পরমাণু বিজ্ঞানী শমশের আলী মারা গেছেন
জনবাণী ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪:৫২ পিএম, ৩রা আগস্ট ২০২৫

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য, পরমাণু বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এম শমশের আলী মারা গেছেন।
শনিবার (২ আগস্ট) রাত ২টার দিকে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
শমশের আলীর বড় ছেলে জেহান আলী তার বাবার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বাদ জোহর ধানমন্ডির ৭ নম্বর রোডের বায়তুল আমান মসজিদে শমশের আলীর জানাজা হবে। এরপর আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে।
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শোকবার্তায় বলা হয়েছে, তার সম্মানে ও শোক পালনে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে রোববার ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
১৯৪০ সালের ৯ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারায় শমশের আলীর জন্ম। বাবার চাকরির কারণে শৈশবে কিছুদিন কেটেছে ভারতের চব্বিশ পরগনায়। দেশভাগের পর ১৯৪৮ সালে সপরিবারে ফিরে আসেন যশোরে।
যশোর জিলা স্কুল থেকে এসএসসি এবং রাজশাহী কলেজ থেকে এইএসসি পাস করে শমশের আলী ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি)। পদার্থবিজ্ঞানে ১৯৫৯ সালে অনার্স এবং ১৯৬০ সালে মাস্টার্স করেন।
১৯৬১ সালে পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনে শমশের আলীর কর্মজীবন শুরু। পরে উচ্চশিক্ষার জন্য চলে যান যুক্তরাজ্যে। ১৯৬৫ সালে ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটিতে থিওরেটিক্যাল নিউক্লিয়ার ফিজিক্সে পিএইচডি করেন।
ওই বছর দেশে ফিরে তিনি ঢাকায় আণবিক শক্তি কেন্দ্রে যোগ দেন সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার হিসেবে। ১৯৭০ সালে আণবিক শক্তি কমিশনের পরিচালকের দায়িত্ব পান। সেই দায়িত্বে ছিলেন ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত।
১৯৮২ সালে অধ্যাপক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে যোগ দেন শমশের আলী।
১৯৯২ সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব নেন। সেই দায়িত্ব শেষে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরেন।
২০০২ সালে বেসরকারি সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার সময়ও তিনি উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০ সাল পর্যন্ত সেখানেই কর্মরত ছিলেন।
২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক শমশের আলী। তিনি বাংলা একাডেমির একজন ফেলো এবং বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির আজীবন সদস্য এবং আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটির সদস্য ছিলেন।
বিজ্ঞানের পাশাপাশি সাহিত্য এবং সুফি দর্শনে গভীর আগ্রহ ছিল শমশের আলীর। তিনি জালালুদ্দিন রুমিসহ ইসলামিক দর্শন, বিজ্ঞানে মুসলিমদের অবদান নিয়ে লিখেছেন। বিজ্ঞান শিক্ষা, ধর্ম, সাহিত্য ও দর্শন নিয়ে বিটিভিতে অনুষ্ঠান করেছেন।
তার লেখা বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘পবিত্র কোরআনে বৈজ্ঞানিক ইঙ্গিত, ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মুসলিম অবদান এবং আলাদিনস রিয়েল ল্যাম্প: সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি।’
বিজ্ঞান সাধনায় ভূমিকার জন্য মাদার তেরেসা স্বর্ণপদক, খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ স্বর্ণপদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হরিপ্রসন্ন রায় স্বর্ণপদক এবং জগদীশচন্দ্র বসু স্বর্ণপদকসহ নানা সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন শমশের আলী।