ব্যাংকিং খাতে বাড়ছে ঝুঁকি, খেলাপি ঋণ ৬ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা

দেশের ব্যাংকিং খাতে বিপদের ঘণ্টা আরও জোরে বাজছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, দেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৩৫.৭৩ শতাংশ। এই অঙ্ক শুধু আর্থিক খাতের দুর্বলতা নয়, ব্যাংকিং ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা নিয়ে গুরুতর উদ্বেগও উস্কে দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর নজরদারি ও নিয়ম-কানুন প্রয়োগ করায় খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র স্পষ্ট হয়েছে। আগে যেসব ঋণ পরিশোধ না হলেও কাগজে ‘নিয়মিত’ হিসেবে দেখানো হতো, এখন সেগুলো মন্দ ঋণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে বিতরণ করা ঝুঁকিপূর্ণ ঋণগুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ পেয়েছে এবং মন্দ ঋণের পরিমাণ বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর শেষে মোট বিতরণকৃত ঋণ ছিল ১৮ লাখ ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। তার মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রকৃত চিত্র প্রকাশ পাওয়ায় ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি পরিষ্কার হলেও এটি একটি উদ্বেগজনক বাস্তবতাও সামনে এনেছে—বছরের পর বছর ধরে বিপুল অঙ্কের অনাদায়ি ঋণ জমে থাকা।
তারা সতর্ক করেছেন, যথাযথ সংস্কার না করলে ভবিষ্যতে এই পরিমাণ আরও বাড়ার আশঙ্কা প্রবল।
আইএমএফের সঙ্গে ঋণ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে বেসরকারি খাতে খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশ এবং সরকারি ব্যাংকে ১০ শতাংশের নিচে নামাতে হবে।
বিজ্ঞাপন
তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে প্রায় ৫০ শতাংশ ঋণ খেলাপি।
অর্থনীতিবিদরা উল্লেখ করেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার সময় মোট খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এরপর থেকে বিভিন্ন অর্থনৈতিক দুর্নীতির কারণে ঋণের পরিমাণ বাড়তে থাকে। বিশেষত তৎকালীন সরকারের ছত্রছায়ায় ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট এবং বিদেশে পাচারের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
খাত বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, খেলাপি ঋণের এই অবস্থা ব্যাংকিং ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তারা প্রয়োজনীয় সংস্কার ও কঠোর নজরদারির আহ্বান জানাচ্ছেন যাতে ভবিষ্যতে ঋণপত্রিকায় আরও বড় আর্থিক ঝুঁকি তৈরি না হয়।








