ট্রাম্পের ‘শুল্ক বোমা’তে কাঁপছে বিশ্ব চলচ্চিত্র শিল্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও চমক দিলেন। এবার নিশানায় বিশ্ব চলচ্চিত্র শিল্প। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে নির্মিত সিনেমার ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এতে বলিউড থেকে শুরু করে দক্ষিণী সিনেমা, এমনকি হলিউডের বিদেশে হওয়া প্রোডাকশনও মারাত্মক চাপে পড়তে পারে।
বিজ্ঞাপন
ট্রাম্প এর আগে অভিবাসন, ভিসা ও বিদেশি পণ্যে কঠোর নীতি নিলেও এবার সরাসরি আঘাত হানলেন বিনোদন জগতে।
নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছেন, “আমাদের সিনেমার ব্যবসা অন্য দেশগুলো চুরি করে নিয়েছে। এটা যেন শিশুর কাছ থেকে লাইসেন্স কেড়ে নেওয়ার মতো।”
বিজ্ঞাপন
রয়টার্স জানায়, চলতি বছরের মে মাসে ট্রাম্প শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দিলেও বিস্তারিত কিছু জানাননি। এবার তিনি স্পষ্ট করলেন- শুল্ক আসছে এবং তা বিশাল অঙ্কে। তবে কবে থেকে কার্যকর হবে, কীভাবে প্রযোজনা সংস্থা, স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম বা হলগুলোর ওপর শুল্ক ধার্য হবে, তা পরে ব্যাখ্যা দেবে হোয়াইট হাউস।
হলিউডও যে এর বাইরে নয়, তা স্পষ্ট। সাম্প্রতিক ডেডপুল অ্যান্ড উলভারিন, উইকেড, গ্ল্যাডিয়েটর ২ -এর মতো সিনেমার বড় অংশ শুট হয়েছে বিদেশে। অর্থাৎ বিপুল অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ব্যয় হয়েছে। এ কারণেই ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে হলিউডও অস্বস্তিতে।
এদিকে প্রোডপ্রো-র বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চলচ্চিত্র প্রোডাকশনে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২৬% কম। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা ও ব্রিটেনে ব্যয় বেড়েছে। বিশেষত কানাডা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শঙ্কায়, কারণ শুল্ক বেড়ে গেলে দুই দেশের অর্থনীতি ও মাঝারি আয়ের চাকরিগুলোতে ধস নামতে পারে।
বিজ্ঞাপন
দর্শকের ওপরও চাপ পড়বে। প্রযোজকরা যদি বিদেশে শুটিং চালিয়ে যান, তবে অতিরিক্ত খরচ শেষ পর্যন্ত টিকিটের দাম ও স্ট্রিমিং সাবস্ক্রিপশনের বাড়তি খরচে গিয়ে ঠেকবে।
ফলে দর্শকরা বলবেন, “সিনেমা হলে নয়, এবার ওটিটিতেই থাকি।”
বিজ্ঞাপন
বলিউডের ক্ষেত্রেও প্রভাব ভয়াবহ। যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় সিনেমার অন্যতম বড় বাজার। সেখানে ৫২ লাখেরও বেশি প্রবাসী ভারতীয় আছেন। বর্তমানে ভারতীয় সিনেমার বিদেশি আয়ের ৩৫-৪০ শতাংশ আসে আমেরিকা থেকে। শুল্ক আরোপ হলে টিকিটের দাম দ্বিগুণ হতে পারে, ছোট ও মাঝারি প্রযোজনা সংস্থার সিনেমাগুলো মুক্তির আগেই ঝুঁকিতে পড়বে।
চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্তে বিশ্ব সিনেমা বাণিজ্যে বড় ধাক্কা আসবে।
ফিল্ম স্টাডিজের অধ্যাপক মানস ঘোষের মতে, “হলিউড এখন সংকটে। এশিয়ার সিনেমা বিশ্ববাজারে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। ট্রাম্প অন্তত নিজের দেশের বাজার বাঁচাতে চাচ্ছেন।”
বিজ্ঞাপন
চলচ্চিত্র গবেষক সোমেশ্বর ভৌমিক মনে করেন, শুল্ক কীভাবে ধার্য হবে, তা স্পষ্ট নয়, তবে ভারতীয় সিনেমা নিশ্চিতভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
অধ্যাপক অনিন্দ্য সেনগুপ্ত বলেন, “গ্লোবালাইজেশনের যুগে ট্রাম্প উল্টো পথে হাঁটছেন। বাইরের দেশের সিনেমা আটকে দিয়ে সংস্কৃতিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইছেন। তবে এতে ব্যবসা ও বিশ্ব বিনোদন শিল্প উভয়ই ক্ষতির মুখে পড়বে।”