হয়তো জানতেও পারবো না, মা কবে মারা গেছেন : সু চির ছেলে

মিয়ানমারের কারাবন্দী গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী ও নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অং সান সু চির শারীরিক অবস্থার অবনতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তার ছেলে কিম আরিস। দীর্ঘদিন ধরে মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, হয়তো জানারও সুযোগ পাবেন না—তার মা কবে মারা গেছেন।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স–কে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে কিম আরিস জানান, ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে ৮০ বছর বয়সী সু চির বিষয়ে কেবল বিচ্ছিন্ন ও পরোক্ষ কিছু তথ্যই তিনি পেয়েছেন। হৃদ্যন্ত্র, হাড় ও মাড়ির সমস্যাসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগলেও তাকে দেখতে বা সরাসরি যোগাযোগের কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি।
জাপানের রাজধানী টোকিওতে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কিম আরিস বলেন, দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে কেউ তাকে দেখেনি। তার আইনজীবীদের সঙ্গেও যোগাযোগের অনুমতি নেই। পরিবার তো দূরের কথা। আমার জানা মতে, তিনি ইতোমধ্যে মারা গেছেন—এমনও হতে পারে।
চলতি মাসের শেষ দিকে মিয়ানমারে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন প্রসঙ্গে কিম আরিস বলেন, সামরিক জান্তার এই নির্বাচন একটি সাজানো প্রক্রিয়া হলেও, এটি তার মায়ের দুর্দশা লাঘবের ক্ষুদ্র একটি সুযোগ তৈরি করতে পারে। তবে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এই নির্বাচনকে সামরিক শাসনকে বৈধতা দেওয়ার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, আমার মনে হয়, মিন অং হ্লেইংয়ের (জান্তা প্রধান) নিজস্ব রাজনৈতিক এজেন্ডায় আমার মাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখে বা পরে তাকে মুক্তি কিংবা গৃহবন্দী করলেও অন্তত কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যেত।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলেও মিয়ানমারের জান্তার কোনো মুখপাত্র সাড়া দেননি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। তবে দেশটির সামরিক ইতিহাসে জাতীয় দিবস বা গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনার সময় বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার নজির রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের নির্বাচনের পর অং সান সু চি দীর্ঘ গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তি পান এবং ২০১৫ সালের নির্বাচনের পর তিনি মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো নেতা হন। ওই নির্বাচনকে কয়েক দশকের মধ্যে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হিসেবে দেখা হয়। তবে রোহিঙ্গা সংকটের কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিজ্ঞাপন
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমার ভয়াবহ অস্থিতিশীলতার মধ্যে রয়েছে। নির্বাচনী অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতিসহ একাধিক অভিযোগে সু চিকে ২৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। যদিও তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
কিম আরিস জানান, সর্বশেষ চিঠিতে তার মা কারাগারের কক্ষে গ্রীষ্ম ও শীত—দুই মৌসুমেই চরম তাপমাত্রার কথা উল্লেখ করেছিলেন। তার বিশ্বাস, সু চিকে রাজধানী নেপিদোতেই আটক রাখা হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে নানা সংঘাতের কারণে মিয়ানমারের সংকট আন্তর্জাতিক মনোযোগ হারাচ্ছে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। এজন্য আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে জাপানসহ বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতি জান্তার ওপর আরও চাপ সৃষ্টি ও তার মায়ের মুক্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
মাকে নিয়ে এই আন্দোলন সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে কিম আরিস বলেন, আমার মনে হয়, তিনি খুব কষ্ট পেতেন যে আমাকে এসব করতে হচ্ছে। তিনি সবসময়ই চেয়েছেন, আমি যেন রাজনীতিতে না জড়াই। কিন্তু এখন আমার আর কোনো বিকল্প নেই। শেষ পর্যন্ত আমি তার ছেলে।
সূত্র: রয়টার্স








