শতকোটি টাকার প্রতারণা করে ধরা পড়ল ৮০ মামলার আসামি সাধু

দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেনের নামে কয়েকশ কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগে আলোচনায় এসেছেন মহাদেব চন্দ্র সাধু নামের এক ব্যক্তি। জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে ৮০টি প্রতারণার মামলা রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বুধবার চুয়াডাঙ্গা আদালতে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা এক মামলার শুনানি হয়। শুনানি শেষে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মহাদেব চন্দ্র সাধুর জামিন আবেদন নাকচ করেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মহাদেব চন্দ্র সাধুর বাড়ি মাগুরা জেলায়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন। বিশেষ করে বাকিতে পণ্য কিনে পরে টাকা না পরিশোধ করাই ছিল তার প্রধান কৌশল।
বিজ্ঞাপন
মামলার বাদী লিটন কুমার আইচ জানান, প্রায় এক বছর আগে মহাদেবের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। প্রথম দিকে নগদ টাকায় লেনদেন করে তিনি বিশ্বাস অর্জন করেন। পরে ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকার ভুট্টা মহাদেব কিনে নেয়, যার মধ্যে ৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা পরিশোধ করলেও বাকি থাকে ২ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
একইভাবে ঢাকার ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন রতনের কাছেও ১৭ কোটি টাকার বেশি বকেয়া রেখে দেন মহাদেব। দুইজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকেই তিনি মোট প্রায় ১৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকার পণ্য নিয়ে উধাও হন।
বাদী লিটন কুমার আইচ বলেন, আমি পাঁচ মাস তার সঙ্গে ব্যবসা করেছি। এখন আমাকেই অন্য ব্যবসায়ীদের টাকা শোধ করতে হচ্ছে। তারা আমার বাড়িতে ভাঙচুর করেছে, স্ত্রীর গয়না পর্যন্ত নিয়ে গেছে। হতাশায় দুইবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছি। এখন শুধু ন্যায়বিচার চাই।
বিজ্ঞাপন
তার দাবি, মহাদেব চন্দ্র সাধু ও তার সহযোগীরা দেশজুড়ে একটি প্রতারণা চক্র গড়ে তুলেছেন, যারা বড় ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে কোটি কোটি টাকার মালামাল বাকিতে কিনে পরে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী আল মামুন রাসেল বলেন, মহাদেব চন্দ্র সাধু সাতক্ষীরা অঞ্চলে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে ‘সাধু’ পরিচয়ে অপরাধের সাম্রাজ্য চালিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তোলা নিজের ছবি ব্যবহার করে ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করাতেন। কয়েকবার আগাম টাকা দিয়ে বিশ্বাস অর্জন করতেন, এরপর কোটি টাকার অর্ডার নিয়ে উধাও হয়ে যেতেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও জানান, মহাদেবের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় অন্তত ৮০টি মামলা রয়েছে। আদালত প্রাথমিকভাবে ডকুমেন্ট যাচাই করে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন।
বাদীপক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট সেলিম উদ্দিন খানসহ একাধিক আইনজীবী। আসামি পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট তুহিন আহমেদ।
আইনজীবীরা জানান, মহাদেব সাধু উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়ীদের নাম ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি ব্যবহার করে বিশ্বাসযোগ্য পরিচয় তৈরি করতেন। তিনি প্রথমে অল্প অঙ্কের টাকা নগদ পরিশোধ করতেন, পরে বিপুল পরিমাণ পণ্য অর্ডার করে পেমেন্ট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতেন। পণ্য হাতে পেলেই ফোন বন্ধ করে অদৃশ্য হয়ে যেতেন।
বিজ্ঞাপন
বর্তমানে বিভিন্ন জেলায় তার বিরুদ্ধে শতাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ জমা দিয়েছেন, এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার অতীত লেনদেনের নথি খতিয়ে দেখছে।
আদালত সূত্র বলছে, প্রতারণা প্রমাণিত হলে মহাদেব চন্দ্র সাধুর বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অপরাধ আইনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।








