Logo

মুক্তিবাহিনীর ভয়ে ভারতীয় সেনার কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তান

profile picture
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১৮:৫৫
5Shares
মুক্তিবাহিনীর ভয়ে ভারতীয় সেনার কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তান
ফাইল ছবি

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের সকালে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় যৌথ বাহিনী ঢাকার মিরপুর ব্রিজ এলাকায় পৌঁছালে পাকিস্তানি সেনাদের জন্য যুদ্ধের পরিণতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সেখান থেকেই পাকিস্তানি বাহিনীর তৎকালীন প্রধান নিয়াজির কাছে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়। ওই সময় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তানি বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জরুরি বৈঠক চলছিল। পরিস্থিতি পর্যালোচনা শেষে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং জেনারেল জামসেদের মাধ্যমে জবাব পাঠানো হয়।

বিজ্ঞাপন

এরপর আত্মসমর্পণের শর্ত ও আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে আলোচনা করতে ভারতীয় ও মুক্তিবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ক্যান্টনমেন্টে যান। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী এই আলোচনায় নিয়াজির প্রত্যাশা ছিল, আত্মসমর্পণের দলিলটি যেন যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল জেনারেলকে দেওয়া যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের আদলে হয়। তবে বাস্তবতা ছিল ভিন্ন।

সাবেক আমলা হাসান জহির তার সেপারেশন অব ইস্ট পাকিস্তান গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, পাকিস্তানি সেনারা ‘আত্মসমর্পণ’ শব্দটি ব্যবহার এড়িয়ে যেতে মরিয়া ছিল। একইভাবে জে এফ আর জ্যাকব তার সারেন্ডার অ্যাট ঢাকা বইয়ে লিখেছেন, আত্মসমর্পণ সংক্রান্ত দলিলের খসড়া তিনিই প্রস্তুত করেছিলেন।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানী ও উপপ্রধান সেনাপতি এ কে খন্দকারকে ডাকার নির্দেশ দেওয়া হলেও জেনারেল নিয়াজি বাঙালিদের কাছে আত্মসমর্পণে কোনোভাবেই রাজি হননি। এর পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তার ভাষ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানি বাহিনী দুটি কারণে মুক্তিবাহিনীর কাছে পরাজয় স্বীকার করতে চায়নি—একদিকে ছিল নিরাপত্তার ভয়, অন্যদিকে ছিল মানসম্মানের প্রশ্ন। তারা আশঙ্কা করেছিল, বাঙালিদের কাছে আত্মসমর্পণ করলে জনতার ঘেরাওয়ে পড়ে দেশে ফেরত যাওয়া কঠিন হবে। পাশাপাশি পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের কাছে হার মানাকে তারা চরম লজ্জাজনক বলে মনে করেছিল।

সব আলোচনা শেষে আত্মসমর্পণের দলিল চূড়ান্ত হলে দুই পক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যান। সেখানে ঢাকা ক্লাব থেকে আনা সাধারণ টেবিল ও চেয়ারেই আয়োজন করা হয় ঐতিহাসিক সাক্ষর অনুষ্ঠান। ‘ইন্সট্রুমেন্ট অব সারেন্ডার’ শীর্ষক দলিলে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়—বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীসহ সব আধাসামরিক ও বেসামরিক বাহিনী ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করবে। যেখানেই অবস্থান করুক, সবাইকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার অধীনস্থ নিকটবর্তী বাহিনীর কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

দলিলে স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপস্থিত লাখো মানুষের মধ্যে আনন্দের বিস্ফোরণ ঘটে। বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব জামান স্মৃতিচারণে বলেন, স্বল্প সময়ের নোটিশেই আত্মসমর্পণের পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাই ছিল দায়িত্ব। তিনি জানান, আলোচনার সময় পাকিস্তানি পক্ষ স্পষ্টভাবে বলেছিল, তারা কেবল একটি ‘অফিশিয়াল আর্মি’র কাছেই আত্মসমর্পণ করবে। খোলা আকাশের নিচে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সেই আত্মসমর্পণই বাংলাদেশের গৌরবময় ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে।

পরবর্তীতে ১৯ ডিসেম্বর ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের গলফ মাঠে পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র জমা দেয়। সেদিন ঢাকার প্রতিটি অলিতে-গলিতে বিজয়ের উচ্ছ্বাসে মানুষ একসঙ্গে হাসছিল ও কাঁদছিল। সেই হাসি-কান্নার আড়ালে ছিল স্বাধীনতার জন্য অগণিত প্রাণের ত্যাগ, যা আজও জাতির ইতিহাসে অমলিন হয়ে আছে।

জেবি/এএস
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD