গণমাধ্যম সংস্কারে কমিশনের ১২ প্রস্তাব আগস্টেই বাস্তবায়ন হবে: উপদেষ্টা মাহফুজ


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১:৪৩ পিএম, ৩রা আগস্ট ২০২৫


গণমাধ্যম সংস্কারে কমিশনের ১২ প্রস্তাব আগস্টেই বাস্তবায়ন হবে: উপদেষ্টা মাহফুজ
ছবি: সংগৃৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত ১২টি সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে সরকার কাজ করছে। চলতি মাসের মধ্যে এসব সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের কাজ সম্পন্ন করা হবে।


রবিবার (০৩ আগস্ট) রাজধানীর তথ্য ভবনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ সাংবাদিক পরিবার এবং আহত ও সাহসী সাংবাদিকদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।


সাংবাদিকদের সুরক্ষা অধ্যাদেশ প্রণয়ন প্রসঙ্গে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, অধ্যাদেশ প্রণয়নের জন্য একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। অধ্যাদেশে সাংবাদিকতার পরিধি নিয়েও একটি বিতর্ক আছে। সবমিলিয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ করে এই অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা সম্ভব হবে।


তিনি বলেন, ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের সঙ্গে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে কথা বলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের কাজ সম্পন্ন করা হবে। এর পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগে সাংবাদিকদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উপদেষ্টা সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।


আরও পড়ুন: জুলাই ঘোষণাপত্র: এবার ৮ জোড়া ট্রেন ভাড়া করল সরকার


মাহফুজ আলম বলেন, হঠাৎ করে সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুত করার বিষয়টি কীভাবে সমাধান করা যায়— সে বিষয়ে সরকার চিন্তা করছে।


সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের যদি সম্মানজনক জীবন দেওয়া যায়, তাহলে তাদের পক্ষপাতমূলক আচরণ ছেড়ে দেওয়ার একটি সুযোগ থাকবে।


মাহফুজ আলম বলেন, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাংবাদিকদের মালিকানার ভাগ দেওয়া যায় কিনা— সেই বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এটি করা সম্ভব হলে সাংবাদিকরা ক্ষমতায়িত হবেন এবং মালিক ও সাংবাদিকদের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে।


তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের চলমান কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টেলিভিশন ও অনলাইন গণমাধ্যমকে একটি ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে আনার জন্য সরকার সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়নের কথা ভাবছে। এ ছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করে ওটিটি ও অনলাইন গণমাধ্যমের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে।


জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণমাধ্যমের ভূমিকা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থানের সময় কিছু সংবাদপত্র নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছে। তবে কারফিউ চলাকালীন কিছু টেলিভিশনের ভূমিকা ছিল পক্ষপাতমূলক। গণঅভ্যুত্থানে মোবাইল সাংবাদিকতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। অভ্যুত্থান চলাকালীন অনেকে মোবাইল দিয়ে সাংবাদিকতা করেছেন এবং একই সঙ্গে অভ্যুত্থানেও অংশ নিয়েছেন।


আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে ১৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে এডিবি


জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ফটো সাংবাদিকদের ভূমিকার প্রশংসা করে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গণঅভ্যুত্থানের বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের ছবি তলেছেন। যেসব ছবি দেখলে অনেক গল্প ভেসে ওঠে।


তিনি বলেন, অনেক সাংবাদিক গণমাধ্যমপ্রতিষ্ঠানের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নিজেদের বিবেকের দায় থেকে গণঅভ্যুত্থানের সংবাদ প্রচার করেছেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ব্যক্তি সাংবাদিকদের ভূমিকা অনেক বেশি।


কিছু গণমাধ্যমের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, যেসব গণমাধ্যম জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেছে, তাদের প্রতি মানুষের ঘৃণা রয়েছে। বিগত সরকারের শাসনামলে যেসব গণমাধ্যম দুর্নীতি ও পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছে, জাতির সামনে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করা উচিত।


সরকারের পক্ষ থেকে ফোন করে কোনো গণমাধ্যমকে প্রভাবিত করা হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণমাধ্যম সরকারের চেয়ে জনগণের নিকট বেশি দায়বদ্ধ থাকবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হলে গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল ও জবাবদিহি ব্যবস্থায় যেতে হবে। 


আরও পড়ুন: জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত, ৫ আগস্ট জাতির সামনে উপস্থাপন


তিনি গণমাধ্যমপ্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।


বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম।


অনুষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পাঁচ সাংবাদিকের পরিবার এবং আহত ও সাহসী ১৯২ জন সাংবাদিককে সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মাননার পাশাপাশি আর্থিক সম্মানী হিসাবে মোট ৫৬ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়।


এমএল/