Logo

আলীকদমে আখ চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল

profile picture
উপজেলা প্রতিনিধি
বান্দরবান
১৩ অক্টোবর, ২০২৫, ১৩:২৫
17Shares
আলীকদমে আখ চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল
ছবি: প্রতিনিধি

‎বান্দরবানের আলীকদমে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এর সহযোগিতায় ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সুপার ক্রপ চাষাবাদ জোরদার করণ প্রকল্প’ -এর আওতায় তামাক চাষের বিকল্প ইক্ষু চাষ শুরু করতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের অধীনে ৮২ জন কৃষকের মাধ্যমে ৮২ টি প্লটের মাধ্যমে ৮২ বিঘা জমিতে ইক্ষু চাষ করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

‎আলীকদমে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সুপার ক্রপ চাষাবাদ জোরদার করণ প্রকল্প প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২৪-২০২৫ রোপণ মৌসুমে ৬৫ টি জন কৃষকদের মাঝে ৬৫ বিঘা জমি এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬০টি প্রদর্শনী প্লট প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ইক্ষু ও সাথী ফসল চাষের প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও বসতবাড়ির আঙ্গিনায় ইক্ষু চাষ হিসেবে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৪৬ টি এবং ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ৮২টি আখ চাষের প্লট তৈরি করা হয়েছে।

‎প্রদর্শনী প্লট সমূহে উন্নতমানের শোধনকৃত আখের বীজ, সাথী ফসলের বীজ,সার-কীটনাশক বিতরণ এবং প্রদর্শনী প্রাপ্ত কৃষক ও অন্যান্য কৃষকদের কে যথাসময়ে মাঠ দিবসসহ প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে প্রশিক্ষিতও করে গড়ে তুলা হয়। চলতি মৌসুমে এ চাষে বাম্পার ফলনে লাভের মুখ দেখা দেওয়ায় চাষিরা বেজায় খুশি। স্বল্প খরচ, অধিক লাভ ও পরিশ্রমও কম হওয়ার কারণে বর্তমানে অন্য কৃষকেরাও আখ চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠছেন।সচেতন মহলের অভিমত, তামাকের বিকল্প হতে পারে আখ চাষ। তাই এ চাষ বৃদ্ধিতে কৃষি বিভাগকেও কৃষকদের সহায়তা প্রদান অপরিহার্য। চলতি মৌসুমে ২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ১২৪ জন প্রকৃত তামাক চাষিকে ইক্ষু ও সাথী ফসল চাষের আওতায় আনা হয়েছে বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

‎জানা গেছে, গত চার যুগের বেশি সময় ধরে আলীকদম উপজেলায় ৪টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকায় আবাদি জমিতে ক্ষতিকর তামাক চাষ হয়ে আসছে। বর্তমানেও বেশির ভাগ জমিতে তামাক চাষ করা হচ্ছে। তামাক চাষ লাভবান হলেও শারীরিকভাবে ক্ষতি হয়। এছাড়া পরিশ্রম এবং মূলধন বেশি লাগার কারনে আস্তে আস্তে অনেক কৃষকই সম্প্রতিকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উদ্বুদ্ধকরণে ক্ষতিকর তামাক চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তারা তামাকের বিকল্প বেছে নিচ্ছেন আখ চাষকে। এক সময় যে সকল কৃষক ক্ষতিকর তামাক চাষ করতেন তাদের অনেকেই এখন আখ চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন বলে জানান কৃষি বিভাগ।

‎পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, কৃষকদের তামাক চাষ থেকে ফেরাতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সার্বিক সহযোগিতায় ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সুপার ক্রপ চাষাবাদ জোরদার করণ প্রকল্প’ -এর আওতায় ২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ রোপন মৌসুমে আলীকদম উপজেলায় ১২৪ জন কৃষকের মাধ্যমে বিএসআরআই আখ ৪২ (রংবিলাস), বিএসআরআই আখ ৪১ (অমৃত), বিএসআরআই আখ ৪৭, চায়না, সেনেগাল, ব্ল্যাক রুবি ও ভিএমসি ৮৬-৫৫০ জাতের আখ চাষ দেওয়া হয়। প্রতিজন কৃষক ১ বিঘা হারে এ চাষ করা হয় ১২৪ বিঘা জমিতে। আবার এ সকল চাষীরা আখ ক্ষেতে সাথী ফসল হিসেবে আলু, মুলা, গাজর ও ফরাশ সিম, বাঁধাকপি, শাক ও ফুল কপিসহ আরো কয়েকটি ফসল চাষ করেন। এতে আখের চারা, সার, কীটনাশক ও পানি সেচসহ সার্বিক সহযোগিতা করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।

‎সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়,মাঠ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণার ফলাফল অনুযায়ি প্রতি বিঘা ইক্ষু ও সাথী ফসল চাষ করে নীট লাভ হিসেবে কৃষক পাচ্ছেন ১ লক্ষ ৩০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। অপর দিকে প্রতি বিঘা তামাক চাষ করে নীট লাভ হিসেবে কৃষক পাচ্ছেন ৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা। আলীকদম উপজেলায় ২.৫ মেক্ট্রিটন বিশুদ্ধ আখেঁ গুর উৎপাদন করা হয়েছে। এই আখঁ গুলো স্হানীয় বাজারে বিক্রয় করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

‎২নং চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড সংলগ্ন সরোয়ার আলমের আখ ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, ক্ষেতে সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে সাজানো গোচালো আখ। সেগুলো তিনি আখ ক্ষেতের পরিচর্যা করছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় ১ বিঘা জমিতে রং বিলাস-৪২, বিএসআরআই আখ ৪২ (রংবিলাস), বিএসআরআই আখ ৪৭, সেনেগাল ও ব্ল্যাক রুবি জাতের এ আখ চাষ করেছেন। তার ক্ষেতে প্রায় ৬ হাজার পিচ আখ রয়েছে। এতে আনুমানিক খরচ হয়েছে ৫০/৭০ হাজার টাকা। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে এখন প্রতি পিচ আখ ৪০/৪৫ টাকা হারে আখ বিক্রি করে তিন থেকে চার লক্ষ টাকা পাবেন।

‎নারী উদ্যোক্তা চাইংনু এ মার্মা বলেন, আগে আমরা স্বামী/স্ত্রী মিলে তামাক চাষ করতাম। বর্তমানে প্রকল্পে মাধ্যমে আমি নিজস্ব ১ বিঘা জমিতে রং বিলাস ৪২ জাতের আখ চাষ করেছি। আখের চাহিদা থাকায় ভালো দাম পাচ্ছি এবং বাহিরে ব্যবসায়ীরা পাইকারি নিয়ে যাচ্ছেন।তিনি আরও বলেন, আখ চাষে সব মিলিয়ে খরচ প্রায় ৭৫ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে আখ বিক্রি করে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা পেয়েছি। এতে আমার ১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। এছাড়া সবজি চাষ থেকেও ২০ হাজার টাকা আয় করতে পেরেছি।

বিজ্ঞাপন

‎পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সুপার ক্রপ চাষাবাদ জোরদার করণ প্রকল্প’ কনসালটেন্ট কৃষিবিদ ক্যসাইন বলেন, আঁখ অর্থকরী ফসল। এক সময় দেশে ধানের ফলন বৃদ্ধির জন্য আখ চাষ কমে এসেছিল, কিন্তু বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় আখ চাষের কারণে এ চাষে কৃষকদের সু-দিন ফিরে আসছে। অনেক কৃষকই বর্তমানে আখ চাষ করে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন,বান্দরবানের প্রতিবছর গুড়ের চাহিদা ৩০ থেকে ৩২ টন কিন্তু এ জেলায় স্থানীয়ভাবে গুড় উৎপাদিত হয় শুধুমাত্র ২ থেকে ৪ টন। বাৎসরিক গুড়ের চাহিদা মেটানোর জন্য আরো ২৬ থেকে ২৮ টন প্রয়োজন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইক্ষু চাষ সম্প্রসারণে সুস্থু পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।আলীকদম উপজেলায় ২ অর্থ বছরে ৬৫ এককর জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে।

জেবি/এসএ
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD