সার্জারি ছাড়াই মাত্র কয়েক মিনিটেই জোড়া লাগবে ভাঙা হাড়!

ভাবুন তো—ভয়াবহ দুর্ঘটনায় হাত বা পা ভেঙে গেল; কিন্তু মাত্র কয়েক মিনিটেই সেই হাড় আবার জোড়া লেগে গেল এক বিশেষ আঠার সাহায্যে! শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও, চীনা বিজ্ঞানীরা এমনই এক যুগান্তকারী উদ্ভাবন করেছেন, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় যোগ করতে পারে।
বিজ্ঞাপন
এই আঠার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইড়হব-০২’ (BONE-02)। এটি এমন এক বোন গ্লু, যা ভাঙা হাড়কে মাত্র কয়েক মিনিটেই জোড়া লাগাতে সক্ষম—তা-ও কোনো জটিল সার্জারি ছাড়াই।
আরও পড়ুন: ভারতে নারীদের নামাজের পর ‘গোমূত্র শুদ্ধি’ নিয়ে তোলপাড়
ঝেজিয়াং ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের অধ্যাপক ফ্যান শুনউ ও ড. লিন শিয়ানফেং-এর নেতৃত্বে একটি গবেষক দল এই আঠা তৈরি করেছেন। এটি মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে ভাঙা হাড় মেরামত করতে পারে, যার জন্য কোনো রকম জটিল সার্জারির প্রয়োজন হবে না।
বিজ্ঞাপন
এই আঠার উদ্ভাবনের পেছনেও রয়েছে এক অদ্ভুত অনুপ্রেরণা । বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেন, সমুদ্রের ঢেউ আর নোনা জলের মধ্যেও ঝিনুক কীভাবে শক্তভাবে পাথর বা সেতুর স্তম্ভে আটকে থাকে। সেই প্রাকৃতিক নকশা মাথায় রেখেই গবেষকরা এমন এক আঠা তৈরি করেন, যা রক্তভেজা শরীরের ভেতরেও নিখুঁতভাবে কাজ করতে সক্ষম।
অধ্যাপক ফ্যান শুনউ জানান, একশো বছর ধরে বিজ্ঞানীরা হাড় জোড়া লাগানোর মতো আঠা তৈরির চেষ্টা করেও সফল হননি, কারণ তা হয় জৈবিকভাবে নিরাপদ থাকত না, নয়তো যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল না। কিন্তু ইড়হব-০২ দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যেই এমন শক্ত বন্ধন তৈরি করে, যা ১৮০ কিলোগ্রামেরও বেশি চাপ সহ্য করতে পারে। এমনকি একবার লাগলে হাতুড়ির আঘাতেও তা আলাদা করা প্রায় অসম্ভব।
আগে যেখানে হাড় জোড়া লাগাতে বড় করে কেটে স্ক্রু ও ধাতব প্লেট বসাতে হতো, এখন চিকিৎসকরা মাত্র দুই থেকে তিন সেন্টিমিটার ছোট একটি ছিদ্র করেই এই গ্লু ইনজেক্ট করতে পারেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই হাড় এমনভাবে জোড়া লাগে, দেখে মনে হয় যেন ভাঙেইনি কখনো।
বিজ্ঞাপন
আরও অবাক করা বিষয় হলো, এই আঠা ছয় মাসের মধ্যে শরীর নিজেই শোষণ করে নেয়। তখন হাড় পুরোপুরি সেরে ওঠে এবং আঠার কোনো চিহ্নই শরীরে থাকে না। ফলে দ্বিতীয়বার সার্জারির প্রয়োজন হয় না, খরচ ও সময়ও অনেক কমে আসে।
গবেষক দলের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ১৫০ জন রোগীর ওপর এই বোন গ্লু ব্যবহার করা হয়েছে, এবং ফলাফল ছিল আশানুরূপ।
বিজ্ঞাপন
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রযুক্তি দ্রুত হাড় জোড়া লাগিয়ে জীবনরক্ষায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে, বিশেষ করে দুর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়।