ঘুষ কেলেঙ্কারিতে ফাঁসছেন মেঘনার সাবেক এমডি টিপু


Janobani

বশির হোসেন খান

প্রকাশ: ০৬:১৮ পিএম, ৩০শে জুলাই ২০২৫


ঘুষ কেলেঙ্কারিতে ফাঁসছেন মেঘনার সাবেক এমডি টিপু
ছবি: পত্রিকা থেকে নেওয়া।

নিয়োগনীতি না মেনে মেঘনা পেট্রোলিয়ামে কর্মচারী নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা সম্পন্ন করায় সদ্য বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে ১০ কোটি টাকা ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে নীতিমালা অনুযায়ী, নতুন করে লিখিত পরীক্ষা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের সচিব শাহিনা সুলতানা এক অফিস আদেশে এই নির্দেশনার কথা জানিয়েছেন। মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডে কর্মচারীদের ১৪৭টি পদে জনবল নিয়োগে গত ৪ জুলাই ঢাকায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের (বিআইএম) অধীনে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১৭ হাজার চাকরিপ্রত্যাশী আবেদন করলেও অংশ নেন মাত্র সাত হাজার জন। পরীক্ষার ছয় দিন পর, অর্থাৎ ১১ জুলাই প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায় ৯৮১ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন। তবে ফলাফল নিয়ে তৈরি হয় বিতর্ক। ফলাফলে দেখা যায়, পরীক্ষায় অংশ নেননি এমন চারজনকে উত্তীর্ণ দেখানো হয়েছে। 


অভিযোগ সূত্র বলছে, ৮০ জন নিয়োগ পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা করে মোট ১০ কোটি টাকা টিপু সুলতান সিন্ডিকেটের পকেটে। এই সিন্ডিকেট আরো রয়েছে দুই ব্যক্তি, যারা স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে পরিচিত। তারা হলেন মেঘনা পেট্রোলিয়ামের জেনারেল ম্যানেজার (এইচআর) মো. ইনাম ইলাহী চৌধুরী ও আর এমডি টিপু সুলতানের ক্যাশিয়ার ঢাকা জোনের ডিজিএম মো. লুৎফর রহমান।


গত ১৫ জুলাই দৈনিক জনবাণীতে ”মেঘনায় নিয়োগ এমডি টিপুর পেটে ১০ কোটি টাকা” শীর্ষ সংবাদ প্রকাশের পরেই নড়েচড়ে বসেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়। তারা পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। 


কান্নারত এক তরুণী বলেন, আমার কাছে কোর্টের আদেশ আছে। আমি শুধু পরীক্ষা দিতে চাই। এটা কি অন্যায় কিছু? আরেক তরুণ বলছিলেন, আমরা রাত জেগে প্রস্তুতি নিয়েছি। সকালে এসে জানলাম, তালিকায় নাম নেই। তাহলে কোর্টের আদেশের মানে কী?


ঘটনার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে। কেউ মন্তব্য করেন, বাংলাদেশে এখন কোর্টও ভরসা নয়!” আরেকজন লিখেন, আমি রোল ১৯০০১৯১৯। পাশ করিনি। আমার পেছনে বসা ১৯০০১৯২০ পাশ করেছে। এটা কাকতালীয় না, সিন্ডিকেটের কাজ। অভিযোগ আরও প্রবল হয় যখন জানা যায়, মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. টিপু সুলতান, জেনারেল ম্যানেজার (এইচআর) মো. ইনাম ইলাহী চৌধুরী ও ঢাকা জোনের ডিজিএম মো. লুৎফর রহমান একটি অদৃশ্য সিন্ডিকেট পরিচালনা করছেন। তাদের ইচ্ছাতেই নাকি ঠিক হয় কারা পাস করবে, কারা নয়।


একজন অভ্যন্তরীণ কর্মচারী, জাহিদ সরকার, ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি পাঁচ বছর ধরে লেবার হিসেবে কাজ করছি, সততার সঙ্গে। কিন্তু সে সততার মূল্য আমি পেলাম না, কারণ আমি কারো কাছে ঘুষ দিইনি। ১৫ লাখ দিলেই আমার চাকরি হয়ে যেত। গরিব মানুষ আমি, আমার টাকাও নাই চাকরিও নাই।


খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটির প্রধান বিপিসি পরিচালক (অর্থ) নাজনীন পারভিন বলেন, ‘মো. টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে বিপিসির তদন্ত কমিটি এখনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি।’


এ ব্যাপারে টিপু সুলতান বলেন, নিয়োগ পরীক্ষায় আমার দায় আছে। তবে আমি একা নয়, কমিটির ৭জন সদস্য এর সঙ্গে জড়িত। 


আরএক্স/