আমিই স্বৈরাচারকে হটাই কিন্তু আমিই যেন স্বৈরাচার: এলিনা শাম্মী


Janobani

বিনোদন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:৩১ অপরাহ্ন, ১লা জুলাই ২০২৫


আমিই স্বৈরাচারকে হটাই কিন্তু আমিই যেন স্বৈরাচার: এলিনা শাম্মী
ছবি: সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক বছর পূর্তিতে অভিনেত্রী এলিনা শাম্মী এক ফেসবুক পোস্টে গভীর আত্মসমালোচনা করেছেন। তিনি এই আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এবং স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। তবে তার সাম্প্রতিক পোস্টে তিনি দেশের বর্তমান অবস্থা এবং সমাজের পচন নিয়ে যেমন কথা বলেছেন, তেমনি ব্যক্তিজীবনের দ্বৈতসত্তার কথাও তুলে ধরেছেন।


গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিনোদন জগতের অনেক শিল্পীই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিলেন। সেই কঠিন সময়ে শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী এবং পুলিশের দফায় দফায় হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল, যার ফলে বহু শিক্ষার্থীর প্রাণহানি হয়। এমন পরিস্থিতিতে এলিনা শাম্মীর মতো অনেক শিল্পী সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজপথে নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও শিক্ষার্থীদের প্রতি তার সমর্থন ব্যক্ত করে সক্রিয় ছিলেন।


আরও পড়ুন: পৃথিবীর অন্য কোনো শহরকে কলকাতার মতো মনে হয় না: জয়া


মঙ্গলবার (০১ জুলাই) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে এলিনা শাম্মী তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “যখন একটা ফলের বেশির ভাগ অংশই পচে যায়, সেই ফল খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ে। একটা সমাজেও যখন পচন ধরে, এবং বেশি অংশই পচে যায়, তখন সেখানে অনেকখানি বাদ দিয়ে নতুন করে শুরু করতে হয়। সেজন্য সময়ের প্রয়োজন হয়। এক-দেড় যুগ ধরে যে লোকালয়ে, যে সমাজে ধীরে ধীরে পঁচন ধরেছে, দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল চারদিকে সেখানে এক বছরেই সুগন্ধি আতরের সুঘ্রাণ প্রত্যাশা করা বাতুলতা বৈ আর কিছু নয়।”


তিনি মনে করেন, এক-দেড় যুগ ধরে সমাজে যে পচন ধরেছে, তা এক বছরেই পুরোপুরি ঠিক হয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।


অভিনেত্রী তার পোস্টে আরও উল্লেখ করেন, সময় বদলায়, শাসক বদলায়, কিন্তু দেশের মানুষ একই থেকে যায়। তিনি বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে জেঁকে বসা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেছেন। তার মতে, ঘুষ নেওয়া এবং দেওয়া, রমজান বা বন্যার সময় জিনিসপত্রের দাম বাড়ানো, সত্য কথা বলা ব্যক্তিকে গুম বা খুন করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের সম্মানহানি, ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, সামান্য মতের অমিল হলে গুরুজনদের গায়ে হাত তোলা এবং ভোট জালিয়াতির মতো বিষয়গুলো সমাজে এতটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে যে মানুষ এগুলোতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।


আরও পড়ুন: মরি নাই রে ভাই, আমি এখন আছি, : মাহিয়া মাহি


এলিনা শাম্মী জোর দিয়ে বলেছেন, এই অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করতে দীর্ঘমেয়াদী স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত শাসনব্যবস্থা দরকার। তিনি লিখেছেন, “সমস্যা হচ্ছে আমি সুন্দর দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি আবার আমিই দুর্নীতি করি। আমিই স্বৈরাচারকে হটাই কিন্ত ব্যক্তিজীবনে আমিই যেন স্বৈরাচার।”


তিনি নিজের ভেতরের এই দ্বৈত চরিত্রকে তুলে ধরে প্রশ্ন করেছেন যে, মানুষ যখন ময়লা দেখে নাক সিঁটকায়, কিন্তু নিজেই রাস্তায় ময়লা ফেলে; যখন ঘুষকে মন্দ বলে চিৎকার করে, কিন্তু ঘুষ দেওয়ার সুযোগ খোঁজে, তখন কীভাবে দেশ বদলাবে? তার মতে, দেশ বদলাতে হলে প্রথমে নিজেকেই বদলাতে হবে।


এমএল/এএস