ইরানের ‘কঠিন’ হুঁশিয়ারি, ট্রাম্পের কাছে ছুটে গেলেন নেতানিয়াহু!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯:১২ অপরাহ্ন, ৭ই জুলাই ২০২৫

ইরান ও দখলদার ইসরায়েলের মধ্যে টানা ১২ দিনের তীব্র সংঘাত শেষে এই মুহূর্তে যুদ্ধবিরতি চলছে। সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে অন্যতম ভয়াবহ এক সংঘাত ছিল এটি। সংক্ষিপ্ত এ যুদ্ধে ইসরায়েলের লাগাতার ইরানের হামলায় ৯ শতাধিক মানুষ মারা গেছে। সেইসঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানসহ অন্তত ২৪ জন শীর্ষ কমান্ডার ও ১৪ জন পরমাণু বিজ্ঞানীও হারিয়েছে ইরান। এ ছাড়া ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেটে ছিলেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ও প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানও। এককথায় ইরানের কোমর একেবারে ভেঙে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর থেকে এই মুহূর্তে কিছুটা ঠান্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কিন্তু, আর কতদিন পরিস্থিতি এমন স্থিতিশীল থাকবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়ে গেছে। কারণ, এই যুদ্ধবিরতিকে মূলত একটি কৌশলগত বিরতি হিসেবে দেখছে তেহরান। কৌশলগত ধৈর্য নীতির অংশ হিসেবে ইরান এখন নিজেদের নতুন করে সাজাচ্ছে এবং দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এরই মধ্যে ইরানে নজিরবিহীন হামলা চালানোর জন্য ইসরায়েলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। সেইসঙ্গে তিনি হুমকি দিয়েছেন, ইসরায়েলকে জবাবদিহিতার আওতায় না আনা হলে পুরো অঞ্চল এবং তার বাইরেও এর কঠিন পরিণাম ভোগ করতে হবে।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারে তুমুল সংঘর্ষ, পালাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ
রবিবার (০৬ জুলাই) ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ব্রিকসের শীর্ষ সম্মেলনে এ হুঁশিয়ারি দেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি।
এদিকে সোমবার (০৭ জুলাই) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে যুক্তরাষ্ট্রে পা দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
রবিবার ব্রিকসের সম্মেলনে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলা পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ২২৩১-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন। ২০১৫ সালে ওই প্রস্তাবে সর্বসম্মতভাবে ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
গত মাসে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হঠাৎ হামলা চালায় ইসরায়েল। এর জবাবে পাল্টা হামলা চালায় তেহরানও। তবে এই হামলার মধ্যে ঢুকে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে দেশটি ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়।
আরাঘচি বলেন, ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্র পরে যে হামলা চালায় তাতে ইসরায়েলের ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসী যুদ্ধে মার্কিন সরকারের সম্পূর্ণ জড়িত থাকার বিষয়ে কোনো সন্দেহ থাকে না।
আরও পড়ুন: বড় যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান!
রবিবার ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে ইরানে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বিমান হামলার নিন্দা জানানো হয়েছে। ১১টি দেশের এই জোট বলেছে, এসব হামলা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
এদিকে সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন বলে বিভিন্ন ইসরায়েলি গণমাধ্যম নিশ্চিত করেছে। নেতানিয়াহু এদিন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন বলে জানা গেছে।
ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘাতের পর এটাই ট্রাম্পের সঙ্গে নেতানিয়াহুর প্রথম সাক্ষাৎ। এই সাক্ষাতে গাজা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পর্যালোচনা ছাড়াও ইরান ও সিরিয়া ইস্যুতেও ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর মধ্যে আলোচনা বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের ওই সংঘাতে ইরানে অন্তত ৯৩৫ জন নিহত ও ৫ হাজার ৩৩২ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে ইরানের হামলায় ইসরায়েল ২৯ জন নিহত ও ৩ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ আহত হন। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে গত ২৪ জুন থেকে দুই দেশ এখন একটি যুদ্ধবিরতিতে রয়েছে।
এমএল/