Logo

বহালতবিয়তে এনআরবিসি ব্যাংকের সংগবদ্ধ আর্থিক দুর্নীতিবাজ চক্র

profile picture
মো. রুবেল হোসেন
২৬ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:৩৪
25Shares
বহালতবিয়তে এনআরবিসি ব্যাংকের সংগবদ্ধ আর্থিক দুর্নীতিবাজ চক্র
ছবি: পত্রিকা থেকে নেওয়া।

এনআরবিসি ব্যাংক, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বিবেচনায় অনিয়ম দিয়েই যার যাত্রা শুরু, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার ফরাসাত আলীর কাঁধে বন্দুক রেখে শিকার করেছিলেন বর্তমান সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী যিনি ছিলেন একইসাথে এই ব্যাংকের একমাত্র ব্যাংকিং জানা ব্যাক্তি ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক আবার এজি গ্রুপের কর্ণধার, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল আহসানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

বিজ্ঞাপন

এই তৌফিক চৌধুরী ও শহিদুল আহসানের একক কতৃত্বে পরিচালিত হয়ে আসছিলো ব্যাংকটি। যেখানে ব্যাংকের বড় বড় বেশ কয়েকটি শেয়ারের মালিকানা ছিল শহিদুল আহসানের নিকটাত্মীয়দের তাই শহিদুল আহসান ছিলেন এই ব্যাংকের বেনামি বেশ কয়েকটি উদ্যোক্তা শেয়ার পরিচালনাকারী হিসেবে ব্যাংকিং সেক্টরে মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত।

আলোচিত এই দুই কুশীলব, ব্যাংক লুটেরা তৌফিক চৌধুরী ও শহিদুল আহসানের একক কতৃত্বের কারণে এনআরবিসি ব্যাংক লুটপাটের উদ্দেশ্যে শুধুমাত্র মার্কেন্টাইল ব্যাংকের (আওয়ামী লীগের আরেক রাজনৈতিক বিবেচনার ব্যাংক) একঝাঁক কর্মকর্তাকে এই ব্যাংকে অতিমাত্রার সুযোগ-সুবিধা দিয়ে নিয়োগ দিয়ে একটি বিশাল লুটপাটের সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন তারা। আর এই সিন্ডিকেটের কারণে প্রথমেই ব্যাংকটি ধাক্কা খায় প্রায় ৯০০ কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে যার সিংহভাগ ঋণই চলে যায় আলোচিত শহিদুল আহসানের মালিকানাধীন এজি আগ্রো ও বেগমগঞ্জ ফিড মিলের নামে। যে কারণে সে সময় বাংলাদেশ ব্যাংক আলোচিত এই চক্রটিকে ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকে অপসারণ করেন এবং একসময় শহিদুল আহসানও মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকেও অপসারিত হন।

বিজ্ঞাপন

ব্যাংকটির শুরু থেকে ইতিহাস পর্যালোচনা করলেই দেখা যায় এই ব্যাংকের অনিয়ম-দুর্নীতি'র মাত্রা সব সময়ই বেশি থাকা ও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা গুলোর প্রবিধান না মেনে বরং যখন যে পরিচালনা পর্ষদ এসেছে তাদেরকে দিন দিন নতুন নতুন অনিয়ম-দুর্নীতির দিকে ধাবিত করে নিজেরা দুর্নীতিলব্ধ অর্থ, সম্পদ, অবৈধ নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে লাভবান হয়েছে একটি চক্র এবং আশ্চর্জনকভাবে এই চক্রের অধিকাংশ সদস্যই সেই মার্কেন্টাইল ব্যাংকেরই সাবেক কর্মকর্তা যারা কিনা সেই শহিদুল আহসান ও তৌফিক চৌধুরীরই নিয়োগকৃত বিশেষ দুর্নীতিবাজ ও সুবিধাভোগী চক্র!

সে সময় ফরাসাত আলী ও তৌফিক চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ওই পর্ষদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক সারোয়ার জামান চৌধুরী ও শোয়াইব আহমেদ (ব্যাংকের মূল পরামর্শক ও সাবেক ডিএমডি ) যাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সে সময় ব্যাংকটি ফরাসাত আলী ও তৌফিক চৌধুরী মুক্ত হয়েছিল এবং তাদেরকে হটিয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকটির কতৃত্ব চলে যায় রাশিয়া বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পারভেজ তমালের হাতে। যার সাথে ওই পরিষদে আরো স্থান পেয়েছিলেন রাশিয়া বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মিয়া আরজু ও আলোচিত ব্যাংকিং সেক্টরের হোয়াইট কলার ক্রিমিনাল হিসেবে পরিচিত ব্যাংক ও পুঁজিবাজার লুটে তমালের সহযোগী হিসেবে পরিচিত আদনান ইমাম। বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারকারী হিসেবে পরিচিত আলোচিত মাহতাবুর রহমান নাসিরের ভাই ওলিউর রহমানসহ অন্যান্য কয়েকজন যারা তমালের সহযোগী হিসেবে ব্যাংকটি থেকে শুধু নানামুখী কায়দায় বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে শুধুই নিজেরা ব্যাংকটির লুটপাটের সহযোগী হয়েছিলেন কিন্তু কখনো কোন বিষয়ে নিজেরা প্রকাশ্যে কোন আপত্তি তোলেননি বা ব্যাংকটিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কোন ভূমিকায় রাখেননি।

দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের চরম অনিয়ম, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনা ও দুঃশাসনের নজির স্থাপন করেছে এনআরবিসি ব্যাংক যার জন্য দায়ী ব্যাংকের সদ্য সাবেক একক কতৃত্ববাদী চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল, এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান আদনান ইমাম ও তাদের সকল অপকর্মের দোসর পালের গোদা ডিএমডি হারুনুর রশিদ। যে কিনা ধারাবাহিকভাবে বিগত ১৩ বছর ধরে সকল পর্ষদের দুর্নীতির প্রধান পৃষ্টপোষক ও সকল প্রকার দানব সৃষ্টির অন্যতম কারিগর।

বিজ্ঞাপন

ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন সময়ে দাখিলকৃত অভিযোগ থেকে দেখা যায় যে, ধারাবাহিকভাবে ব্যাংক লুটের নিখুঁত পরিচালনাকারী হিসেবে এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ঢাকার বসুন্ধরা, বারিধারা, পূর্বাচল, শান্তিনগর, ধানমন্ডি, গাজীপুর, সাভার, হেমায়েতপুর, মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২৭ টি প্লট এবং অসংখ্য ফ্ল্যাটের মালিক। যে কিনা ব্যাংকটির শুরু থেকেই তৌফিক-ফারাসাত ও তমাল-আদনানের সকল কুকর্মের মূল কুশীলব আবার ব্যাংকটির অভ্যন্তরে গঠিত সংগবদ্ধ আর্থিক দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটেরও পুরোধা।

জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের চোখে ধুলো দিয়ে উপশাখার অনুমোদনের অপব্যাবহার করে অবৈধ পার্টনারশীপ ব্যাংকিং এসকেএস প্রকল্পের মাধ্যমে টাকা লোপাটের মূল পরিকল্পনাকারী কর্মকর্তা, এসকেএস প্রকল্পের প্রধান বিজনেস ও ঋণ অনুমোদনকারী কর্মকর্তাও তিনি, যা কিনা সুস্পষ্ট Conflict of Interest! এসকেএস প্রকল্পের দালাল জনির সাথে মিলে পারভেজ তমাল ও রাসেল আহমেদ লিটনের সাথে যোগসূত্র স্থাপনকারী মিডিলম্যানও সে।

ব্যাংকের সূত্র মোতাবেক, এসকেএস ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের নামে এনআরবিসি ব্যাংকের প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা হরিলুট হলেও এখান ব্যাংকের ডিএমডি হারুনুর রশিদ, রমজান আলী ও সাফায়েত কবির কানন এই চক্র বেশ কয়েকশো কোটি টাকা হাতিয়েছে। হারুনের ভায়রা আলমাস সর্দারের মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে প্লট ও নানামুখী ব্যবসা এবং অস্ট্রিলিয়াতে আবাসন ব্যবসা খাতে বিনিয়োগ করে ব্যাংকের দুর্নীতিলব্ধ বেশ কয়েকশো কোটি টাকা পাঁচার করেছে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ব্যাংক ও দুর্নীতি দমন কমিশনের বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত পরিদর্শন ও বিশেষ তদন্ত রিপোর্টেও এনআরবিসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল, পরিচালক আদনান ইমাম ও ডিএমডি হারুনুর রশিদের নেতৃত্বে পরিচালিত এই সংগবদ্ধ আর্থিক দুর্নীতিবাজ চক্রের নানাবিধ গুরুতর আর্থিক অপরাধ ও মানিলন্ডারিংয়ের সত্যতা পাওয়া গেলেও এ প্রসঙ্গে কোন কার্যকরী ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি ব্যাংকটির বর্তমান ও পূর্ববর্তী কোন কতৃপক্ষ। এমনকি তাদেরকে স্বপদে বহাল রেখেই তাদের বিরুদ্ধে নামে মাত্র চলছে দায়সারা তদন্ত।

জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত দলের সদস্য কামাল হাসান শিশির বিগত ৬ অগাস্ট থেকে এনআরবিসি ব্যাংকের বিভিন্ন অনিয়ম ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরলেও বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো খুব একটা তৎপরতা বা কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি। তাছাড়া পট পরিবর্তনের পর পরই রং পাল্টিয়ে পারভেজ তমাল গুটি কয়েক সমন্বয়ক ও বিএনপি পন্থী বিভিন্ন আইনজীবী নেতাদেরকে হস্তগত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই একমাত্র ব্যাংক যেখানে জুলাই অভ্যুথানের সময় অফিস আদেশ জারি করে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবার-পরিজনকে জুলাই অভ্যুথানের বিপক্ষে কাজ করার জন্য কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের একমাত্র লালন-পালনকারী হিসেবে আন্দোলন দমাতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকে মোটা অংকের অর্থ ব্যাংকের সিএসআর ফান্ড থেকে সরবারহ করেছিলেন।

বিজ্ঞাপন

পারভেজ তমাল ও তার অনুগত পথভ্রষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত হয় ব্যাংকটির সংগবদ্ধ আর্থিক দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট। দানবীয় ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী ব্যাংক পরিচালনার এসব ঘটনায় ও নিরীহ ছাত্র-জনতা হত্যার অন্যতম সহযোগী ও অর্থের যোগানদাতা হিসেবে শাহবাগ থানায় ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাও দায়ের হয়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও তার, ব্যাংকের সকল পর্ষদ সদস্য ও ব্যাবস্থাপনা সদস্যদের বিরুদ্ধে এসব গর্হিত ও মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডের জন্য মামলা দায়ের হয়েছে যা এখনো বিচারাধীন। এ প্রসঙ্গে এনআরবিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌহিদুল ইসলাম খানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়ানি। এমনকি তার ব্যবহিত সামাজিক যোগাযো গমাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোন সারা দেননি।

জেবি/এসডি
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD