Logo

দুর্নীতিবাজদের স্বপদে রেখে তদন্ত করছে এনআরবিসি ব্যাংক

profile picture
মো. রুবেল হোসেন
২৭ অক্টোবর, ২০২৫, ১৩:৫০
25Shares
দুর্নীতিবাজদের স্বপদে রেখে তদন্ত করছে এনআরবিসি ব্যাংক
ছবি: পত্রিকা থেকে নেওয়া।

এনআরবিসি ব্যাংকের দুর্নীতিবাজদের স্বপদে রেখেই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে। সাধারণত যেসব ব্যাংকের পর্ষদ বাংলাদেশ ব্যাংক কতৃক পুনর্গঠিত হয়েছে তাদের প্রায় সবগুলোর ক্ষেত্রেই ফরেনসিক অডিট ও অন্যান্য সকল প্রকার তদন্তকার্য পরিচালনার জন্য অতীতের ফ্যাসিস্টদের সহযোগী ও চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদেরকে বাধ্যতামূলক অন্তত: ০৪ মাসের ছুটি প্রদান করেই তারপরে নিরপেক্ষ তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু এনআরবিসি ব্যাংকের সেটির ব্যাতিক্রম দেখা যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

এমনকি পট পরিবর্তনের পর এমন অনেককে বিশেষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে যাদের বিরুদ্ধে আগেও অভিযোগ দিয়েছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক, “যে এসব কর্মকর্তাদের কেন বার বার অস্বাভাবিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় তা নিয়ে”। কিন্তু এসব বিষয়ে একেবারেই যেন নীরব সুশাসনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কতৃক পুনর্গঠিত ব্যাংকটির নতুন স্বাধীন ও স্বতন্ত্র পর্ষদ।

জানা যায়, এনআরবিসি ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সারোয়ার জামান চৌধুরী যিনি কিনা তার অসামান্য অবদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কতৃক প্রেসিডেনশিয়াল অ্যাওয়ার্ড গোল্ড ক্যাটাগরি লাভ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কতৃক "ORDER OF MERIT" অ্যাওয়ার্ডও লাভ করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, পারভেজ তমাল চক্র একটি ভুয়া ও অস্তিত্বহীন অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে জমা দিয়ে তার গতি রোধ করতে ব্যস্ত ছিল, উদেশ্যো তিনি যেন ব্যাংক পরিচালনায় কোনোভাবেই অংশ গ্রহণ করতে না পারেন।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৩ জুন অনুষ্ঠিত এনআরবিসি ব্যাংকের এজিএমে সারোয়ার জামান চৌধুরী অংশগ্রহণ করলে তাকে পারভেজ তমাল সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ বাহিনী দিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দিলে তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হন এবং তাকে শাসিয়ে বলে যে, "তোকেও এনায়েতের মত আর যাতে দেশে আসতে না পারিস সেই ব্যবস্থা করতেছি" এই বিষয়টি নিয়ে সে সময় তিনি গুলশান থানায় সাধারণ ডাইরি করেছিলেন।

ঠিক একইভাবে ইতালি প্রবাসী এনায়েত হোসেনের উদ্যোক্তা শেয়ার পারভেজ তমাল দখলের উদ্দেশ্যে তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি ভুয়া মামলা দায়ের করেন এবং ফজলে নূর তাপসকে দিয়ে সেগুলো ত্বরান্তিত করে এনায়েত হোসেনকে দেশে আসা থেকে বিরত রাখেন। যে কারণে এনায়েত হোসেন দীর্ঘ ৮ বছর যাবৎ দেশে আসতে পারেনি। আদালতের নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও তমালের গায়ের জোরে এনায়েত হোসেনের বিগত ৮ বছরের লভ্যাংশের অর্থ আটকে রেখেছেন

দানবীয় পারভেজ তমাল ২০১৭ সালে ব্যাংক দখলের পর তার বন্ধু জিয়াউল আহসানের মাধ্যমে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে নিজ ব্যাংকেই গড়ে তোলেন আয়নাঘরের আদলে টর্চার সেল। যেখানে নিয়মিত পেশাদার কর্মকর্তাদের নির্যাতন করা হত। এই সেলের প্রধান ছিলেন ব্যাংকের সিকিউরিটি ফোর্সের প্রধান কমান্ডার (অব.) ফরহাদ সরকার আর অন্যান্য সদস্যরা হলেন পারভেজ হাসান, দিদারুল হক মিয়া, আহসান হাবিব, জাফর ইকবাল হাওলাদার ও জমির উদ্দিন, কামরুল হাসান, আসিফ ইকবাল, ক্যাপ্টেন মেহমুদ অভি, ইয়াসিন আলী ও পারভেজ তমালের ব্যাক্তিগত গানম্যান কালামসহ প্রায় ২৫ জনের একটি চৌকষ টিম যারা কিনা ছাত্রলীগ ও বিভিন্ন সংস্থার সাথে সমন্বয় করেই তাদের কার্য পরিচালনা করত।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, টর্চার সেলের পাশাপাশি এই সক্রিয় টিম পারভেজ তমালের হয়ে তার জায়গা-জমি, গাড়ি-বাড়ি-স্থাপনা দখল, তমালের বন্ধু শফিকুল আলম মিথুনের নামে বড় বড় ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে আনা, সরকারি দপ্তর নিয়ন্ত্রণ করা, জনগণের স্পর্শকাতর এনআইডি কার্ডের তথ্য চুরি ও বিদেশী কোম্পানির কাছে পাঁচার, বিআরটিএ, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সরকারি জায়গা কব্জা করা, সচিবালয় নিয়ন্ত্রণ করা, ব্যাংকের সকল কেনা-কাটায় অনিয়ম ও শাখা-উপশাখার সাজসজ্জা ও অন্যান্য কানা-কাটা/সরবারহ কাজের দুর্নীতি, আইটি খাতের সকল অনিয়ম, দুর্নীতিলব্ধ অর্থ সুচারুভাবে মনিলন্ডরিং এর মাধ্যমে তছরূপ, বৈদেশিক মুদ্রার অর্থ দিয়ে নয়ছয় করে চোরাকারবারি ব্যবসা পরিচালনা, দুর্নীতিলব্ধ অর্থ দিয়ে এনআরবিসি ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে নিজ ব্যাংকের সাথে ব্যবসা পরিচালনা, নিয়োগ বাণিজ্য ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, বহিস্কৃত যুবলীগ নেতা ক্যাসিনো কাওসার মোল্লা ও আল নাহিয়ান খান জয়ের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কতৃত্ব করা ইত্যাদি এহেন কোন জঘন্য কাজ নেই যেটার সাথে আলোচিত তমাল চক্রের এই ২৫ জনের একটি চৌকষ টিম কাজ করত।

এ সকল অপকর্মের পরিচালনাকারী অন্যান্য কুশীলবরা হলেন এনআরবিসি ব্যাংকের পক্ষ থেকে কমান্ডার (অব.) ফরহাদ সরকার, পারভেজ হাসান ও দিদারুল হক মিয়া, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, ছাত্রলীগের নেত্রী তিলোত্তমা সিকদার ও আতিকা, শেখ হাসিনার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি ডিপিএস তুষার এবং তার সার্বক্ষণিক সহচর ও ছাত্রলীগের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা জুয়েল হোসেন শ্রাবন।

বিজ্ঞাপন

এসব দুর্ধর্ষ দানবীয় চক্র গঠন করে বাংলাদেশের কোন একটি ব্যাংক পরিচালিত হয়েছে এমন কোন নজির ইতিহাসে নেই। কিন্তু সেই রামরাজত্বই কায়েম করেছিলেন আলোচিত পারভেজ তমাল নিজেই। আরো মজার বেপার হলো বরিশালের সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি মারিয়া আক্তারের নামে একটি শুল্কমুক্ত ব্র্যান্ড-নিউ পাজেরো গাড়ি আমদানি করে সেই গাড়িতে মন্ত্রী/এমপি'র স্টিকার লাগিয়ে প্রটোকল নিয়ে সারাদেশ দাপিয়ে বেড়াতো এই পারভেজ তমাল। এ পর্যন্ত তিনবার পারভেজ তমাল তার আর্থিক দুর্নীতিবাজ চক্রের মনোবল ঠিক রাখার জন্য তার দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের সদস্যদেরকে অস্বাভাবিক পদোন্নতি ও বেতন বৃদ্ধি করেছেন।

সূত্র জানায়, দুর্নীতিবাজ জাফর ইকবাল হাওলাদারকে যখনি বিএফআইইউ তমাল-আদনানের সাথে একাউন্ট ফ্রিজ করে দেয় ঠিক তখনি তার মনোবল চাঙ্গা রাখার জন্য তাকে পদোন্নতি দিয়ে দেয়। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক যখন এসকেএস মাইক্রোফিনান্সের দুর্নীতি নিয়ে নড়াচড়া করে ঠিক তখনি মাইক্রোফিনান্সের রমজান আলীকে পদোন্নতি দেয়। একইভাবে কমান্ডার ফরহাদ, মারুফ উদ্দিন কামাল, রূপপুর ব্রাঞ্চের রাশেদ, প্রধান কার্যালয়ের গফুর রানা, জামির উদ্দিন ও কামরুল হাসানের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন অভিযোগের বিপরীতে শাস্তির পরিবর্তে তাদেরকে পদোন্নতি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এ যেন সত্যিই বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে এক হীরক রাজার দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ব্যাংকটি।

ঠিক একইভাবে আলোচিত রিলাইয়াবল বিল্ডার্স দুর্নীতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে বিনা জামানতে ৪৫০ কোটি টাকা বের করে দেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হাতিরপুল ব্রাঞ্চের সাবেক ম্যানেজার কবির হোসেনকে পদোন্নতি দিয়ে পুরস্কৃত করে প্রধান ব্রাঞ্চের ম্যানেজার করা হয়েছে। এ ছাড়াও রামপুরা ব্রাঞ্চের সাবেক ম্যানেজার ফোরকান উদ্দিনসহ তমালের একান্ত অনুগত স্কোয়াডের প্রায় ১১ জন কর্মকর্তাকে এসব বিশেষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে যাদের বিরুদ্ধে আগেও অভিযোগ দিয়েছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক, “যে এসব কর্মকর্তাদের কেন বার বার অস্বাভাবিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় তা নিয়ে”।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু এসব বিষয়ে একেবারেই যেন নীরব সুশাসনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক পুনর্গঠিত ব্যাংকটির নতুন স্বাধীন ও স্বতন্ত্র পর্ষদ। তার এই সংগবদ্ধ আর্থিক দুর্নীতিবাজ চক্রের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তাদেরকে স্বপদে বহাল রেখেই তদন্ত প্রক্রিয়া ও ফরেনসিক অডিট পরিচালনা করছেন। যাতে করে বিচার প্রক্রিয়া প্রভাবিত হচ্ছে ও প্রকৃত দোষীদেরকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার আওতায় আনাটা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।অন্যদিকে দানবীয় এই তমাল চক্রের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নির্যাতিত পেশাদার কর্মকর্তাদের পুনর্বাসন এখনও উপেক্ষিত এবং তাদের প্রতি ন্যায়বিচারে এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি কোন সুশাসন।

এ খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, পারভেজ তমাল আওয়ামী লীগের কিছু নেতাদের আশীর্বাদে ব্যাংকিং সেক্টরে একজন দানব হয়ে উঠে কিন্তু এই দানব সৃষ্টিতে যারা সহযোগিতা করেছিল (সেই ফজলে কবির ও রউফ তালুকদার) তাদের দায় কি কম? অপরদিকে দানবকে মানবীয় খোলসে দেখিয়ে, সাজিয়ে ও বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে ভুলভাল বুঝিয়ে সবকিছু ধামাচাপা দিয়ে এই দানবের কর্মকান্ড পরিচালনা করতে ধাবিত করে নিজেরা সুবিধা বাগিয়ে নিয়ে অবৈধ অর্থ, সুযোগ-সুবিধা ও অঢেল সম্পত্তির অধিকারী হয়েছে সেই ব্যাবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ডিএমডি হারুন ও তার সহযোগী কাননের নেতৃত্বে পরিচালিত অন্যান্য কর্মকর্তাদের কি কোনো ভূমিকা নাই? এভাবে পর্ষদ আসে পর্ষদ যায় কিন্তু দানব সৃষ্টির কারিগর ব্যাবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সদস্যরা বরাবর বহালই থেকে যায়। ব্যাংকের প্রভাবশালী কর্মকর্তাদেরকে স্বপদে বহাল রেখেই অধস্তনদের দিয়েই আবার তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান রাখাটাকে একেবারেই হাস্যকর ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী বলেও মনে করেন তারা।

এ প্রসঙ্গে এনআরবিসি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালীন অন্যতম উদ্যোক্তা ও ভুক্তভোগী মো. এনায়েত হোসেন জনবাণীকে জানান, এনআরবিসি ব্যাংক প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে আমি সবচেয়ে বড় শেয়ারের যোগান দিয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে আমি যেহেতু আওয়ামী লীগপন্থী ছিলাম না তাই শেখ হাসিনা ও শেখ সেলিমের ভয় দেখিয়ে আমার শেয়ারের কিছু অংশ দখল করে নিতে চাই পারভেজ তমাল। যেটাতে আমি রাজি ছিলাম না। এ কারণে সে আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে শেখ ফজলে নূর তাপসকে দিয়ে একাধিক ভুয়া মামলা দায়ের করে আমাকে হয়রানি করে। যার ফলশ্রুতিতে আমি বিগত ৯ বছর ধরে দেশেও আসতে পারেনি। আদালতের নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও এনআরবিসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল তার সময়ে মৌখিক আদেশ দিয়ে আমার সমুদয় শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশের অর্থ প্রদান করা বন্ধ করে দেয়। এমনকি একাধিকবার আমাকে প্রাণনাশের হুমকিও প্রদান করে।

জেবি/এসডি
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD