সংসদ ভবনের সেই চিরচেনা প্রাঙ্গণে ফিরলেন নিথর দেহে

শীতের কুয়াশাভেজা সকালে চারদিকে নীরবতা, শুধু মানুষের ডুকরে কেঁদে ওঠার শব্দ। রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এবং জাতীয় সংসদ ভবনের আঙিনা আজ কোনো রাজনৈতিক স্লোগানে মুখর নয়; বরং এক গভীর শূন্যতায় আচ্ছন্ন। মানুষের চোখে শোক, মুখে নিস্তব্ধতার ছায়া।
বিজ্ঞাপন
দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত পুরো দেশবাসী। বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুর ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের ভেতরের মাঠ, বাইরের অংশ এবং মানিক মিয়া অ্যাভিনিউজুড়ে অনুষ্ঠিত হবে তার জানাজা। জানাজার পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে সমাহিত করা হবে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে।
১৯৯১ সালে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর দেশের শাসনভার সংসদীয় পদ্ধতিতে ফিরিয়ে আনেন খালেদা জিয়া। আজ সেই সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজাতেই তিনি ফিরলেন—কিন্তু একেবারেই অন্যভাবে। লাল-সবুজের জাতীয় পতাকায় মোড়ানো ফ্রিজার ভ্যানে নিথর দেহে। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আপসহীন নেতৃত্ব দিয়ে যে গণতন্ত্রের ভিত্তি তিনি গড়েছিলেন, আজ সেই গণতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু সংসদ ভবনেই তার শেষ বিদায়ের মুহূর্ত।
বিজ্ঞাপন
সকাল থেকেই মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসেছে প্রিয় নেত্রীকে একনজর দেখতে। কেউ হেঁটে, কেউ মেট্রোরেলে, কেউ বা শেষ সম্বল খরচ করে ঢাকায় এসেছেন জানাজায় অংশ নিতে।
চট্টগ্রামের এক প্রবীণ নেতা বলেন, এই সংসদ ভবন আমাদের নেত্রীর ত্যাগের ফসল। আজ তিনি এখানে ফিরলেন, কিন্তু আমাদের আর কিছু বলার সুযোগ দিলেন না।
সেনাবাহিনীর তৈরি হিউম্যান চেইনের ভেতর দিয়ে মরদেহবাহী গাড়িটি ধীরে ধীরে এগোচ্ছিল। দুই ধারের মানুষের চোখে বাঁধভাঙা পানি। জাতীয় পতাকায় মোড়ানো কফিন মনে করিয়ে দিচ্ছিল, খালেদা জিয়া শুধু একটি দলের নেত্রী নন, ছিলেন রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: ‘গর্ব করে বলবো, আমরা খালেদা জিয়ার কর্মী’
বাদ জোহর বায়তুল মোকাররমের খতিবের ইমামতিতে জানাজা সম্পন্ন হবে। এরপর মরদেহ নেওয়া হবে চন্দ্রিমা উদ্যানে, যেখানে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন তিনি। যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য আপস করেননি, কারাবরণ করেছেন কিন্তু মাথা নত করেননি, আজ ফিরে যাচ্ছেন জীবনসঙ্গীর পাশে।
সংসদ ভবন এলাকা শুধু ইট-পাথরের স্থাপত্য নয়, বরং এক শোকাতুর ইতিহাসের সাক্ষী। তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও সাধারণ ছুটির আবহে স্তব্ধ পুরো বাংলাদেশ। যে সংসদীয় ব্যবস্থা তিনি পুনঃপ্রবর্তন করেছিলেন, সেই ব্যবস্থার ধারক হয়ে সংসদ ভবনের স্মৃতি মেখেই বিদায় নিচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনি চিরস্মরণীয় থাকবেন সংসদীয় গণতন্ত্রের এক অনন্য কারিগর হিসেবে।








