দুদকের জালে ফেঁসে গেলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি হামিদ

পতিত আওয়ামী সরকারের সময় টানা ১০ বছর রাষ্ট্রপতি থাকা সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে নিজের নিকুঞ্জ-১ আবাসিক এলাকায় সাজসজ্জা ও সৌন্দর্যবর্ধনের নামে রাষ্ট্রের ২৪ কোটি টাকা ক্ষতিসাধনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে তা আমলে নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে দুর্নীতি মামলায় দুদকের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। এ পরিপ্রেক্ষিতে আবদুল হামিদ দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি, যিনি দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধানে জড়িত।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, নিকুঞ্জ-১ আবাসিক এলাকায় সাজসজ্জা ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ২৪ কোটি টাকা ক্ষতি এবং ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য অবৈধ সম্পদ অর্জন করা হয়েছে। নিকুঞ্জের লেকড্রাইভ রোডের ৬ নম্বর প্লটে তার তিন তলাবিশিষ্ট ডুপ্লেক্স বাড়ি অবস্থিত, যেখানে রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষে তিনি উঠেছিলেন। যদিও ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর সেই বাসা ছেড়ে দেন।
বিজ্ঞাপন
রাজউকের তথ্য অনুযায়ী, এই বাড়ির দুই পাশে হাঁটার পথ (ওয়াকওয়ে), নান্দনিক ডিজাইনের ডেক ও ঝুলন্ত ব্রিজ এবং খালসংলগ্ন অত্যাধুনিক ল্যাম্প পোস্ট তৈরি করা হয়েছিল। যদিও প্রকল্পের মূল অংশ নয়, পূর্বাচল নতুন শহর ঘিরে একশ ফুট চওড়া খাল খনন প্রকল্পের আওতায় খালটি সংস্কার করা হয়।
দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন জানান, দুদক কোনো ব্যক্তির পরিচয় দেখে অনুসন্ধান শুরু করে না। এখানে মূল বিষয় হলো অভিযোগের বস্তুনিষ্ঠতা এবং তা কমিশনের তফসিলভুক্ত কি না। সব বিষয় বিবেচনা করে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
রাজউকের তথ্য অনুযায়ী, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ নিকুঞ্জ-১ (দক্ষিণ) আবাসিক এলাকায় ১৯৯৭ সালে প্লট বরাদ্দ পান। ২০১১ সালে বাড়ি নির্মাণের নকশা অনুমোদিত হয় এবং সাড়ে চার লাখ টাকায় প্লট রেজিস্ট্রি করেন।
বিজ্ঞাপন
একই এলাকায় আরও অনেক ক্ষমতাধর আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মকর্তাদের চোখ ধাঁধানো বাড়ি রয়েছে। হামিদের বাড়ির পাশে সাত নম্বর প্লটে বাড়ি করেছেন সাবেক হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন। এছাড়া শেখ পরিবারের প্রভাবশালী সদস্য, প্রাক্তন সাংবাদিক ও সরকারি কর্মকর্তারা নিকুঞ্জ এলাকায় বিলাসবহুল আবাস নির্মাণ করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সাবেক রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে এই অনুসন্ধান রাজনৈতিক ও আইনগত ক্ষেত্রে একটি নজির তৈরি করতে পারে। ইতিহাসে এরশাদের মামলার রূপকার্ষের মতো, এবারও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দুর্নীতি নিয়ে প্রাথমিক তদন্ত ও সম্ভাব্য বিচারের পথে ধাপ এগোবে।
বিজ্ঞাপন
এ ঘটনায় অনুসন্ধান টিম ইতিমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে বিষয়টি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জনসমক্ষে বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এই বিলাসবহুল প্রভাবশালী আবাসিক এলাকা সাধারণ মানুষের জন্য এক ধরনের সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করেছে এবং স্থানীয় প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনী বিষয়টি নজরে রেখেছে।








