দেশে ফেরার অপেক্ষায় তারেক রহমান, সিদ্ধান্তের নিয়ন্ত্রণ কোথায়?

দলের শীর্ষ নেতারা একাধিকবার জানিয়েছেন, শিগগিরই তিনি দেশে ফিরবেন।

কিন্তু ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসলেও তারেক রহমানের দেশে ফেরার ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো তথ্য নেই। এরই মধ্যে তার মা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা সংকটাপন্ন। পাঁচ দিন ধরে তিনি হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

এমন পরিস্থিতিতেও তারেক রহমান ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন যে, দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ ‘অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়’। এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে জল্পনার জন্ম দিয়েছে। কেন তিনি দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না এবং এই সিদ্ধান্তের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়ার আহ্বান হেফাজতের

শনিবার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “তারেক রহমানের ফেসবুক স্ট্যাটাসে সব ব্যাখ্যা রয়েছে। এ বিষয়ে আর কিছু বলার নেই।

এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা শফিকুল আলম ফেসবুকে উল্লেখ করেন, “সরকারের তরফ থেকে কোনো বিধি-নিষেধ বা আপত্তি নেই।

অক্টোবরের শুরুতে তারেক রহমান বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দেশে দ্রুত ফিরে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন।

দলের নেতারা বলেছিলেন, তিনি নভেম্বরেই দেশে ফিরবেন। কিন্তু নভেম্বর শেষ হওয়ার একদিন আগে তিনি নিজেই জানালেন, দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত তার একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।

একই সময় বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য উল্লেখ করেন, দলের বিষয় ছাড়াও আরও অনেক বিষয় রয়েছে, যার কারণে দেশে ফেরার সময় বিলম্ব হচ্ছে।

তবুও ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল হলে পরিস্থিতি যাই হোক, তিনি দেশে ফিরবেন বলে দলের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

তারেক রহমান ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুর্নীতির অভিযোগে আটক হন এবং ১৮ মাস কারাগারে কাটান। ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাওয়ার পর ১১ সেপ্টেম্বর তিনি লন্ডনে যান।

দীর্ঘ সময় বিএনপি নেতারা অভিযোগ করতেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন মামলা ও বাধার কারণে দেশে ফেরা সম্ভব হচ্ছে না। তবে বর্তমানে মামলার কোনও বাধা নেই। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিএনপি পক্ষ থেকে দুটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনা এবং অস্ত্রে লাইসেন্স আবেদনের খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে ফেরার বিষয়ে প্রভাবশালী কিছু দেশের আপত্তিও থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের নীতির পরিবর্তন না হলে তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন অনিশ্চিত।

আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বার্তা

মহিউদ্দিন আহমদ উল্লেখ করেন, ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে বোঝা যায়, দেশে আসা তার নিজের একক নিয়ন্ত্রণে নয় এবং আরও অনেক ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করছে।

২০০৭-২০০৮ সালের পরিস্থিতি এবং 'মাইনাস টু ফর্মুলা'–র প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক মহলে ধারণা, দুই পরিবারের ধারাবাহিক শাসনের বিরোধের প্রেক্ষিতে তারেকের দেশে ফেরা জটিল হয়ে গেছে। তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে, বিএনপির নেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি দেশে ফিরবেন এবং দলের নেতৃত্ব দেবেন। এছাড়াও বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা এবং বিএনপির নির্বাচনে জয়ের প্রেক্ষিতে তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী পদে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

ফলে, দেশে ফেরার সময়সূচি এখন রাজনৈতিক, পারিবারিক এবং আন্তর্জাতিক প্রভাবসহ বিভিন্ন জটিল ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করছে। এর মধ্যে যে সিদ্ধান্তগুলো তারেক রহমানের হাতে নেই, তা তার একক প্রত্যাবর্তনকে এখনও অনিশ্চিত রেখেছে।