতে এবং অসুস্থ অবস্থায় গাড়ি না চালাতে চালককে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ গাড়ির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সবসময় সঙ্গে রাখতে ও বাসে অতিরিক্ত যাত্রী না উঠানোর কথা বলা হয়েছে।


এতে আঞ্চলিক সড়ক/মহাসড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে পুলিশের নির্দেশনা মেনে চলার কথা বলা হয়েছে। একইসঙ্গে লঞ্চ/স্টিমার/স্পিডবোটের যাত্রীদের প্রতি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে নৌযানে না উঠা, নৌযানের ছাদে যাত্রী হয়ে ভ্রমণ না করা, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌযানে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।


আরও পড়ুন: ধরলার ড্রেজিংয়ে কমেছে ভাঙ্গন বাড়ছে কৃষি উৎপাদন


বিজ্ঞপ্তিতে যাত্রাপথে ঝড় দেখা দিলে এদিক ওদিক ছোটাছুটি না করে নিজের জায়গায় অবস্থান এবং স্পিডবোটে ভ্রমণের ক্ষেত্রে লাইফ জ্যাকেট পরার অনুরোধ করা হয়েছে। লঞ্চ, স্টিমার, স্পিডবোট মালিকদের প্রতি নির্ধারিত সংখ্যক ও নির্ধারিত গ্রেডের মাস্টার ও ড্রাইভার দ্বারা নৌযান পরিচালনা করতে এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় নৌ চলাচল বন্ধ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নৌযানের মাস্টার ব্রিজে যাত্রী সাধারণের অবাধ চলাচল বন্ধ করার জন্য দু’পাশ অস্থায়ীভাবে বন্ধের ব্যবস্থা করতে ও লঞ্চে পর্যাপ্ত বয়া রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে।


আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে নৌযান নিয়ে বন্দর ত্যাগ, ডেকের ওপর যাত্রীদের বসার স্থানে মালামাল পরিবহন থেকে বিরত থাকা, পর্যাপ্ত সংখ্যক বয়া/লাইফ জ্যাকেট নৌযানে রাখা, যাত্রাপথে ঝড়ের আশঙ্কা দেখা দিলে নৌযানকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া বা নিকটবর্তী তীরে ভিড়িয়ে রাখা, নৌযানে মোবাইল ফোন ও রেডিও রাখা এবং নিয়মিত আবহাওয়ার বুলেটিন শোনা, প্রয়োজনে আবহাওয়া সংক্রান্ত অ্যাপ ব্যবহার করা এবং বৈধ কাগজপত্র ছাড়া নৌযান পরিচালনা থেকে বিরত থাকার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।


এছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে সকল ফায়ার পাম্প ও অগ্নিনিরোধক যন্ত্রপাতির সঠিকতা নিশ্চিত, দুর্ঘটনা কবলিত নৌযান শনাক্তকরণের লক্ষ্যে নৌযানসমূহে ১০০-১৫০ ফুট লম্বা দড়ি সম্বলিত বয়া এবং লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা রাখারও অনুরোধ জানানো হয়েছে।


ট্রেন যাত্রীদের প্রতি ট্রেনের ছাদে, বাফারে, পাদানিতে ও ইঞ্জিনে ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে। ট্রেনে ভ্রমণের সময় পাথর নিক্ষেপ সম্পর্কে সতর্ক থাকতে, ট্রেনে ভ্রমণকালে মালামাল নিজ দায়িত্বে রাখতে এবং বিনা টিকেটে ট্রেনে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার কথাও বলা হয়েছে।


সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রয়োজনে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের কন্ট্রোল রুমে ০১৩২০০০১৩০০, ০১৩২০০০১২৯৯, হাইওয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ০১৩২০১৮২৫৯৮, রেলওয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ০১৩২০১৭৭৫৯৮, নৌ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ০১৩২০১৬৯৫৯৮, র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ০১৭৭৭৭২০০২৯ নম্বরে এবং জেলা পুলিশ সুপার ও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এর সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।


এমএল/