গায়ের কাপড় ছাড়া কিছুই রইল না: কড়াইল বস্তিতে আর্তনাদ

রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর পুরো এলাকাজুড়ে এখন হাহাকার আর অসহায়ত্বের চিত্র। আগুনে পুড়ে গেছে শত শত ঘর-বসতি, পথে বসেছে হাজারো মানুষ। আলোর লেলিহান শিখা মুহূর্তেই বহু পরিবারের স্বপ্ন, সঞ্চয় ও আশ্রয় ছাই করে দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বস্তিবাসীর কণ্ঠে একটাই আর্তনাদ— “গায়ের কাপড় ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নাই, সব পুড়ছে ছাই হয়ে গেছে।”
বুধবার (২৬ নভেম্বর) বৌবাজার ক-ব্লকে গিয়ে দেখা যায়, আগুনে কালো হয়ে যাওয়া টিন, বাঁশ আর ভস্মীভূত সামগ্রীর স্তূপের পাশে অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে মানুষ। তাদের চোখেমুখে নিঃস্বতার গভীরতা।
বিজ্ঞাপন
বৌবাজার এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মান্নান ভস্মীভূত ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার গায়ের কাপড় ছাড়া কিছুই নাই। ছোট্ট দোকান চালাতাম, সেই দোকানের পয়সা আর ঘরে থাকা সব সঞ্চয়—টিভি, ফ্রিজ, ছেলেমেয়েদের সার্টিফিকেট সবকিছু আগুনে শেষ। কী করে চলব এখন?
তার মতো আরও অসংখ্য পরিবার খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে। কেউ জমিয়ে রাখা টাকার অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছেন না, কেউ সার্টিফিকেট-নথি হারিয়ে দিশেহারা।
বৃদ্ধা রহিমা বেগম জানান, ছেলের চিকিৎসার জন্য টাকা জমাইছিলাম। একটা টিনের বাক্সে রাখছিলাম। এখন ছাইয়ের নিচ থেকেও পাইনি। আজও না খেয়ে আছি। সরকারের সাহায্য দরকার।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে বস্তির বৌবাজার অংশের একটি ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ঘিঞ্জি এলাকা এবং শুকনো আবহাওয়ার কারণে আগুন দ্রুতই আশপাশের ঘরে ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। কিন্তু সরু ভেতরপথ ও পানির স্বল্পতার কারণে তাদের তীব্র ভোগান্তিতে পড়তে হয়। জরুরি ভিত্তিতে লেক থেকে পাইপ টেনে পানি এনে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা লড়াইয়ের পর রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।
বিজ্ঞাপন
ঘর-বসতি উজাড় হয়ে যাওয়ায় হাজারো মানুষ রাত কাটাচ্ছে অবরুদ্ধ ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সামনে। অনেকেরই হাতে নেই খাবার, মাথার ওপর ছাদও নেই। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এখন ত্রাণ ও পুনর্বাসনের অপেক্ষায়।
কড়াইল বস্তির এই অগ্নিকাণ্ড আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে নগরীর বস্তিগুলোর অরক্ষিত বাস্তবতা এবং জরুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি।








