Logo

সাহিত্যে নোবেলজয়ী লাসলোর জীবনী

profile picture
জনবাণী ডেস্ক
৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১৮:০৩
7Shares
সাহিত্যে নোবেলজয়ী লাসলোর জীবনী
ছবি: সংগৃহীত

আধুনিক ইউরোপীয় সাহিত্যের প্রলয় ও সৌন্দর্যের মেলবন্ধন ঘটানো এক অনন্য নাম লাসলো ক্রাসনাহোরকাই। হাঙ্গেরির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ছোট শহর জিউলাতে ১৯৫৪ সালে জন্ম নেওয়া এই লেখক মানবজীবনের অস্থিরতা, ভয় ও নৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যেও শিল্প ও সৌন্দর্যের জয়গান গেয়েছেন তাঁর লেখনীতে।

বিজ্ঞাপন

লাসলোর প্রথম উপন্যাস ‘সাতান্তাঙ্গো’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালে। সমাজতান্ত্রিক যুগের অন্তিম প্রান্তে হাঙ্গেরির এক প্রত্যন্ত গ্রামীণ জীবনের হতাশা, দারিদ্র্য ও বিভ্রমের কাহিনি তুলে ধরে উপন্যাসটি। গল্পে দেখা যায়, নিঃস্ব কিছু মানুষের জীবনে ফিরে আসে দুই চরিত্র—ইরিমিয়াস ও পেত্রিনা—যাদের সবাই মৃত ভেবেছিল। তারা কি মুক্তির বার্তাবাহক, নাকি ধ্বংসের? এই অনিশ্চয়তার মধ্যে ক্রাসনাহোরকাই নির্মাণ করেন ভয়াবহ মানবিক বাস্তবতার এক মহাকাব্যিক চিত্র। পরবর্তীতে বিখ্যাত পরিচালক বেলা টার এই উপন্যাস অবলম্বনে ১৯৯৪ সালে নির্মাণ করেন একই নামে চলচ্চিত্র, যা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়।

লাসলোর প্রথম উপন্যাস ‘সাতান্তাঙ্গো’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালে। সমাজতান্ত্রিক যুগের শেষ প্রান্তে হাঙ্গেরির এক প্রত্যন্ত গ্রামের পরিত্যক্ত কৃষিফার্মকে কেন্দ্র করে লেখা এই উপন্যাসটি প্রকাশের পরই সাহিত্যজগতে তুমুল আলোড়ন তোলে। গল্পে দেখা যায়, দারিদ্র্যপীড়িত কিছু মানুষ আশা-নিরাশার চক্রে বন্দি হয়ে আছেন। ঠিক তখনই হঠাৎ ফিরে আসে দুই চরিত্র, ইরিমিয়াস ও পেত্রিনা, যাদেরকে সবাই মৃত ভেবেছিল। তারা কি মুক্তির দূত নাকি ধ্বংসের বার্তাবাহক—এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই ক্রাসনাহোরকাই তুলে ধরেন এক ভয়াবহ মানবিক বাস্তবতা। এই উপন্যাস পরে বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা বেলা টার-এর সহযোগিতায় ১৯৯৪ সালে চলচ্চিত্রে রূপ নেয়।

বিজ্ঞাপন

আমেরিকান সাহিত্যসমালোচক সুসান সনটাগ ক্রাসনাহোরকাইকে আখ্যা দিয়েছিলেন “সমকালীন সাহিত্যের প্রলয়ের মহাগুরু” হিসেবে। এই মন্তব্য আসে তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’ (১৯৮৯) পড়ে। এই উপন্যাসে এক কারপাথিয়ান উপত্যকার ছোট শহরে অদ্ভুত আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলার আবহ তৈরি হয়, যেখানে হঠাৎ হাজির হয় এক বিশাল তিমির মৃতদেহ। এই অদ্ভুত দৃশ্য শহরজুড়ে সন্ত্রাস, ভাঙচুর ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে, সেনাবাহিনীর ব্যর্থতা স্বৈরতন্ত্রের সম্ভাবনা তৈরি করে। লেখক এই গ্রন্থে শৃঙ্খলা ও বিশৃঙ্খলার নির্মম সংঘর্ষকে এক স্বপ্নময়, ভয়াবহ রূপে উপস্থাপন করেন।

১৯৯৯ সালে প্রকাশিত হয় তার আরেক উপন্যাস ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’। এখানে হাঙ্গেরির এক সাধারণ আর্কাইভ কর্মচারী করিন জীবনের শেষ অধ্যায়ে বুদাপেস্ট ছেড়ে নিউইয়র্কে যায়, যেন সে পৃথিবীর কেন্দ্রে নিজেকে এক মুহূর্তের জন্য খুঁজে পায়। এ উপন্যাস থেকেই ক্রাসনাহোরকাইয়ের বিখ্যাত দীর্ঘ, কমা-বহুল, অবিরাম বাক্যরীতির সূচনা ঘটে।

২০১৬ সালে প্রকাশিত ‘বারন ভেনকহেইম’স হোমকামিং’ তার সাহিত্যজীবনের আরেক শীর্ষস্থানীয় সাফল্য। এখানে এক পতিত অভিজাত বারন জুয়ায় সর্বস্বান্ত হয়ে আর্জেন্টিনা থেকে স্বদেশে ফেরে শৈশবের প্রেমিকা ও অতীতের আশ্রয় খুঁজতে। কিন্তু প্রত্যাবর্তনের এই যাত্রা পরিণত হয় এক প্রহসনময়, বিষণ্ন পরিণতিতে, যেখানে দস্তয়েভস্কির ‘ইডিয়ট’-এর প্রতিধ্বনি শোনা যায়।

বিজ্ঞাপন

সাম্প্রতিক সময়ে ২০২১ সালে প্রকাশিত ‘হার্শ্ট ০৭৭৬৯’ (Herscht 07769) তার সাম্প্রতিক ও গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর একটি। জার্মানির থুরিঙ্গেনের একটি ছোট শহরকে পটভূমি করে লেখা এই উপন্যাসে সামাজিক অরাজকতা, হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও জোহান সেবাস্টিয়ান বাখের উত্তরাধিকার একসঙ্গে মিলেমিশে গেছে। এর কেন্দ্রীয় চরিত্র হার্শ্ট, এক সরল কিন্তু প্রবল হৃদয়ের মানুষ, যিনি শেষে আবিষ্কার করেন—যাদের ওপর তিনি আস্থা রেখেছিলেন, তারাই শহরের ধ্বংসের নেপথ্যের নায়ক।

প্রলয়, ভয় ও নৈরাজ্যের পাশাপাশি ক্রাসনাহোরকাইয়ের সাহিত্য গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছে পূর্বের দর্শন ও ধ্যানমগ্নতা দ্বারা। চীন ও জাপান সফরের অভিজ্ঞতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি লেখেন ‘এ মাউন্টেন টু দ্য নর্থ, এ লেক টু দ্য সাউথ, পাথস টু দ্য ওয়েস্ট, এ রিভার টু দ্য ইস্ট’।

বিজ্ঞাপন

তার আরেক ছোট উপন্যাস ‘স্পেডওয়ার্ক ফর আ প্যালেস’ (২০১৮)-এ লেখক দেখান নিউইয়র্কের এক উন্মাদপ্রায় চরিত্র, যে হারম্যান মেলভিলের ছায়ায় আবিষ্ট হয়ে পড়ে। এটি যেমন অনুকরণের অভিশাপ নিয়ে লেখা, তেমনি প্রতিরোধের আশীর্বাদ সম্পর্কেও একই সঙ্গে ব্যঙ্গাত্মক ও বেদনামিশ্র।

প্রলয়ের ভেতর সৌন্দর্য, বিশৃঙ্খলার ভেতর শৃঙ্খলা, আর হতাশার গভীরে শিল্পের সম্ভাবনা—এই ত্রিবিধ টানাপোড়েনেই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের সাহিত্য জীবন্ত। কাফকা থেকে বার্নহার্ড পর্যন্ত ইউরোপীয় ঐতিহ্যের উত্তরসূরি এই লেখক নিজস্ব ভাষায় বিশ্বসাহিত্যে এনেছেন এক মোহনীয় অন্ধকারের আভা, যা ভয়ের মধ্যেও মানবিকতার আলো খুঁজে ফেরে।

লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের সাহিত্য মানবজীবনের জটিলতা, ভয়, বিশৃঙ্খলা ও সৌন্দর্যের সমন্বিত প্রতিফলন। তিনি প্রমাণ করেছেন—অন্ধকারের গভীরতাতেও জ্বলে উঠতে পারে মানবতার আলো।

বিজ্ঞাপন

সূত্র: নোবেলপ্রাইগিু

জেবি/এসডি
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD