ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
রোমাঞ্চকর স্মৃতির দিনেই চলে গেলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির!
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৩৯ অপরাহ্ন, ২১শে জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর চৌকস অফিসার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগরের প্রথম একক মিশন ছিল আজ (সোমবার)। বিমান বাহিনীর ভাষায় যাকে বলে ‘সলো ফ্লাইট ট্রেনিং’ (Solo Flight Training)।
সলো ফ্লাইট ট্রেনিং হলো একজন পাইলটের ট্রেনিংয়ের সর্বশেষ ধাপ। ফাইটার জেট অপারেট করার জন্য একজন পাইলট যে হাই স্কিল্ড, সেটিই প্রমাণিত হয় তার সোলো ফ্লাইটের মাধ্যমে। ট্রেনিংয়ের এই পর্যায়ে পাইলটকে নেভিগেটর বা কো-পাইলট বা কোনো প্রকার ইন্সট্রাক্টর ব্যতীত একাই ফ্লাইট অপারেট করতে হয়। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির সোমবার (২১ জুলাই) সেরকমই একটি ট্রেনিং ফ্লাইট অপারেট করছিলেন। এটা সফলভাবে শেষ করতে পারলে তার জীবনের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর স্মৃতি হয়ে থাকত দিনটি। কিন্তু ভাগ্যর নির্মম পরিহাস- যে দিনটি তার সারাজীবনের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর স্মৃতি হতে পারত সেদিনই জীবন থেকে হারিয়ে গেলেন তিনি।
আজ (সোমবার) উত্তরায় বিমানবাহিনীর যে এফ-৭ বিজিআই মডেলের বিমানটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। জানা যায়, যেকোনো প্রকার ট্রেনিং ফ্লাইট সিভিলিয়ান এরিয়া থেকে দূরেই হয়ে থাকে। তবে, সলো ফ্লাইট সাধারণত আর্বান এরিয়াতেই হয়ে থাকে। আর আর্বান এরিয়াতে এ ধরনের সেন্সিটিভ ফ্লাইট অপারেট করার জন্য পাইলটকে যথেষ্ট কোয়ালিফাইড হতে হয়। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির তেমনই একজন পাইলট। ট্রেনিংয়ের লক্ষ্যে তৌকির তার এফ-৭ বিমান নিয়ে কুর্মিটোলা পুরাতন এয়ারফোর্স বেস থেকে টেক অফ করেন। এরপর উত্তরা, দিয়াবাড়ি, বাড্ডা, হাতিরঝিল, রামপুরার আকাশজুড়ে তিনি উড়তে থাকেন।
আরও পড়ুন: আরও কিছু হৃদয়বিদারক খবর শুনতে হতে পারে আমাদের: আইন উপদেষ্টা
তবে, কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি বিমানে কিছু সমস্যা আঁচ করেন। কন্ট্রোল রুমে রিপোর্ট করে জানান যে, তার বিমান আকাশে ভাসছে না, মনে হচ্ছে বিমান নিচের দিকে পড়ে যাচ্ছে। কন্ট্রোল রুম থেকে ইন্সট্যান্ট রেসপন্স করে তাকে ইজেক্ট করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করেছেন বিমানটি বাঁচানোর জন্য। তিনি বিমানটির সর্বোচ্চ ম্যাক স্পিড তুলে বেসের দিকে ছুটতে থাকেন। এর মধ্যেই কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে পাইলটের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তার ঠিক এক থেকে দেড় মিনিটের মধ্যেই বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলে বিধ্বস্ত হয়।
বিমানের ঠিক কী ধরনের টেকনিক্যাল ফেইলিওরের জন্য এই দুর্ঘটনা ঘটলো, তা কেবলমাত্র ম্যাসিভ ইনভেস্টিগেশন হলেই জানা সম্ভব।
বিমানবাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, তৌকিরের আজ প্রথম একক মিশন ছিল, একটু আগে তিনি ডুয়াল ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন। এয়ারক্রাফট টেকঅফ করার একটুখানি যাওয়ার পর এয়ারক্রাফট কোনো রিঅ্যাক্ট করছিল না। তারপরে এয়ারক্রাফট স্টল করে, তখন তার কন্ট্রোলে ছিল না। মোবাইল টাওয়ার থেকে তাকে ইজেক্ট করতে বলা হচ্ছিল, কিন্তু এত লোয়ার ফ্লাইয়িং হচ্ছিল যে, ওই সময়ে ইজেক্ট করা আসলে পসিবলও ছিল না। তিনি চেষ্টা করছিলেন অন্যভাবে কিছু করা যায় কি না। কিন্তু দুর্ভাগ্য!
আরও পড়ুন: উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত : বার্ন ইনস্টিটিউটে রক্ত দিতে মানুষের ঢল
তিনি আরও বলেন, ফ্ল্যাইটটি দিয়াবাড়ির ফাঁকা স্থানে ফেলতে চেয়েছিলেন তৌকির ইসলাম। এজন্য বেশকিছু সময় ধরে চেষ্টাও চালাচ্ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারেননি; জেটটি বাউন্স করে মাইলস্টোন এলাকায় গিয়ে আছড়ে পড়ে।
এফ-৭ বিজেআই মডেলের প্রশিক্ষণ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১১৬ জন। তাদের অধিকাংশই শিশু।
এমএল/