ঘুষে গড়া রাজপ্রাসাদ বিদ্যুৎকর্তার ঘরে আলাদীনের চেরাগ


Janobani

বশির হোসেন খান

প্রকাশ: ০৩:০২ পিএম, ২৬শে আগস্ট ২০২৫


ঘুষে গড়া রাজপ্রাসাদ বিদ্যুৎকর্তার ঘরে আলাদীনের চেরাগ
ছবি: পত্রিকা থেকে নেওয়া।

একজন সরকারি প্রকৌশলী কীভাবে রাজপ্রাসাদের মালিক হন? রাজধানীর আদাবর এলাকায় ‘চিত্রা’ নামে নির্মিত ৬তলা ভবনের ঝলকানি দেখে মনে হতে পারে, এটি কোনো ধনকুবের শিল্পপতির ঠিকানা। কিন্তু না, এই বিলাসবহুল বাড়ির পেছনে আছেন ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ আশরাফ আলী। 


সরকারি চাকরির সীমিত বেতনে তাঁর ২০০ কোটি টাকার স্থাবর–অস্থাবর সম্পদ কীভাবে গড়ে উঠল, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এক ভয়াবহ দুর্নীতির চিত্র যা শুধুই তার ব্যক্তিগত সম্পদের গর্ব নয়, বরং গোটা ব্যবস্থার দুর্বলতার প্রতিচ্ছবি।


রাজধানীর আদাবর এলাকার পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটির ৩৬ নম্বর প্লটে অবস্থিত ‘চিত্রা’ ভবনের প্রতিটি ইউনিটের ভাড়া ২৫৩০ হাজার টাকা। একই এলাকার ১০ নম্বর প্লটেও ‘চিত্রা’ নামে আরেকটি অভিজাত ভবন রয়েছে। 


সুসজ্জিত গেট, আলোকসজ্জা, বিদেশি স্থাপত্যশৈলী আর সিসি ক্যামেরায় সাজানো এই ভবনগুলো যেন সরকারি চাকরিজীবীর স্বপ্ন নয়, বাস্তবের বাইরে এক রাজকীয় আয়োজন। চিত্রার বাইরেও কমফোর্ট হাউজিং, নবোদয় হাউজিং, নবীনগর হাউজিংসহ রাজধানীর অন্তত ছয়টি এলাকায় রয়েছে তার নাম বেনামে সম্পদ। কেরাণীগঞ্জ ও পূর্বাচলে রয়েছে একাধিক প্লট। এমনকি কক্সবাজারের পাঁচতারা হোটেলেও রয়েছে তার শেয়ার। এসব সম্পদের আনুমানিক মূল্য ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে বলে অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে।


ডিপিডিসির বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ঠিকাদারদের কাছ থেকে ঘুষ, মাস্টাররোলে অবৈধ নিয়োগ, এমনকি বিদ্যুৎ সংযোগে অবৈধতা চালিয়ে আসছিলেন আশরাফ আলী। আদাবরের একাধিক রিকশা গ্যারেজে আবাসিক সংযোগ ব্যবহার করে চলছে বাণিজ্যিক ব্যবহার। এতে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব, আর ক্ষমতার জোরে এসব কিছুই আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।


সরকারি নথি বলছে, ৩৬ বছরের চাকরিজীবনে আশরাফ আলীর আয় হয়েছে সর্বোচ্চ আড়াই কোটি টাকা। অথচ অনুসন্ধান বলছে, শুধু ঢাকাতেই রয়েছে প্রায় ২০টি ফ্ল্যাট, ভবন ও মার্কেট। স্ত্রীসন্তানদের নামে কেনা হয়েছে একাধিক জমি, জমা রাখা হয়েছে কয়েক কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র।


অভিযোগ জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সৈয়দ আশরাফ আলী ফোন রিসিভ করেননি। এসএমএস করে পরিচয় দিয়েও কোনো সাড়া দেননি। তার নীরবতা আরও প্রশ্ন তুলেছে।


অন্যদিকে শেল্টার অ্যান্ড রিহ্যাবিলাইটেশন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ গোলাম হোসেন বলেন, এই কর্মকর্তা ডিপিডিসি’র ভেতরে গ্রাহক জিম্মি করে দুর্নীতির পাহাড় গড়েছেন। তিনি একজন দুর্নীতিবাজ হিসেবে পরিচিত মুখ।


কি বলছেন বিশ্লেষকর: টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীর অস্বাভাবিক সম্পদ থাকলে ধরে নিতে হবে। ওই সব কর্মকর্তা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। দিনে দিনে দুর্নীতির ঘটনা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। জবাবদিহির ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে আরও বড় অনিয়ম হবে।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, ঘুষের টাকা কালো টাকার সম্পদশালীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। এমনকি তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। 


আরএক্স/