Logo

আ.লীগের দীর্ঘ শাসনে লোপাটের দাপটে সংকট ব্যাংক খাতের মূলধন

profile picture
নিজস্ব প্রতিবেদক
৮ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:৩৭
35Shares
আ.লীগের দীর্ঘ শাসনে লোপাটের দাপটে সংকট ব্যাংক খাতের মূলধন
প্রতীকী ছবি

দেশের ব্যাংক খাত বর্তমানে গভীর আর্থিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সাড়ে ১৫ বছরের আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলের সময়ে ব্যাংক খাতে বিরল পরিমাণ লুটপাট ও অনিয়মের প্রভাব আজকের প্রেক্ষাপটে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। খেলাপি ঋণের উর্ধ্বগতি, নিরাপত্তা সঞ্চিতি ও প্রভিশন ঘাটতি ব্যাংকগুলোর মূলধনকে অস্বাভাবিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

বিজ্ঞাপন

চলতি বছরের জুন মাসের শেষে দেশের ২৪টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতির আওতায় পড়ে। এসব ব্যাংকের মোট ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। গত মার্চ মাসে ২৩ ব্যাংকের ঘাটতি ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। নতুন করে এনআরবিসি ব্যাংক ও আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে। তবে বিদেশি খাতের হাবিব ব্যাংক ঘাটতি থেকে বেরিয়ে এসেছে। এই তথ্যগুলো প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলী হোসেন প্রধানিয়া জানিয়েছেন, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে আমাদের খেলাপি ঋণ মাত্র ৫ শতাংশ ছিল। এখন তা সাড়ে ২৮ শতাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বড় অঙ্কের নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হচ্ছে, যা মূলধন ঘাটতির অন্যতম কারণ।

বিজ্ঞাপন

ব্যাংক খাতের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, গত সরকারের সময় অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা ঋণের নামে উত্তোলন করা হয়েছিল। তখন এসব ঋণ খেলাপি হিসেবে দেখানো হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর এসব লুকানো খেলাপি ঋণ প্রকাশ্যে এসেছে। বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ৭ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ব্যাংকগুলো চাহিদা অনুযায়ী নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে পারছে না, ফলে তাদের মূলধন সংকটের পরিস্থিতি আরও তীব্র হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জুন শেষে ব্যাংক খাতে মূলধন ঝুঁকিজনিত সম্পদের অনুপাত (সিআরএআর) কমে ৪.৪৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ন্যূনতম ১০ শতাংশ হওয়া উচিত। গত মার্চ মাসে সিআরএআর ছিল ৬.৭৪ শতাংশ। সিআরএআর হচ্ছে মূলধন ও ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের অনুপাত, যা ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ।

রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংকের মধ্যে জনতা ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি সবচেয়ে বেশি ১৭ হাজার ২৫ কোটি টাকা। অগ্রণী ব্যাংকের ঘাটতি ৭ হাজার ৬৯৮ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ৪ হাজার ১৭৩ কোটি, এবং বেসিক ব্যাংকের ৩ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হেলাল আহমেদ চৌধুরী জানিয়েছেন, ব্যাংকটি একসময় ভালো অবস্থায় ছিল, তবে এখন পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

বিজ্ঞাপন

তবে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বেসিক ব্যাংককে বাঁচিয়ে রাখা লাভজনক নয়; দীর্ঘমেয়াদে বন্ধ করা ভালো।

বেসরকারি খাতের মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি সবচেয়ে বেশি ৮ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা। এরপর আসে এবি ব্যাংক (৬,৭৭৫ কোটি), পদ্মা ব্যাংক (৫,৬১৯ কোটি), আইএফআইসি ব্যাংক (৪,০৫১ কোটি), বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক (১,৮৭৮ কোটি), প্রিমিয়ার ব্যাংক (১,৬৪০ কোটি), ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (১,৩৮৫ কোটি), এনআরবিসি ব্যাংক (৩১৬ কোটি), সিটিজেন ব্যাংক (৮৬ কোটি) এবং সীমান্ত ব্যাংক (৪৫ কোটি)।

বিজ্ঞাপন

শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি ২১ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের ঘাটতি ১৮,৫০৪ কোটি এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ১০,৫০১ কোটি টাকা। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ৫,৫৫২ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ২,০৭৯ কোটি, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ১,৯৭৫ কোটি, এক্সিম ব্যাংক ৯০১ কোটি, এবং আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ২৫৪ কোটি টাকা ঘাটতির মধ্যে রয়েছে।

বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে কৃষি ব্যাংকের ঘাটতি সবচেয়ে বড়, যা পুরো ব্যাংক খাতের মধ্যে সর্বাধিক। জুন মাসে কৃষি ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৯,১৬১ কোটি টাকা। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঘাটতি ২,৬২০ কোটি।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই অবস্থা ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা ও দেশের আর্থিক নিরাপত্তার জন্য সতর্ক সংকেত। দ্রুত সংস্কার ও পুনর্বিন্যাস ছাড়া পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।

জেবি/এএস
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD