গাজায় ফিরলেন ২ লাখ ফিলিস্তিনি, ধ্বংসস্তূপে খুঁজছেন আপনজনদের

ইসরায়েলের আগ্রাসন শেষে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় এক আবেগময় প্রত্যাবর্তন শুরু হয়েছে। বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর শুক্রবার (১০ অক্টোবর) প্রায় দুই লাখ ফিলিস্তিনি তাদের বিধ্বস্ত বাড়িঘরের সন্ধানে উত্তর গাজার দিকে ফিরে গেছেন।
বিজ্ঞাপন
বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল শুক্রবার জানান, আজ প্রায় ২ লাখ মানুষ উত্তর গাজায় ফিরে গেছেন। লক্ষ লক্ষ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি তাদের বিধ্বস্ত বাড়িঘরের কী অবশিষ্ট আছে, তা দেখার জন্য এবং সামনের কঠিন জীবনযাত্রার আশঙ্কায় গাজার উপকূলীয় সড়ক ধরে দলে দলে উত্তরের দিকে যাত্রা শুরু করেছেন।
যদিও যুদ্ধবিরতির খবরে ব্যাপক উল্লাস দেখা গেছে, তবুও অনেক ফিলিস্তিনি তীব্রভাবে অনুভব করছেন যে যুদ্ধের আগের জীবনের কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।
আরও পড়ুন: ঘরে ফিরছেন ফিলিস্তিনিরা, সংস্কার করছেন মসজিদ
বিজ্ঞাপন
পাঁচ সন্তানের মা বালকিস, যিনি গাজা সিটি থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে কেন্দ্রীয় গাজার দির আল বালায় আশ্রয় নিয়েছিলেন, তিনি রয়টার্সকে বলেন, ঠিক আছে, যুদ্ধ শেষ হলো—তারপর কী? আমার আর কোনো বাড়ি নেই যেখানে আমি ফিরে যেতে পারি।
তিনি আরও বলেন, তারা সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে, গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আর তারা যুদ্ধবিরতি করেছে। আমার কি খুশি হওয়া উচিত? না, আমি খুশি নই।
এদিকে, ইসরায়েলি সাঁজোয়া যান এবং বুলডোজার বৃহস্পতিবার (০৯ অক্টোবর) থেকেই গাজা ছাড়তে শুরু করেছিল। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, সৈন্যরা গাজার অভ্যন্তরে তাদের অপারেশনাল অবস্থান সামঞ্জস্য করছে।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলায় ২৩ নিহত
গাজা সিটির সাবেক বাসিন্দা ইসমাইল জায়দা (৪০), তিন সন্তানের জনক, শুক্রবার সকালেই তার বাড়ি দেখতে যান। তিনি অবাক হন এই দেখে যে তার বাড়িটি এখনও অক্ষত আছে—যদিও তা ধ্বংসের সমুদ্রের মাঝে দাঁড়িয়ে। তিনি রয়টার্সকে এক ভয়েস নোটে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, আমার বাড়ি এখনও দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু এলাকাটি ধ্বংস হয়ে গেছে, আমার প্রতিবেশীদের বাড়ি ধ্বংস—পুরো জেলাগুলোই উধাও।
অনেকের কাছে তাদের সাবেক বাড়ির ধ্বংসাবশেষের কাছে ফিরে যেতে পারাও যথেষ্ট আনন্দের। ৪০ বছর বয়সী মাহদি সাকলা কেন্দ্রীয় গাজায় একটি অস্থায়ী তাঁবুর পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, অবশ্যই, কোনো বাড়ি নেই—সব ধ্বংস হয়ে গেছে—কিন্তু ধ্বংসস্তূপের ওপরে হলেও আমাদের পুরনো বাড়িতে ফিরে যেতে পেরে আমরা খুশি। এটাই অনেক বড় আনন্দ।
বিজ্ঞাপন
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের আক্রমণের পর ইসরায়েলের ব্যাপক আক্রমণে গাজার প্রায় ২২ লাখ জনসংখ্যার প্রায় সবাই বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। এই আক্রমণে ৬৭,০০০ এরও বেশি মানুষ নিহত হয় এবং গাজার বেশিরভাগ অংশই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। সূত্র: টিআরটি ওয়ার্ল্ডের।