রাজবাড়ী জেলার হত্যাকাণ্ড নিয়ে যা জানাল ভারত

রাজবাড়ী জেলায় চাঁদাবাজির সময় উত্তেজিত জনতার সঙ্গে সংঘর্ষে এক হিন্দু ব্যক্তি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত সরকার। এই ঘটনাকে ‘উদ্বেগজনক’ আখ্যা দিয়ে নয়াদিল্লি সতর্ক করে বলেছে, এ ধরনের সহিংসতা উপেক্ষা করা যায় না।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) নয়াদিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল ওই মন্তব্য করেন।
রণধীর জয়সওয়াল বলেন, সীমান্তের ওপারের ঘটনাপ্রবাহকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েছে নয়াদিল্লি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এসব হামলার ঘটনাকে হালকাভাবে নেওয়া যায় না। এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দায়ীদের শনাক্ত করে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ শাস্তির আওতায় আনবে বলে প্রত্যাশা প্রকাশ করেছে।
আরও পড়ুন: ইয়েমেনে বিমান হামলা চালিয়েছে সৌদি আরব
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত। আমরা এসব ঘটনা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের অবস্থান কী ছিল কিংবা কী হওয়া উচিত এবং বর্তমানে কী—সে বিষয়ে আমি আপনাদের সময় সময় জানিয়ে আসছি। বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধসহ সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বৈরী আচরণ অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র বলেন, ‘‘আমরা ময়মনসিংহে সাম্প্রতিক এক হিন্দু যুবককে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনার নিন্দা জানাই এবং প্রত্যাশা করি, অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হবে। স্বতন্ত্র সূত্র অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদকালে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড, অগ্নিসংযোগ ও ভূমি দখলসহ ২ হাজার ৯০০টির বেশি সহিংসতার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। এসব ঘটনাকে কেবল গণমাধ্যমের বাড়াবাড়ি বলে উড়িয়ে দেওয়া কিংবা রাজনৈতিক সহিংসতা হিসেবে বাতিল করা যায় না।’’
রাজবাড়ীতে কী ঘটেছে?
বিজ্ঞাপন
রাজবাড়ীর পাংশা থানায় বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে সংঘটিত একটি দুঃখজনক হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যম বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয় বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। এই ঘটনাটি সাম্প্রদায়িক হামলা নয় বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পাঠানো বিবৃতিতে রাজবাড়িতে গণপিটুনিতে নিহতের ঘটনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে। পুলিশের তথ্য ও প্রাথমিক তদন্ত থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, ঘটনাটি মোটেই সাম্প্রদায়িক হামলা নয়। এটি চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত সহিংস পরিস্থিতির থেকে সৃষ্ট ঘটনা।
বিজ্ঞাপন
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নিহত ব্যক্তি শীর্ষ সন্ত্রাসী অমৃত মণ্ডল ওরফে সম্রাট চাঁদা দাবির উদ্দেশ্যে এলাকায় উপস্থিত হন এবং বিক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতার সঙ্গে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে প্রাণ হারান। তিনি ইতিপূর্বে ২০২৩ সালে রুজুকৃত হত্যা এবং চাঁদাবাজির মামলাসহ একাধিক গুরুতর মামলার আসামি ছিলেন। এসব মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও রয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল হতে সম্রাটের সহযোগী সেলিমকে একটি বিদেশী পিস্তল ও ১টি পাইপগানসহ আটক করে। এই ঘটনায় ইতোমধ্যে তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে।
‘‘এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরকার কঠোর নিন্দা জানায়। সরকার সুস্পষ্টভাবে জানাতে চায়, যে কোনো ধরনের আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড, গণপিটুনি বা সহিংসতা সরকার কোনোভাবেই সমর্থন করে না। এ ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। একইসঙ্গে সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, একটি মহল নিহত ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয়কে সামনে এনে ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসদুদ্দেশ্য প্রণোদিত। এ ধরনের অপপ্রচার সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।’’
বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানাচ্ছে এবং বিভ্রান্তিকর, উসকানিমূলক ও সাম্প্রদায়িক বক্তব্য প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ—এ দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার কোনো যে কোনো অপচেষ্টা সরকার কঠোরহস্তে দমন করবে। সূত্র: এনডিটিভি।








