শোয়েব মালিকের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ‘প্যানিক অ্যাটাক’ হতো সানিয়া মির্জার

ভয় কখনো বলেকয়ে আসে না। আতঙ্ক যখন থাবা মেরে বসে, তখন অনেকেরই বুকে ধড়ফড় শুরু করে, শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে, হাত-পা ঝিমঝিম করে, মাথা ঘোরে— এমনকি দম পর্যন্ত বন্ধ হয়ে জ্ঞান হারানোর মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয়। একে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয়— ‘প্যানিক অ্যাটাক’।
বিজ্ঞাপন
ভারতীয় টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা এমন সমস্যায় দিনের পর দিন ভুগেছেন। পাকিস্তানের তারকা ক্রিকেটার শোয়েব মালিকের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর সন্তানের দায়িত্ব একাই নেন সানিয়া।
বিচ্ছেদের যন্ত্রণা ও ছেলেকে একা হাতে মানুষ করার দায়িত্ব— সবটা মিলিয়ে মাঝেমধ্যে উদ্বেগের পাহাড় জমে তার মনে। আর এর থেকেই ‘প্যানিক অ্যাটাক’-এ আক্রান্ত হন এ টেনিস তারকা।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি ইউটিউব চ্যানেলের এক ‘টকশো’-তে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সানিয়া মির্জা বলেন, যখন-তখন আচমকাই শরীর ঠান্ডা হয়ে আসত। থরথর করে কাঁপুনি হতো। সেই সঙ্গে ঘামে ভিজে যেত শরীর। চোখের সামনেটা যেন দুলে উঠত বারবার। তার মনে হতো, সারা শরীর অবশ হয়ে আসছে। তিনি হারিয়ে ফেলতেন মনের জোর। অনেক দিন পর্যন্ত এ সমস্যায় ভুগতেন তিনি।
‘প্যানিক অ্যাটাক’ কোনো দুরারোগ্য ব্যাধি নয়। এটি মনের এমন এক অবস্থা, যার প্রভাব পড়ে শরীরেও। এ বিষয়ে মনোবিদ অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, কোনো বড় আঘাত পেলে অথবা আকস্মিক ট্রমা, কর্মক্ষেত্রে জটিলতা, প্রত্যাশা পূরণ না হওয়া, উচ্চাকাঙ্ক্ষা— সব মিলিয়ে এক ধরনের উদ্বেগ জন্ম নেয়। খারাপ স্মৃতি কিংবা কোনো অনিশ্চয়তা মনের মধ্যে চেপে বসলেই হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে। মাথার মধ্যে ঝিমঝিম করে। অস্থির লাগে। বুক ধড়ফড় করে। অনেকের সারা শরীর কাঁপতে থাকে, দম বন্ধ হয়ে আসে। বুকে ব্যথাও শুরু হয়। এমন লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে— আপনার প্যানিক অ্যাটাক হয়েছে।
তিনি বলেন, প্যানিক অ্যাটাক একবার বা দুবার হলে তা অতটা চিন্তার ব্যাপার নয়। তবে যদি ঘন ঘন হতে থাকে এবং প্রায় বিনাকারণেই হতে থাকে, তখন তা চিন্তার বিষয়। সেই সময়ে বিষয়টি শুধু উদ্বেগে সীমাবদ্ধ থাকবে না, রোগের পর্যায়ে চলে যাবে, যার নাম ‘প্যানিক ডিজঅর্ডার’।
বিজ্ঞাপন
মনোবিদ অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় আরও বলেন, অতিরিক্ত উদ্বেগে অ্যাড্রিনালিন নামক হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। এ হরমোন অধিক পরিমাণে ক্ষরিত হতে থাকলে হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায় এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের গতিও বেড়ে যায়। এ অবস্থায় সুস্থ মানুষের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এর থেকে মানসিক অবসাদও জন্ম নেয়। অনিদ্রা, প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেয়ে ফেলা, ওজন বৃদ্ধি এবং স্নায়ুর সমস্যাও দেখা দেয়।
এ মনোবিদ বলেন, ‘স্ট্রেস হরমোন’ কর্টিসলের ক্ষরণ বেড়ে যায়। তখন কোলেস্টেরল ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাও দেখা দেয়। কর্টিসল প্রভাব ফেলতে পারে স্নায়ুতন্ত্রের ওপরেও। তাই সে ক্ষেত্রে দেরি না করে মনোবিদের পরামর্শ নিতে হবে। রোগীর অবস্থা বুঝে চিকিৎসা পদ্ধতি ঠিক করা হয়। ‘কগনিটিভ বিহেভেরিয়াল থেরাপি’ করেও চিকিৎসা করা হয় অনেক সময়ে।








