বেগম জিয়ার মৃত্যুতে যুক্তরাজ্য-ফ্রান্স ও জার্মানির শোক

বিএনপি চেয়ারপারসন ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) পৃথকভাবে দেশগুলোর পক্ষ থেকে এই শোকবার্তা জানানো হয়।
ঢাকাস্থ যুক্তরাজ্যের দূতাবাস তাদের এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত শোকবার্তায় জানায়, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু সংবাদে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। এই অত্যন্ত দুঃখজনক মুহূর্তে আমরা তার পরিবার, বন্ধু এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।
বিজ্ঞাপন
ঢাকাস্থ ফ্রান্স দূতাবাসের এক্স অ্যাকাউন্টে (সাবেক টুইটার) দেওয়া শোকবার্তায় জানায়, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের প্রথম নারী সরকারপ্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশে অবস্থিত ফরাসি দূতাবাস গভীর শোক প্রকাশ করছে। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে, বেগম জিয়া বাংলাদেশের জাতীয় জীবন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। শোকের এই সময়ে ফ্রান্স তার পরিবার, দল এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছে। তার লিগ্যাসি স্মরণ করা হবে।
এ ছাড়া এক্স ও ফেসবুকে দেওয়া শোকবার্তা জার্মানি জানায়, বাংলাদেশের প্রথম ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, সাবেক ফার্স্ট লেডি এবং দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে জার্মান দূতাবাস গভীর শোক প্রকাশ করেছে।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। জার্মানি কয়েক দশক ধরে তার সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে সম্পৃক্ততার কথা স্মরণ করেছে। এরমধ্যে রয়েছে ২০০৪ সালে তৎকালীন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জশকা ফিশারের ঢাকা সফরকালে তার সঙ্গে বৈঠক, পাশাপাশি ২০১১ সালে জার্মান প্রেসিডেন্ট ক্রিশ্চিয়ান ভুলফের রাষ্ট্রীয় সফরের সময় তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে জার্মানির ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিদের সঙ্গে আরো একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এই শোকের মুহূর্তে জার্মানি জাতীয় জীবনে বেগম খালেদা জিয়ার অবদানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে এবং তাঁর পরিবার, দল ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে। জার্মানি দুই দেশের মধ্যকার দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। তিনি শান্তিতে বিশ্রাম নিক।
এর আগে, ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সকাল ৬টায় খালেদা জিয়ার মৃত্যু হয় (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বেগম জিয়ার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নেতারা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া সাত দিন শোক পালনের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি।
বিজ্ঞাপন
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের টানা ১৬ বছরের শাসনামলে বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন কারাভোগ ও রাজনৈতিক নির্যাতনের শিকার হন। পর্যাপ্ত চিকিৎসার সুযোগ না পাওয়ায় তিনি ধীরে ধীরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। করোনাকালে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পেলেও তাকে গুলশানের ভাড়া বাসভবন ‘ফিরোজা’য় সীমাবদ্ধ রাখা হয়।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে চিকিৎসা না পাওয়ায় ধীরে ধীরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয় খালেদা জিয়ার।
বিজ্ঞাপন
এরমধ্যে ২০২৪ সালের জুলাইতে কোটা সংস্কার আন্দোলন দাবিতে দেশজুড়ে শুরু হয় আন্দোলন, যা শেষ পর্যন্ত সরকার পতনের আন্দোলনে গড়ায়। টানা ৩৫ দিনের রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে পর ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যায় শেখ হাসিনা। পরদিন ৬ আগস্ট খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। ১১৭ দিন লন্ডনে অবস্থান শেষে গত ৬ মে তিনি দেশে ফেরেন। তার স্বাস্থ্যের অনেকটা উন্নতি হয়েছিল। তবে নানা রোগে জটিলতা ও শরীর–মনে ধকল সহ্য করে তিনি দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। বয়সও ছিল প্রতিকূল। প্রায়ই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়তেন। হাসপাতালে ভর্তি করানো হতো।
সবশেষে গত ২৩ নভেম্বর তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। এক মাসের কিছু বেশি সময় তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন।








