এবার ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান প্রভাবশালী ইহুদিদের

ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যার মতো কর্মকাণ্ডের জন্য দখলদার ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য জাতিসংঘ এবং বিশ্বনেতাদের প্রতি বিশেষ আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা প্রভাবশালী ইহুদিরা।
বিজ্ঞাপন
গাজা, অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলের আচরণের জবাবদিহিতার দাবিতে সম্প্রতি একটি খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন প্রাক্তন ইসরায়েলি কর্মকর্তা, অস্কার বিজয়ী, লেখক এবং বুদ্ধিজীবীসহ ৪৫০ জনেরও বেশি ইহুদি।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরও ইসরায়েলের ওপর ইইউ’র নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব স্থগিত রাখার পরিকল্পনার খবরের মধ্যে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ইইউ নেতাদের বৈঠকের সময় তাদের চিঠি প্রকাশ করা হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, আমরা ভুলে যাইনি যে, সকল মানবজীবনের সুরক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠিত অনেক আইন, সনদ এবং সম্মেলন হলোকস্টের প্রতিক্রিয়ায় তৈরি হয়েছিল। ইসরায়েল প্রতিনিয়ত এই সুরক্ষাগুলো নিরলসভাবে লঙ্ঘন করেছে।
বিজ্ঞাপন
চিঠিতে সই করা ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ইসরায়েলি পার্লামেন্টের প্রাক্তন স্পিকার আভ্রাহাম বার্গ, প্রাক্তন ইসরায়েলি শান্তি আলোচক ড্যানিয়েল লেভি, ব্রিটিশ লেখক মাইকেল রোজেন, কানাডিয়ান লেখক নাওমি ক্লেইন, অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা জোনাথন গ্লেজার, মার্কিন অভিনেতা ওয়ালেস শন, এমি বিজয়ী ইলানা গ্লেজার, হান্না আইনবাইন্ডার এবং পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী বেঞ্জামিন মোজারের মতো লোকেরা।
বিশ্বনেতাদেরকে তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে) এবং আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের রায় বহাল রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ করা, নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনে জড়িত হওয়া এড়াতে গাজায় পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা নিশ্চিত এবং শান্তি ও ন্যায়বিচারের পক্ষে কথা বলা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তথাকথিত ‘ইহুদি-বিদ্বেষের’ মিথ্যা দাবি প্রত্যাখ্যান করার আহ্বানও জানিয়েছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
চিঠিতে লেখা হয়েছে, অপূরণীয় দুঃখে আমরা মাথা নত করছি। কারণ প্রমাণ জমা হচ্ছে, ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড গণহত্যার আইনি সংজ্ঞা পূরণ করেছে।
গত কয়েক বছর ধরে মার্কিন ইহুদি ও ভোটারদের মধ্যে জনমতের তীব্র পরিবর্তনের পর এই চিঠিত এলো।
ওয়াশিংটন পোস্টের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৬১ শতাংশ মার্কিন ইহুদি বিশ্বাস করেন, ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধাপরাধ করেছে। ৩৯ শতাংশ বলেছেন, ইসরায়েল গণহত্যা করছে।
বিজ্ঞাপন
বৃহত্তর আমেরিকান জনসাধারণের মধ্যে ৪৫ শতাংশই বলেছেন, তারা বিশ্বাস করেন ইসরায়েল গণহত্যা করছে। অন্যদিকে গত আগস্টে করা একটি কুইনিপিয়াক জরিপে দেখা গেছে, মার্কিন ভোটারদের অর্ধেকই এই মতামত পোষণ করেন, যাদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ ডেমোক্র্যাট।
চিঠিতে সই করা প্রভাবশালী ইহুদিদের মধ্যে আরও রয়েছেন ইসরায়েলি কন্ডাক্টর ইলান ভলকভ, নাট্যকার ভি, আমেরিকান কৌতুকাভিনেতা এরিক আন্দ্রে, দক্ষিণ আফ্রিকার ঔপন্যাসিক ড্যামন গালগুট, অস্কারজয়ী সাংবাদিক ও তথ্যচিত্রকার যুবাল আব্রাহাম, টনি পুরস্কার বিজয়ী টবি মার্লো এবং ইসরায়েলি দার্শনিক ওমরি বোহম।
বিজ্ঞাপন
তারা চিঠিতে আরও বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আমাদের সংহতি ইহুদি ধর্মের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা নয়, বরং এর পরিপূর্ণতা। যখন আমাদের ধর্মীয় নেতারা শিখিয়েছিলেন যে, একটি জীবন ধ্বংস করা মানে সমগ্র বিশ্বকে ধ্বংস করা, তখন তারা ফিলিস্তিনিদের জন্য ব্যতিক্রম করেননি। এই দখলদারিত্ব এবং বর্ণবাদের অবসান না হওয়া পর্যন্ত আমরা বিশ্রাম নেব না।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি আহত হয়েছে। জাতিসংঘের অনুমান, জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ অভ্যন্তরীণভাবে কয়েকবার করে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
দুই মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন এবং জেফ মার্কলে গত মাসে এই অঞ্চলে একটি তথ্য-অনুসন্ধান মিশনের পর এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন, ইসরায়েল গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস এবং জাতিগতভাবে নির্মূল করার একটি পদ্ধতিগত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। সিনেটরদের মতে, এই কর্মকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রও জড়িত।
বিজ্ঞাপন
তাদের প্রতিবেদনে বেসামরিক অবকাঠামোর প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস, খাদ্যের অস্ত্রায়ন এবং মানবিক সাহায্য সরবরাহে পদ্ধতিগত বাধার বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।
গত ১০ অক্টোবর হওয়া যুদ্ধবিরতি বারবার লঙ্ঘনের কারণে অনেকটাই ভেঙে পড়েছে। ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, ইসরায়েল গত ১১ দিনে ৮০ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে এবং কমপক্ষে ৮০ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।
বিজ্ঞাপন
চিঠিতে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতিতে পশ্চিম তীরের কোনো উল্লেখ নেই। সেখানে বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। দখলদারিত্বের অন্তর্নিহিত শর্তগুলো এখনো সমাধান করা হয়নি।
জাতিসংঘের মানবিক কার্যালয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, এই বছর পশ্চিম তীরে হামলায় ৩ হাজার ২০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। জাতিসংঘ অক্টোবরের এক সপ্তাহে বসতি স্থাপনকারীদের ৭১টি হামলা নথিভুক্ত করেছে। সূত্র: খবর দ্য গার্ডিয়ান।