হত্যায় ১২ লাখ টাকায় কিলারের সাথে চুক্তি করেন শাশুড়ি

দীর্ঘ ২৮ বছর আগে ১৯৯৭ সালের সালমান শাহ হত্যা মামলার ১১ নম্বর আসামি রেজভি আহমেদ তার জবানবন্দিতে জানায়, সালমান শাহর মৃত্যু ছিল ১২ লাখ টাকার এক হত্যার চুক্তি। যে চুক্তি করেছিলেন সালমান শাহর শাশুড়ি লতিফা হক লুসি। দীর্ঘ ২৯ বছর পর ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা সালমান শাহর অপমৃত্যু মামলা হত্যা মামলায় রূপ নেয়ার পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে সেই জবানবন্দি।
বিজ্ঞাপন
ওই জবানবন্দিতে রেজভী সালমান শাহর হত্যার দায় স্বীকার করে বলেন, আমরা সালমান শাহকে হত্যা করেছি। হত্যার ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে সাজানো হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে সামিরা ও তার পরিবারসহ অনেকেই জড়িত। হত্যাযজ্ঞে আমিও ছিলাম।
১৯৯৭ সালের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে রেজভী জানান, সালমান শাহর মৃত্যু ছিল ১২ লাখ টাকার এক হত্যার চুক্তি। যে চুক্তি করেছিলেন সালমান শাহর শাশুড়ি লতিফা হক লুসি। এ হত্যা চুক্তিতে আরও ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের খলনায়ক ডন, ডেভিড, ফারুক ও জাভেদ।
বিজ্ঞাপন
রেজভী বর্ণনা অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর গুলিস্তানের একটি বারে রাত ৮টায় ডন, ডেভিড, ফারুক, জাভেদ ও রেজভী দেখা করেন। ওই দিন ছাত্তার ও সাজু নামে আরও ২ জন ছেলে আসে। এরপর ফারুক আসে। ২ লাখ টাকা বের করে জানান সামিরার মা এই টাকা দিয়েছেন। সালমানকে শেষ করার জন্য মোট ১২ লাখ টাকা দেবেন।
কিন্তু ২ লাখ টাকা নিয়ে ফারুকের সঙ্গে ডনের কথা কাটাকাটি হলে ফারুক বেরিয়ে যান এবং কিছুক্ষণ পর আরও ৪ লাখ টাকা নিয়ে আসেন। রেজভী জানান, ফারুক বলেন কাজের আগে ৬ লাখ ও কাজের পরে ৬ লাখ। এরপরই প্লাস্টিকের একটি দড়ি, সিরিঞ্জ, রিভলবার ইত্যাদি গুছিয়ে নেয়া হয়।
হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে রেজভী আরও বলেন, রাত আড়াইটায় সালমান শাহর বাড়িতে যান ডন, ডেভিড, ফারুক, আজিজ ভাই। রিজভীর দাবি, সে রাতে ঘুমন্ত সালমান শাহর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন এসব হত্যাকারীরা। নারকীয় হত্যাযজ্ঞে উপস্থিত ছিলেন সামিরা, সামিরার মা লুসি এবং আত্মীয়া রুবি।
বিজ্ঞাপন
ঘুমন্ত সালমানকে ক্লোরফর্ম দিয়ে বেহুশ করেন সামিরা। কিছুক্ষণ পর সালমান শাহর জ্ঞান ফিরলে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। এসময় অভিনেতার শরীরে ইনজেকশন পুশ করতে বলেন আজিজ ভাই। সালমানকে হত্যা করার পর সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে দেয়া হয় তার লাশ।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মাত্র ২৫ বছরে রহস্যজনক মৃত্যু হয় ঢালিউডের শীর্ষ চিত্রনায়ক সালমান শাহর। এতোদিন এ মৃত্যুকে অপমৃত্যু বলে উল্লেখ করেছে একাধিক তদন্ত কমিটি। তবে সব তদন্তেই প্রকৃৃত সত্যকে এড়িয়ে চলা হয়েছে। যে কারণে দীর্ঘ ২৯ বছর পর অভিনেতা সালমান শাহর অপমৃত্যু মামলা হত্যা মামলায় রূপ নিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সালমান শাহ হত্যা মামলায় সর্বমোট ১১ জনকে আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। হত্যা মামলায় প্রধান আসামি প্রয়াত অভিনেতার সাবেক স্ত্রী সামিরা হক। অন্য ১০ আসামি হলেন প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, খলনায়ক ডন, নায়কের সাবেক শাশুড়ি লতিফা হক লুসি, ডেভিড, জাভেদ, ফারুক, মেফিয়ার বিউটি সেন্টারের রুবি, আবদুস সাত্তার, সাজু ও রেজভি আহমেদ ফরহাদ।