Logo

সুদানে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ওপর ভয়াবহ হামলা চালাল কারা?

profile picture
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:৫৬
14Shares
সুদানে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ওপর ভয়াবহ হামলা চালাল কারা?
ছবি: সংগৃহীত

সুদানের আবেই অঞ্চলে ড্রোন হামলায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। তারা জাতিসংঘের অন্তর্বর্তী নিরাপত্তা বাহিনী আবেই (ইউনিএসএফএ)-এর সদস্য ছিলেন। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) এই মর্মান্তিক হামলার ঘটনা ঘটে।

বিজ্ঞাপন

সুদানের চলমান গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দেশটির সেনা-নিয়ন্ত্রিত সরকার এক বিবৃতিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানায়। বিবৃতিতে দাবি করা হয়, প্যারামিলিটারি বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ) ড্রোন ব্যবহার করে শান্তিরক্ষীদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।

সুদানের সেনাপ্রধান ও কার্যত রাষ্ট্রপ্রধান জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এ ঘটনাকে ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক উত্তেজনা সৃষ্টিকারী পদক্ষেপ’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলা আন্তর্জাতিক শান্তি প্রচেষ্টাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

বিজ্ঞাপন

আরএসএফ হলো সেই বাহিনী যারা দেশটির এল-ফেশার শহরে ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়ে একদিনে দুই হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করেছিল।

তবে আরএসএফ হামলার দায় অস্বীকার করেছে। গতকাল শনিবার টেলিগ্রামে এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, শান্তিরক্ষীদের ওপর ড্রোন দিয়ে হামলা চালানোর যে দায় তাদের দেওয়া হচ্ছে এটি মিথ্যা।

ক্ষমতার দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদানের সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত শুরু হয়। সেই সংঘর্ষ ধীরে ধীরে পূর্ণমাত্রার গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। এতে এখন পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষের প্রাণ গেছে এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আরএসএফকে সরাসরি অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে সংযুক্ত আরব আমিরাত। এল-ফেশারে ভয়াবহ গণহত্যা চালানোর পর তাদের নৃসংশতা জনসম্মুখে আসে।

• সুদানে গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত কীভাবে?

২০১৯ সালে সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। তিনি ১৯৮৯ সালে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছিলেন।

বিজ্ঞাপন

ওই বছর তার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসেন সাধারণ মানুষ। এরপর সেনাবাহিনী অভ্যুত্থান ঘটিয়ে তার তিন দশকের শাসনের অবসান ঘটায়। কিন্তু দেশটিতে গণতন্ত্র ফেরেনি। যেটির জন্য মানুষ এখনো সংগ্রাম করছেন।

২০১৯ সালে একটি সেনা-বেসামরিক যৌথ সরকার গঠন করা হয়। ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে এ সরকারকেও ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।

• অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে কারা?

বিজ্ঞাপন

ওই অভ্যুত্থানের সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। যিনি সুদানের সেনাপ্রধান একইসঙ্গে ডি ফ্যাক্টো প্রেসিডেন্ট।

আরেকজন হলেন আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো। তিনি ‘হামেদতি’ নামে বেশি পরিচিত।

কিন্তু এই অভ্যুত্থানের পর তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। দেশ কিভাবে চলবে এবং বেসামরিক সরকার গঠন নিয়ে তাদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেয়।

বিজ্ঞাপন

তাদের দুজনের মধ্যে সবচেয়ে বড় দ্বন্দ্বের বিষয় ছিল আরএসএফের শক্তিশালী এক লাখ সদস্যকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে। আরএসএফ সেনাদের মূল সেনাবাহিনীতে যুক্ত করার পর তাদের নেতৃত্ব কে দেবে? এ নিয়ে তাদের মধ্যে ব্যাপক দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

এই দুই জেনারেলের কেউই ক্ষমতা, সম্পদ, আধিপত্য কিছু ছাড়তে চাননি।

টানা কয়েকদিনের ব্যাপক উত্তেজনার মধ্যে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। এর জেরে দেশব্যাপী আরএসএফ সেনাদের মোতায়েন করা হয়। যেটিকে সেনাবাহিনী নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে নেয়।

বিজ্ঞাপন

কোন পক্ষ প্রথম গুলি ছুড়েছিল সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। তবে খুব দ্রুত সশস্ত্র লড়াই সুদানজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এরমধ্যে আরএসএফ রাজধানী খারতুমের বেশিরভাগ অংশ দখল করে ফেলে। টানা দুই বছর লড়াইয়ের পর সেনাবাহিনী ২০২৫ সালের মার্চে আবারও খারতুমের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়।

আরএসএফ কারা?

২০১৩ সালে গঠিত আরএসএফ মূলত কুখ্যাত জানজউইদ মিলিশিয়া থেকে উদ্ভূত। দারফুর অঞ্চলে বিদ্রোহ দমনের সময় তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের অভিযোগ ওঠে।

বিজ্ঞাপন

দারফুরের বিদ্রোহীদের দমন ও নতুন বাহিনী প্রতিষ্ঠার পর থেকে আরএসএফ প্রধান জেনারেল দাগলো একটি শক্তিশালী বাহিনী গঠন করেন। যেটি ইয়েমেন এবং লিবিয়াতেও সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিয়েছে।

আরএসএফ প্রধান সুদানের কিছু সোনার খনির নিয়ন্ত্রণ করেন। এখানকার সোনা সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাচার করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সুদানের সেনাবাহিনীর অভিযোগ, আরএসএফকে সহায়তা করে আরব আমিরাত। এছাড়া আমিরাত সরাসরি সুদানে ড্রোন হামলাও চালিয়েছে। যদিও আমিরাত এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

এছাড়া পশ্চিম লিবিয়ার শক্তিশালী মানুষ জেনারেল খলিফা হাফতারও আরএসএফকে সহায়তা করে বলে অভিযোগ সুদানের সেনাবাহিনীর। তাদের দাবি, আরএসএফকে অস্ত্র; এমনকি সেনা দিয়েও সহায়তা করেন খলিফা হাফতার।

২০২৫ সালের জুনের শুরুতে আরএসএফ লিবিয়া এবং মিসর সীমান্তর্বর্তী সুদানের বিশাল সীমান্ত এলাকা দখল করে। যা তাদের জন্য বড় জয় ছিল।

বিজ্ঞাপন

এরপর তারা অক্টোবরের শেষ দিকে দখল করে এল-ফাশার। যার অর্থ দারফুরের বেশিরভাগ এবং এর পার্শ্ববর্তী কোরদোফান অঞ্চল আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

আরএসএফ এসব জায়গায় বিদ্রোহী সরকার গঠন করেছে। যার অর্থ সুদান আবারও দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে। এরআগে ২০১১ সালে দক্ষিণ সুদান নামে আলাদা একটি দেশের জন্ম হয়। যেখানে সুদানের বেশিরভাগ তেলক্ষেত্র গুলো ছিল।

সূত্র: রেডিওতামাজুজ, বিবিসি

জেবি/এসডি
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD