মেট্রোরেলে নতুন জালিয়াতি, চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা

রাজধানীর ঢাকা মেট্রোরেলে নতুন ধরনের ভাড়া জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে। এমআরটি কার্ড বা র্যাপিড পাস কার্ড ব্যবহার করে সংঘবদ্ধ একটি চক্র অভিনব কৌশলে দীর্ঘদিন ধরে বিনা ভাড়ায় যাতায়াত করে আসছিল। এতে কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতির মুখে পড়ে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞাপন
এই প্রতারণা ঠেকাতে কর্তৃপক্ষ ‘একই স্টেশনে বিনা ভাড়ায় এন্ট্রি-এক্সিট’ সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছে। তবে এতে সাধারণ যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্র জানায়, জালিয়াত চক্রটি দুই দলে বিভক্ত হয়ে কাজ করতো। এক দল ট্রেন ছাড়ার স্টেশনে, অন্য দল গন্তব্যে। প্রাথমিক স্টেশনে একজন কার্ড পাঞ্চ করে ঢুকতেন, এরপর সেটি ভেতরে থাকা সহযোগীর হাতে তুলে দিতেন। সহযোগী সেই কার্ড দিয়ে স্টেশন থেকে বেরিয়ে যেতেন। ফলে সিস্টেমে দেখা যেত, যাত্রী ঢোকার পর একই স্টেশন থেকেই বের হয়েছেন। এভাবে প্রকৃত যাত্রী বিনা ভাড়ায় গন্তব্যে পৌঁছে যেতেন।
বিজ্ঞাপন
ডিএমটিসিএলের সিসিটিভি ফুটেজ ও টিকিটিং রেকর্ড বিশ্লেষণে অন্তত ১০টিরও বেশি ঘটনার প্রমাণ মিলেছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
ডিএমটিসিএলের এক কর্মকর্তা বলেন, “অনেক যাত্রীকে একই স্টেশনে বারবার ঢুকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে বের হতে দেখা গেছে। তাদের কার্ড ডেটা পরীক্ষা করে বোঝা যায়, এটি ভাড়া ফাঁকি দেওয়ার কৌশল।”
এরপর থেকেই মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ নতুন নিয়ম চালু করে। ২০ অক্টোবর বিকেল থেকে কার্যকর হওয়া নির্দেশনায় বলা হয়, একই স্টেশনে প্রবেশ ও বাহির হলে ১০০ টাকা কাটা হবে।
বিজ্ঞাপন
আগে ভুলবশত পাঁচ মিনিটের মধ্যে স্টেশন ত্যাগ করলে কোনো ভাড়া দিতে হতো না। সেই ‘ফ্রি এন্ট্রি-এক্সিট’ সুবিধাটিই এখন বন্ধ।
তবে এই নতুন নিয়মে ক্ষুব্ধ সাধারণ যাত্রীরা। তারা বলছেন, “কিছু অসাধু ব্যক্তির কারণে সবাইকে জরিমানা দিতে হচ্ছে। মাথা ব্যথার চিকিৎসা ওষুধে হয়, মাথা কেটে নয়।”
আরও পড়ুন: হাসিনার আশির্বাদে মতিনের দাপট
বিজ্ঞাপন
মেট্রোরেলের নিয়মিত যাত্রী আসাদ আবেদিন বলেন, “আগে প্রয়োজন হলে পাঁচ মিনিটের মধ্যে বের হতে পারতাম, এখন ১০০ টাকা জরিমানা। এটি সাধারণ যাত্রীদের জন্য বড় কষ্ট।”
অন্যদিকে সামাজিক মাধ্যমে মতভেদ দেখা গেছে। কেউ কেউ সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক বলছেন। কেউ বলছেন, এই পদক্ষেপে যাত্রীবান্ধব সেবা বাধাগ্রস্ত হবে।
ডিএমটিসিএলের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “মানুষকে সুবিধা দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা তা অপব্যবহার করেছে। এতে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছিল। তাই ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছি।”