নির্বাচিত সরকারের চেয়ে কোনো সরকার শক্তিশালী হতে পারে না : মির্জা ফখরুল
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬:৪৮ অপরাহ্ন, ৭ই জুলাই ২০২৫

নির্বাচিত সরকারের চেয়ে কোনো সরকার শক্তিশালী হতে পারে না বলে মন্তব্যে করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (৭ জুলাই) যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এম এ মালিকের আয়োজনে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির সহযোগিতায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের রুহের মাগফেরাত ও চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বক্তব্যের শুরুতে তিনি মরহুম এম সাইফুর রহমান ও গুমকৃত এম ইলিয়াস আলী এবং জুলাই-আগস্টের শহীদের স্মরণ করেন।
আরও পড়ুন: ফেসবুকে ক্ষোভ ঝাড়লেন ইশরাক, প্রশ্ন তুললেন দলীয় নীতিতে
তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেন। মানুষের কাছে যান। মানুষ যাতে বুঝতে পারে বিএনপি ছাড়া আমাদের কোন উপায় নাই। তিনি বলেন, নির্বাচন যতো দেরি হবে, দেশ ততো পিছিয়ে যাবে। বিনিয়োগ আসবে না, মায়ের-মেয়েরা নিরাপত্তা হারাবে, জুডিশিয়াল ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে, আইন শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে। সেই জন্য দরকার একটা নির্বাচিত সরকার। যেই সরকারের পেছনে রয়েছে জনগণ।
তিনি অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনুসকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তিনি লন্ডনে তারেক রহমানের সাথে বৈঠক করে ২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের সময় ঠিক করেছেন, এই জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই।
বক্তব্যের শুরুতে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা যখন সুযোগ পাই সিলেট আসি। কারণ হচ্ছে, শত শত বছর পূর্বে এখানে ইসলামের আলো ছড়িয়েছেন। সত্য, সুন্দর ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরান (রহ.) দরগায় আমরা আসি। আমি নয় আমরা নিই সারা দেশ বিদেশ হাজার হাজার মানুষ এখানে আসেন। কারণ তারা এই মহান পুরুষরা যারা অন্ধকারকে আলোকিত করার জন্য মানুষকে আলোকপাত করেছিলেন, সেই মানুষগুলোকে শ্রদ্ধা জানাতে চায়। তিনি বলেন, এটা আমাদের পূণ্যভূমি। সিলেট আমাদের কাছে আরো প্রিয় আরেকটা কারণ আছে তা হচ্ছে আমাদের নেতা তারেকে রহমান সাহেবের শ্বশুর বাড়ি। সেই জন্য আমরা এখানে আসতে আনন্দ পাই, শান্তি পাই।
তিনি বলেন, এমনি এমনি হঠাৎ করে হাসিনা পালায় নাই, বহু মানুষের সংগ্রাম, রক্ত, ত্যাগ মিলিয়ে আমরা ফ্যাসিবাদ মুক্ত হলাম। আমরা তো লড়াই করেছি গণতন্ত্রের জন্য। আমরা একটা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই যেখানে মানুষ কথা বলতে পারবে, বাকস্বাধীনতা থাকবে, মহিলারা নিরাপত্তা পাবে, তরুণরা কাজের সুযোগ পাবে, মানুষ চিকিৎসার সুযোগ পাবে এমন একটা দেশ আমরা চাই। সেই দেশ তৈরীর জন্য নতুন করে লড়াই শুরু করেছি। আর আমাদের এই সংগ্রামের নেতা হচ্ছেন তারেক রহমান। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখনো অসুস্থ অবস্থায় আমাদের পরমার্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, হাসিনা গণতন্ত্র, ভোট, পত্রিকা বন্ধ করেছিলো। মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করেছিল। সেই অবস্থায় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র এনে নতুন সযোগ তৈরী করে দিয়েছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সেই দল সেই যে দল স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে। আমরা একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই, কর্মস্থান সৃষ্টি করতে চাই এবং বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্র করতে চাই। সেজন্য বিএনপি ৩১ দফা দিয়েছি। শহীদ জিয়ার রহমান যেই বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই দেশ আমরা গড়তে চাই।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কেউ যাতে আঙ্গুল তুলে না বলতে পারে আমরা জমি দখল করেছি, চাঁদাবাজি করেছি, জায়গা দখল করেছি। জয় আমাদের সুনিশ্চিত, ইনশাআল্লাহ।
এসময় তিনি বলেন, সিলেটের যেখানে বেগম জিয়া সমাবেশ করেছিলেন সেখানে এবার তারেক রহমানকে নিয়ে দেখা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, হাসিনা চলে গেছে তার দোসররা দেশেই আছে। সচিবালয় থেকে জেলা উপজেলায় তারা আছে। তারা ভোট চায় না। নির্বাচন না দিয়ে দির্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছে।
তিনি বলেন, এই সরকারের ভেতরে আ.লেগের আমলারা যা করেছে, তাতে এই সরকার নির্বাচন করতে পারবে না। তবে আমরা আমলাদের এই চক্রান্তকে প্রতিহত করবো, প্রতিরোধ করবো। অতঃপর নির্বাচন আদায় করবো।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, ২০১৪ সাল থেকে ২৪ সাল পর্যন্ত হাসিনার পতনের জন্য যারা শহীদ হয়েছে তাদের স্মরণ করি।
তিনি বলেন, আমরা হাসিনা মুক্ত হয়েছি কিন্তু ষড়যন্ত্র মুক্ত হই নাই। বিএনপির বিরুদ্ধ সবাই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। আমরা দেখতে পারছি, একটি দল যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল তারা একেক দিন একেক কথা বলছে। কখনো বলছে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়, কখনো বলছে ভোটের পরিস্থিতি হয়নি, কখনো বলছে নির্বাচন হলে অসুবিধা নাই, কখন কি বলে ঠিক নেই। তবে এটা বুঝা যায় যে তারা সুষ্ঠ নির্বাচন চায় না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এখনো লুটের টাকা দিয়ে ঘালা পানিতে শিকার করতে পারে। আমি সবাইকে হুশিয়ার করে দিতে চাই সবাই সচেতন থাকবেন, যাতে এই উদ্দেশ্য হাসিল না হয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ. জেড. এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, ষড়যন্ত্র করে বিএনপিকে প্রতিরোধ বা থামিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা মহান আল্লাহ ছাড়া কারো নেই। যারা ষড়যন্ত্র করছেন, হুমকি দিচ্ছেন, মনে রাখবেন বিএনপি জনগণের দল।
এ দেশে আওয়ামী লীগ হচ্ছে একটি অন্যায়, অনাচারের দল। বাকশাল কায়েম করে তারা দেশে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল।
সভাপতির বক্তব্যে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এম এ মালিক বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন ও শাসনের অবসান ঘটাতে প্রবাসে বিএনপি নেতাকর্মীরা নির্ভীকভাবে আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন। তারা বিদেশের মাটিতে থেকেও ফ্যাসিস্ট সরকারবিরোধী আন্দোলনকে জাগিয়ে রেখেছিলেন।
আরও পড়ুন: নির্বাচনের মাধ্যমেই সঠিক পথে এগিয়ে যাবে দেশ: মির্জা ফখরুল
অনুষ্ঠানে আরোও বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, হাবিবুর রহমান, তাহসিনা রূশদী লুনা, ডা. এনামুল হক চৌধুরী, মুহিদুর রহমান, ডা. শাখাওয়াত হাসান জীবন, আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জিকে গউছ, সাহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন ও মিফতাহ সিদ্দিকী, বিএনপির আর্ন্তজাতিক বিষয়ক ব্যরিস্টার এম এ সালাম, বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ ক্ষুদ্র ও ঋণ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, সদস্য নিপুন রায়, ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, মিজানুর রহমান চৌধুরী, এডভোকেট হাদীয়া চৌধুরী মুন্নী, মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম প্রমুখ।
এসডি/