Logo

হাসিনার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আগ্রহী বাংলাদেশ, বড় বাধা ভারত

profile picture
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৪ নভেম্বর, ২০২৫, ১১:৪৭
12Shares
হাসিনার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আগ্রহী বাংলাদেশ, বড় বাধা ভারত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘোষিত মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে পদক্ষেপ নিতে চায় ঢাকা। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সম্প্রতি ট্রাইব্যুনাল তার অনুপস্থিতিতেই এই রায় ঘোষণা করে। তবে রায় কার্যকর করার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিবেশী ভারত— এমনটাই জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের একটি বিশদ প্রতিবেদন।

বিজ্ঞাপন

গত শনিবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, একসময় ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীক এবং স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা হিসেবে পরিচিত ছিলেন শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালের নৃশংস ঘটনায় পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর থেকেই তার রাজনৈতিক যাত্রা দুঃখ, আন্দোলন ও ক্ষমতার টানাপোড়েনে ভরা। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে তিনি ভারতে পালিয়ে আশ্রয় নেন, যা তার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে নাটকীয় অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

সিএনএন জানায়, শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে হলে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে হবে। কিন্তু ভারত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কিনা— তা নিয়ে রয়েছে বড় অনিশ্চয়তা। ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তি ‘রাজনৈতিক অপরাধে’ কাউকে ফেরত না দেওয়ার সুযোগ দেয়, আর দিল্লি সম্ভবত সেই যুক্তিই অনুসরণ করতে পারে।

বিজ্ঞাপন

ভারতের সাবেক কূটনীতিক অনিল ত্রিগুনায়েতকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। কারণ ভারত এ ঘটনাকে রাজনৈতিক বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মোকাবিলা হিসেবে দেখতে পারে। পাশাপাশি আইনগত দিক থেকেও হাসিনার সামনে এখনো আপিলের পথ খোলা রয়েছে— সুপ্রিম কোর্ট থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক আদালত পর্যন্ত।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল— ছাত্র আন্দোলন দমনে হত্যার নির্দেশ, ফাঁসির আদেশ এবং সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে সহিংস অভিযান চালানোর অনুমোদন দেওয়া। আদালতের রায় ঘোষণার পর নিহত আন্দোলনকারীদের পরিবার রায়কে ‘আংশিক শান্তি’ হিসেবে দেখছেন এবং দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি তুলছেন।

রায় ঘোষণার পরদিন বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে আবারও অনুরোধ জানিয়েছে তাকে ফেরত পাঠানোর জন্য। ঢাকার যুক্তি— “ভারতের নৈতিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ব” হলো তাকে ফিরিয়ে দেওয়া।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনার জীবনগাথা বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ১৯৮১ সালে নির্বাসন শেষে দেশে ফিরে তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ধরে রাখার লড়াই করেন এবং তিন মেয়াদে মোট ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। এ সময়ে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও বাড়তে থাকে। বিশেষ করে ক্ষমতার শেষ দিকে তার সরকারকে ‘একদলীয় শাসন’-এর দিকে ধাবিত হওয়ার অভিযোগে সমালোচনা করা হয়।

সরকারি চাকরির কোটা সংস্কার আন্দোলন দ্রুত সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। কঠোর দমন-পীড়নে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হলেও আন্দোলন থামেনি; বরং তা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত তার সরকার পতন ঘটে, এবং তিনি দেশ ছাড়েন— যা অনেক বিশ্লেষকের মতে “অপরাধ স্বীকারের ইঙ্গিতস্বরূপ”।

বিজ্ঞাপন

আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড দেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়া ও নেতৃত্বহীন অবস্থায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নতুনভাবে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার সুযোগ পাচ্ছে।

নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এখন গভীর রাজনৈতিক বিভাজন দূর করার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগ ভবিষ্যতে রাজনীতিতে ফিরলেও সেটি আর শেখ হাসিনাকে কেন্দ্র করে হবে না।

সিএনএন প্রশ্ন তুলেছে— শেখ হাসিনার পতন কি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক অস্থির অধ্যায়ের সমাপ্তি, নাকি এর মাধ্যমে শুরু হলো নতুন অনিশ্চয়তার সময়?

জেবি/এএস
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD