বিপিএলে চট্টগ্রাম রয়্যালসের মালিকানা বুঝে নিলো বিসিবি

বিপিএলের দ্বাদশ আসর শুরুর ঠিক আগের দিন এক অভূতপূর্ব ও অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। আর্থিক সংকটের কথা উল্লেখ করে চট্টগ্রাম রয়্যালস ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানা থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালিকপক্ষ। এর পরপরই দলটির সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব বুঝে নিয়েছে বিসিবি।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে বিসিবির কাছে পাঠানো এক চিঠিতে চট্টগ্রাম রয়্যালসের মালিক কাইয়ুম রশিদ জানান, তারা আর ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানা ধরে রাখতে আগ্রহী নন। চিঠিতে আর্থিক অক্ষমতার বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়। একই সঙ্গে বিসিবিকে দলটির ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নেয় বিসিবি। বিপিএলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা চট্টগ্রাম রয়্যালসের সিনিয়র ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সেখানে আলোচনার পর দলটির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা সরাসরি বিসিবির হাতে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে উপস্থিত কোচিং স্টাফের এক সদস্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
এই সিদ্ধান্তের ফলে এখন থেকে চট্টগ্রাম রয়্যালসের সব কার্যক্রম—দল পরিচালনা, লজিস্টিকস, খেলোয়াড় ব্যবস্থাপনা ও পারিশ্রমিক সংক্রান্ত বিষয়—বিসিবিই দেখভাল করবে। জানা গেছে, ইতোমধ্যে নতুন করে বিদেশি ক্রিকেটার অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে বোর্ড।
দল বুঝে নেওয়ার এই সিদ্ধান্তকে খেলোয়াড়দের জন্য বড় স্বস্তি হিসেবেই দেখা হচ্ছে। কারণ বিপিএল শুরুর আগেই চট্টগ্রাম রয়্যালসের মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে একের পর এক অনিয়ম ও অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠেছিল, যা দলের ভেতরে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি করে।
আগামীকাল (২৬ ডিসেম্বর) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পর্দা উঠছে বিপিএলের দ্বাদশ আসরের। টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই এমন বিপর্যয়ে পড়ায় বিসিবির জন্য এটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উল্লেখ্য, এবারের নিলামে আলোচনার জন্ম দিয়ে সর্বোচ্চ ১ কোটি ১০ লাখ টাকায় জাতীয় দলের ওপেনার নাঈম শেখকে দলে ভিড়িয়েছিল চট্টগ্রাম রয়্যালস।
বিজ্ঞাপন
বিপিএলের উদ্বোধনী দিনেই মাঠে নামার কথা চট্টগ্রাম রয়্যালসের। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে সন্ধ্যা ৭টায় নোয়াখালী এক্সপ্রেসের মুখোমুখি হবে দলটি। তবে ম্যাচের আগ মুহূর্তেও চট্টগ্রাম শিবিরে প্রস্তুতির ঘাটতি স্পষ্ট। এখনো দলটি সব ধরনের সরঞ্জাম হাতে পায়নি। এমনকি প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ পাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার জাস্টিন মাইলস ক্যাম্প কবে বাংলাদেশে আসবেন, সে বিষয়েও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
এর আগে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে তিন বিদেশি ক্রিকেটারের হঠাৎ নাম প্রত্যাহার। পাকিস্তানের লেগ স্পিনার আবরার আহমেদ, আয়ারল্যান্ডের পল স্টার্লিং ও শ্রীলঙ্কার উইকেটকিপার-ব্যাটার নিরোশান ডিকভেলা টুর্নামেন্ট থেকে নিজেদের সরিয়ে নেন।
বিজ্ঞাপন
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পারিশ্রমিক সংক্রান্ত অনিশ্চয়তার কারণেই বিদেশি ক্রিকেটাররা বিপিএলে খেলতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। নিয়ম অনুযায়ী টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ক্রিকেটারদের অন্তত ২৫ শতাংশ পারিশ্রমিক পরিশোধ করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও চট্টগ্রাম রয়্যালস তা পূরণ করতে পারেনি। এমনকি ব্যাংক গ্যারান্টির পুরো অর্থও জমা দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ অবস্থায় এর আগে যখন চট্টগ্রাম রয়্যালসের ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি ও ব্যাংক গ্যারান্টি পরিশোধ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল, তখন বিসিবি দাবি করেছিল—সব শর্ত পূরণ করা হয়েছে। কিন্তু দলটির মালিকানা ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় সেই দাবির বাস্তবতা নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
সব মিলিয়ে, বিপিএল শুরুর ঠিক আগমুহূর্তে চট্টগ্রাম রয়্যালসকে ঘিরে তৈরি হওয়া এই সংকট টুর্নামেন্টের ব্যবস্থাপনা ও ফ্র্যাঞ্চাইজি কাঠামো নিয়ে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।








