শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ অপু এখন বিএনপির মঞ্চে
বিশেষ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪২ পিএম, ৫ই সেপ্টেম্বর ২০২৫

চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস নিজেকে পরিচয় দিতেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। সেই সুবাদে শেখ হাসিনার গনভবনে যাতায়াতে নিজেকে হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচয় দিতেন। বসবাস করেন আফতাব নগরে। বিগত সরকারের কট্টর সমর্থক বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ আমলা ও সাবেক মন্ত্রীদের সঙ্গে ছিলো তার ঘনিষ্ঠতা। জুলাই ছাত্র হত্যার আসামিও এই চিত্রনায়িকা। তবুও তিনি চলাফেরা করেন দাপটের সঙ্গে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলটির নির্বাচনী প্রচারণায় সক্রিয় ছিলেন এই অভিনেত্রী। শুধু তাই নয়, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হওয়ার দৌড়েও তার নাম শোনা গিয়েছিল।
কিন্তু এবার অপুকে ভিন্ন চিত্র দেখা গেল বৃহস্পতিবার (০৪ সেপ্টেম্বর) কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চে। কেক কাটায় অংশ নিয়েছেন এই স্বৈরাচারের দোসর খ্যাত চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস।
জানা যায়, অপু সেখানে যাচ্ছেন খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিপুল সংখ্যক জনতা ভিড় জমায়। তাদের আমন্ত্রণ জানান খোকসা পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রিপন হোসেন। অনুষ্ঠানে মঞ্চে বক্তব্য রাখেন অপু বিশ্বাস। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে সাত ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে আপনাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। আমি শিল্পী, এটাই আমার পরিচয়। সেই পরিচয়েই আপনাদের ভালোবাসা পেয়েছি। আপনাদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা আসলে সেই ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ। অপু বিশ্বাস আরও বলেন, এর আগে রাজবাড়ী এসেছিলাম, তবে খোকসায় প্রথম আসা। আমাকে এখানে আনার জন্য রিপন ভাইকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি আপনাদের সেবা করতে চান, আমি চাইবো আপনারা সেই সুযোগ দেবেন।
আরও পড়ুন: সুবিধাবাদি কারে বলে দেখিয়ে দিলেন দিদি: পরীমনি
আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচনী মাঠে তারকা হিসেবে নিয়মিত উপস্থিত ছিলেন অপু বিশ্বাস। সেই অপুই এবার বিএনপির অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নতুন আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অপু বিশ্বাসের যোগ দেওয়ার একটি ভিডিও ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে অনেকেই বিরূপ মন্তব্য করেছেন। রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে চায়ের কাপে বইছে সমালোচনার ঝড়। উপজেলার জানিপুর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শোডাউন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তাকে অতিথি করা হয়।
উপজেলা ও পৌর বিএনপির ব্যানারে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নারী সংসদ সদস্যের জন্য মনোনয়ন প্রত্যাশী অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস যোগ দেন। অতিথি হিসেবে বক্তব্যে রাখার সময় বিএনপির গুণকীর্তন করেন তিনি। এরপর মঞ্চে কেক কাটায় অংশ নেন। অল্প সময়ের মধ্যে ভক্ত ও আয়োজকদের চোখ ফাঁকি দিয়ে মঞ্চ ছাড়েন তিনি। তবে এ আয়োজনের দায়ভার নেননি উপজেলা বিএনপির সভাপতি। তিনি বলেন, আয়োজক রিপন হোসেন নিজে বিএনপির সদস্যও না। রিপন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মেহেদী আহম্মেদ রুমীর অনুসারী। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, বিএনপির ব্যানারে আয়োজিত অনুষ্ঠানের মঞ্চে কেক কাটার প্রস্তুতি চলছে। এ সময় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস স্বেচ্ছায় কেক কাটায় ব্যস্ত ছাত্রদলের সাবেক নেতার পাশে দাঁড়িয়ে ক্যামেরায় পোজ দিচ্ছেন। কেক কাটা হয়ে গেলে একজন সাবেক ছাত্রনেতা অপুর মুখে কেক তুলে দিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে আয়োজক রিপন হোসেন জানান, তার অভিজ্ঞতা কম। অনুষ্ঠান করতে গিয়ে স্কুলের শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হওয়ার জন্য তার দুঃখ প্রকাশ ছাড়া আর কিছু করার নেই।
আরও পড়ুন: আ. লীগের এমপি হতে চাওয়া অপু বিশ্বাস এবার বিএনপির অনুষ্ঠানে
এ ব্যাপারে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক বলেন, অপু বিশ্বাস শুধু অভিনেত্রী নয়। তার দলীয় পরিচয় রয়েছে। সে ফ্যাসিস্ট সরকারের অবৈধ সংসদে নারী সদস্য পদের জন্য লড়েছে। তার দেওয়া ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তাকে বিএনপির অনুষ্ঠানে এনে বিএনপিকে শুধু পচানো হয়নি। পচানো হয়েছে ২৪-এর শহীদদের।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলাউদ্দিন খান জানান, বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে যে রিপন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে, সে নিজে বিএনপির কেউ না। অনুষ্ঠান আয়োজনের কোনো এখতিয়ার তার নেই।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ব্যক্তিগত শোডাউনের পুরো আয়োজন করা হয় খোকসা জানিপুর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভেতরে ও ফুটবল মাঠে। পরীক্ষা ও ক্লাস চালু রেখেই বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভেতরের প্যান্ডেল করে বিএনপির কর্মীদের ভুঁরি ভোজের আয়োজন করা হয়।
এদিকে ঢাকাই চলচ্চিত্রের দর্শকপ্রিয় অভিনেত্রী পরীমনি শুক্রবার (০৫ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ ম্যাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এবার অপু বিশ্বাসের প্রসঙ্গ টেনে যেখানে তিনি লিখনে, আগে ছিল ৬ মাস হিন্দু ৬ মাস মুসলিম। এখন ৬ মাস আওয়ামিলীগ ৬ মাস বিএনপি পল্টিবাজ, সুবিধাবাদি কারে বলে দিদি কিন্তু দেখিয়ে দিলেন। বাপরে বাপ কি জিনিস একটা। পরীমনির দেয়া পোস্টে কমেন্ট বক্সে অনেকেই তার সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেছেন।
এমএল/