Logo

দেশজুড়ে নির্বাচনী সরগরম-আমেজ

profile picture
বিশেষ প্রতিবেদক
২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ১৭:৩৪
8Shares
দেশজুড়ে নির্বাচনী সরগরম-আমেজ
ফাইল ছবি।

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট একেবারে বদলে গেছে। এই অভ্যুত্থান, যা ‘মনসুন বিপ্লব’ নামে পরিচিত, দেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এর ফলে গঠিত হয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। দেশ একটি স্থিতিশীলতার দিকে এগোচ্ছে। যার কেন্দ্রবিন্দু হলো সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন।

বর্তমানে দেশজুড়ে নির্বাচনী উত্তেজনা। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি কাজ ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এই নির্বাচনটি আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে, যা পবিত্র রমজানের আগে সম্পন্ন করার দাবি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে আসছে।

বিজ্ঞাপন

অভ্যুত্থান থেকে নির্বাচনী প্রস্তুতির সূচনা

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে বয়কট করার পর বিএনপি এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর নেতৃত্বে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে থাকে। এই নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ‘অস্বচ্ছ’ বলে অভিহিত করে, যা শেখ হাসিনার সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে।

জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু হয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকারের পতন ঘটে। যার ফলে শত শত মানুষ প্রাণ হারায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস গত জুন মাসে লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন। এই বৈঠকে তারেক রহমান রমজানের আগে নির্বাচনের প্রস্তাব দেন, যা ড. ইউনূস সম্মতি গ্রহণ করেন।

বিজ্ঞাপন

ফলে নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারিত হয় ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে। এই বৈঠকের পর থেকে নির্বাচনী প্রস্তুতি ত্বরান্বিত হয়। নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা সংশোধন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পরীক্ষা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ শুরু করে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে দেশজুড়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সভা-সমিতি, কর্মশালা এবং প্রচারণা শুরু হয়। বিএনপির ক্ষেত্রে তারেক রহমানের ভার্চুয়াল নেতৃত্বে এই প্রস্তুতি আরও তীব্রতর হয়েছে। তিনি লন্ডন থেকে নিয়মিত ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে দলীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, যা দলের সাংগঠনিক শক্তিকে মজবুত করেছে।

নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি সম্পন্ন

নির্বাচন কমিশনের মতে, চলতি অক্টোবর মাসে প্রস্তুতি কাজ ৯০-৯৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ভোটার তালিকায় ১২ কোটিরও বেশি নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে নতুন ভোটারদের যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। ইসি জানিয়েছে, নির্বাচনের ৬০ দিন আগে তফশিল ঘোষণা করা হবে।

বিজ্ঞাপন

তবে, রিপ্রেজেন্টেশন অফ দ্য পিপল অর্ডিন্যান্স (আরপিও) সংশোধনের প্রশ্ন উঠেছে, যা ছোট দলগুলোর অংশগ্রহণকে সীমাবদ্ধ করতে পারে। বিএনপি এই সংশোধনের বিরোধিতা করে বলেছে, এটি গ্র্যান্ড অ্যালায়েন্স গঠনকে বাধাগ্রস্ত করবে।

দেশজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ

সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে কয়েকটি ছোটখাটো সংঘর্ষ ঘটে। যখন বিএনপি এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির কর্মীরা মিছিল করে। তবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পুলিশ রিফর্মের ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তারেক রহমান এই ঘটনাগুলোকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে অভিহিত করে বলেছেন, “যারা জোরপূর্বক গুম, হত্যা, নির্যাতন করেছে, তাদের বিচার হতে হবে এটি প্রতিশোধ নয়, ন্যায়ের দাবি।” তাঁর এই বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারিত হয়েছে, যা বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়েছে।

বিএনপির প্রস্তুতি

বিজ্ঞাপন

বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতির কেন্দ্রবিন্দু তারেক রহমান। ২০২৫ সালের জুলাই মাসে তিনি ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস এবং বিবিসি বাংলাকে দিয়ে সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান বলেন, “আমি দেশে ফিরে নির্বাচনে অংশ নেব। বিএনপি একাই জিতবে এবং সরকার গঠন করবে।”

এই ঘোষণার পর লন্ডন থেকে তাঁর ফিরে আসার প্রস্তুতি শুরু হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, “তারেক রহমান নভেম্বরের মাঝামাঝি দেশে ফিরবেন।” দলটি তাঁর জন্য গ্র্যান্ড রিসেপশনের আয়োজন করছে।

তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি ২০০টিরও বেশি আসনের জন্য প্রার্থী নির্বাচন শুরু করেছে।

বিজ্ঞাপন

অক্টোবর মাসে তিনি ভার্চুয়াল মিটিংয়ে নেতাদের নির্দেশ দেন, “দলীয় প্রার্থীদের জন্য কাজ করুন, ঐক্য বজায় রাখুন।” দলটি গ্র্যান্ড অ্যালায়েন্স গঠনের পরিকল্পনা করছে, যাতে জামায়াতে ইসলামী এবং ছোট ইসলামপন্থী দলগুলো যোগ দিতে পারে।

কিন্তু ভারতের প্রভাবের অভিযোগ উঠেছে, যা তারেক রহমানকে ‘জাতীয়তাবাদী’ হিসেবে চিহ্নিত করে। তিনি বলেছেন, “ভারত তারেককে বাধা দিতে চায়, কিন্তু জাতীয়তাবাদ এবং ঐক্যের মাধ্যমে তাদের পরাজয় হবে।”

দেশজুড়ে বিএনপির কার্যক্রম তীব্র। কিশোরগঞ্জে খান্দকার শামসুল আলম ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠানে তারেক রহমান বলেন, “বিএনপি ক্ষমতায় এলে শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বাজেট দেওয়া হবে। এআই যুগে যুবকদের জ্ঞান, দক্ষতা এবং নৈতিকতা দিয়ে প্রস্তুত করতে হবে।” এই বক্তব্য যুব সমর্থকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আগস্ট মাসে তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান, “বাংলাদেশ সকলের ধর্ম নির্বিশেষে। বিএনপির সঙ্গে যোগ দিন।” এটি সংখ্যালঘু নিরাপত্তার প্রশ্নে দলের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে। তারেক রহমানের নির্বাসনজীবনের অভিজ্ঞতা দলের কৌশলে প্রতিফলিত। তিনি নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিএনপির মেডিকেল এবং লিগ্যাল সেল গঠনের ঘোষণা দেন, যা মার্চ মাসে একটি শিশু নির্যাতনের ঘটনায় কার্যকর হয়। এই উদ্যোগগুলো বিএনপিকে ‘জনমুখী’ করে তুলেছে।

অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রস্তুতি

আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব শূন্যতময়, কিন্তু দলটি পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে ছোট নেতারা স্থানীয় স্তরে সভা করছেন। জাতীয় পার্টি এবং জামায়াতে ইসলামী, জাকের পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বেশকিছু ইসলামপন্থী দল ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে অনেকেই প্রার্থী চূড়ান্তের কাজ শুরু করেছে। এরই মধ্যে জামায়াতে ইসলামী সকল আসনে প্রার্থী দিয়েছে এবং ছোট ইসলামপন্থী দলগুলোকে ছাতার নিচে নিয়ে আসছে। এতে ভারতের ‘কৌশলগত সমর্থন’ অভিযোগ উঠেছে, যা বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ।

বিজ্ঞাপন

ছাত্র আন্দোলনের উত্তরসূরী

জাতীয় নাগরিক পার্টি ছাত্র আন্দোলনের উত্তরসূরী, যুবকদের মধ্যে জনপ্রিয়। তারা জামায়াতের সঙ্গে জোট গঠনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করছে। অক্টোবরে ঢাকায় জাতীয় নাগরিক পার্টি এবং বিএনপির যৌথ সভায় তারেক রহমানের ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে ‘ঐক্যের’ আহ্বান জানানো হয়। তবে, ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের বিজয় বিএনপির জন্য উদ্বেগের কারণ হয়েছে, যা ‘অশিক্ষিত গ্রামীণ ভোটারদের উপর নির্ভরতা’ দেখায়।

দেশজুড়ে ঘটনাসমূহ: উত্তেজনা এবং চ্যালেঞ্জ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে দেশজুড়ে রাজনৈতিক সভা বেড়েছে। ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামে বিএনপির কার্যালয়ে তারেক রহমানের ভিডিও বক্তৃতা প্রচারিত হয়, যাতে তিনি ‘ডেমোক্রেসির পুনরুদ্ধার’ দাবি করেন।

বিজ্ঞাপন

মার্চ মাসে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির নারী উইংয়ের অনুষ্ঠানে শাহিদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানি বলেন, “তারেক রহমান অক্টোবরের শেষে বা নভেম্বরে ফিরবেন এবং প্রধানমন্ত্রী হবেন।” কিন্তু চ্যালেঞ্জও কম নয়। সেপ্টেম্বরে লক্ষ্মীপুরে বিএনপি কর্মীদের উপর হামলায় কয়েকজন আহত হন। তারেক রহমান এটাকে ‘পুরনো শক্তির ষড়যন্ত্র’ বলে। অক্টোবরে কিশোরগঞ্জে তাঁর অনুষ্ঠানে হাজারো যুবক উপস্থিত হয়, যা দলের যুব উৎসাহ দেখায়। সামাজিক মাধ্যমে #ঠড়ঃবঋড়ৎইঘচ এবং #ঞধৎরয়ঁবঋড়ৎচগ ট্রেন্ড করেছে।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণের প্রতিশ্রুতি

আন্তর্জাতিকভাবে, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য নির্বাচন পর্যবেক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে উত্তেজনা রয়েছে, যেখানে তারেক রহমানকে ‘ভারত-বিরোধী’ বলে চিহ্নিত করা হয়। তাঁর ফেলানি হত্যার ঘটনায় অবস্থান ভারতকে অস্বস্তিতে ফেলেছে।

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পুনর্জন্মের সুযোগ। তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি একটি শক্তিশালী বিকল্প উপস্থাপন করছে, যা জাতীয়তাবাদ, ঐক্য এবং সংস্কারের উপর ভিত্তি করে। তাঁর ফিরে আসা এই নির্বাচনকে ঐতিহাসিক করে তুলবে। দেশের জনগণের হাতে এখন ভোটের বল, যা অতীতের অন্ধকারকে দূর করে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়বে। এই নির্বাচন শুধু সরকার গঠন নয়, একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নের পূর্ণতা।

জেবি/এসডি
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD