গাজায় নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠীর উত্থান, হামাসের সঙ্গে সংঘাতে নিহত ৩৮

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে এক সশস্ত্র সংগঠন— ‘দগমোশ গোষ্ঠী’। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে হামাসের সঙ্গে এই দলের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গাজার বিভিন্ন এলাকা।
বিজ্ঞাপন
১০ অক্টোবর ইসরায়েলের ঘোষিত যুদ্ধবিরতির পর থেকে গাজার প্রধান শহর গাজা সিটিতে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন ৩৮ জন। এর মধ্যে ৩২ জন দগমোশ গোষ্ঠীর সদস্য এবং বাকি ৬ জন হামাসের যোদ্ধা বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, হামাসের একদল সশস্ত্র সদস্য হাঁটু গেড়ে বসা সাতজনকে গুলি করে হত্যা করছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েকজন বেসামরিক ফিলিস্তিনি ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি দিচ্ছিলেন। স্থানীয়রা দাবি করেছেন, নিহত ব্যক্তিরা ইসরায়েলি বাহিনীর সহযোগী ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর থেকে গাজায় আল কাসাম ব্রিগেড— হামাসের সামরিক শাখা—অস্থায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুমোদনেই এই ব্যবস্থা কার্যকর হয়। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, “হামাস আসলে সংঘাত থামাতে চায় না, কিন্তু আমরা কিছু সময়ের জন্য তাদের নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দিয়েছি।”
গাজা একসময় ছিল ফিলিস্তিনের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ফাতাহ এবং প্যালেস্টাইনিয়ান অথরিটি (পিএ)–এর নিয়ন্ত্রণে। তবে ২০০৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে হামাস ফাতাহকে সরিয়ে গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর থেকে ওই অঞ্চলে আর কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।
দীর্ঘদিনের কড়া নিয়ন্ত্রণে হামাসবিরোধীরা নীরব থাকলেও, চলতি বছর থেকে নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে বিরোধী গোষ্ঠীগুলো। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কয়েক মাস আগে বলেন, “গাজায় হামাসবিরোধী একাধিক গোষ্ঠী লড়ছে, যাদের সহায়তা দিচ্ছে ইসরায়েল।” যদিও তিনি কোনো গোষ্ঠীর নাম প্রকাশ করেননি, বিশ্লেষকদের মতে, তিনি দগমোশ গোষ্ঠীকেই ইঙ্গিত করেছিলেন।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: ‘আমরা কসাইখানায় ছিলাম, কারাগারে না’
দগমোশের নেতৃত্বে রয়েছেন ইয়াসের আবু শাবাব, যিনি গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত শহর রাফার বাসিন্দা। গোষ্ঠীটির যোদ্ধারা ২০২৪ সাল থেকে সক্রিয়ভাবে সদস্য সংগ্রহ শুরু করে এবং উচ্চ বেতনে শত শত যোদ্ধা দলে ভেড়ায়।
হামাসের দাবি, সাম্প্রতিক সংঘাতে নিহত হয়েছে ইয়াসের আবু শাবাবের ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা ও সংগঠক। তবে দগমোশ পক্ষ থেকে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিজ্ঞাপন
দগমোশের এক শীর্ষ সদস্য হুসাম আল-আস্তাল এক ভিডিওবার্তায় বলেন, “হামাসের সময় শেষ। তারা আর কোনো দিন গাজার ক্ষমতায় ফিরতে পারবে না।”
গাজার নতুন এই সংঘাতকে অনেকে দেখছেন যুদ্ধবিরতির পর ‘অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার লড়াই’-এর সূচনা হিসেবে।
সূত্র: রয়টার্স