নভেম্বর শেষ হলেও হাতে ফেরেনি টাকা, প্রহর গুনছেন গ্রাহকরা

নভেম্বর শেষ হলেও ছোট অঙ্কের আমানতকারীরা এখনও তাদের জমা করা টাকা ফেরত পাননি। গভর্নরের ঘোষণার পরও ব্যাংক থেকে টাকা না পাওয়ায় উদ্বেগ ও হতাশায় দিন কাটছে হাজারো গ্রাহকের। কেউ সকালে, কেউ বিকেলে ব্যাংকের শাখায় ছুটে যাচ্ছেন—আজ টাকা মিলবে সেই আশায়। কিন্তু প্রতিদিনই একই হতাশা নিয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে। বন্ধ কাউন্টার, খালি লবি এবং ব্যাংকারদের নিরুপায় মুখ—সব মিলিয়ে জমানো টাকার জন্য এখন প্রহর গোনা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
বিজ্ঞাপন
মতিঝিল, পল্টন, গুলশানসহ রাজধানীর বিভিন্ন শাখা ঘুরে দেখা গেছে, সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হলেও একীভূত হওয়া অন্যান্য ব্যাংকগুলোর শাখায় অস্বাভাবিক নীরবতা বিরাজ করছে। যেখানে একসময় সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভিড় থাকত, সেখানে এখন কাউন্টার খালি এবং মানুষ নেই। কিছু গ্রাহক শুধু ডিপিএস বা জরুরি কাজে আসছেন; কিন্তু উত্তোলন কার্যত বন্ধ।
বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তা জানাচ্ছেন, গ্রাহকেরা স্বেচ্ছায় ব্যাংক আসা কমিয়েছেন। কারণ বারবার টাকা না পেয়ে হতাশা দেখা দিয়েছে। সরকার ঘোষিত অর্থ ছাড় না হওয়া পর্যন্ত তারা টাকা দিতে পারবেন না—এই বার্তাই এখন স্পষ্ট।
আরও পড়ুন: নতুন নকশার ৫০০ টাকার নোট আসছে বাজারে
বিজ্ঞাপন
আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের তোপখানা রোড শাখায় দেখা যায়, এক ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর মাত্র দু’জন গ্রাহক উপস্থিত হন। একজন, জোবায়ের, জানান, তিনি পাঁচ বছর মেয়াদি ডিপিএসের টাকা জমা দিতে এসেছেন।
তিনি বলেন, শুনেছি অনেকেই টাকা তুলে নিচ্ছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, সরকার টাকা ফেরত দেবে। এখন ডিপিএস ভাঙলে ব্যাংক ঘোষিত সুবিধা পাব না।
একইভাবে, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংকের শাখাতেও গ্রাহক উপস্থিতি খুব কম। কর্মকর্তারা জানান, ওপর থেকে নির্দেশনা রয়েছে, তাই তারা সরাসরি টাকা দেওয়ার বিষয়ে মন্তব্য করছেন না।
বিজ্ঞাপন
সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া জানান, ব্যাংকের প্রধান কাজ হবে আমানতকারীদের আস্থা ফেরানো।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি বলেন, সরকারি মালিকানায় ইসলামী ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করা জাতির জন্য সুসংবাদ। পূর্ণাঙ্গ ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা প্রধান চ্যালেঞ্জ, এরপর পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করার পদক্ষেপ নেব।
আরও পড়ুন: ‘ট্রানজিট গেটওয়ে’ হয়ে উঠছে মোংলা বন্দর
বিজ্ঞাপন
প্রসঙ্গত, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক একীভূত করে গড়ে তোলা হয়েছে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসি। নতুন ব্যাংকের মোট পেইড-আপ ক্যাপিটাল ৩৫ হাজার কোটি টাকা, যার ২০ হাজার কোটি টাকা সরকারি অর্থ এবং ১৫ হাজার কোটি টাকা আসে আমানতকারীদের শেয়ার থেকে। ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড় করেছে যা ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে।
বর্তমানে আমানতকারীরা আশা ও উদ্বেগের মধ্যে প্রতিদিন ব্যাংকের দোরগোড়ায় প্রহর গুনছেন—নতুন ব্যাংক কার্যক্রম সঠিকভাবে শুরু হলেও তাদের হাতে টাকা কখন ফেরত পাওয়া যাবে, সে প্রশ্ন এখনও অমীমাংসিত।








