আগামী প্রজন্মের হাতে প্রযুক্তির আলো তুলে দিতে চান তরুণ উদ্যোক্তা সৌরভ বিশ্বাস

‘‘আমাকে সৃষ্টিকর্তা যে সামান্য জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়েছেন,তা আমি সাথে নিয়ে যেতে পারব না। কিন্তু রেখে যেতে চাই আগামী প্রজন্মের হাতে, যাতে গড়ে ওঠে এক আলোকিত, প্রযুক্তি-সচেতন সমাজ”এমন স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলেছেন তরুণ এক উদ্যোক্তা সৌরভ বিশ্বাস।
নড়াইল শহর সমাজসেবা কার্যালয়ের অধীন দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আইটি ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কর্মরত সৌরভ পেশাগত দায়িত্বের বাইরে নিজ উদ্যোগে কাজ করছেন শিশু-কিশোরদের প্রযুক্তি শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতে। সম্প্রতি তিনি স্থানীয় একটি স্কুলে যান। সেখানে ছোট্ট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সময় কাটান এবং প্রযুক্তি জগৎ সম্পর্কে ধারণা দেন।
শিশুরা ছিল আনন্দে উচ্ছ্বসিত। কেউ হাতে খাতা-কলম, কেউ আবার রঙিন আঁকিবুকি করা কপি দেখাচ্ছিল। তাদের চোখেমুখে কৌতূহল— কম্পিউটার কীভাবে কাজ করে, ইন্টারনেট কেমন, প্রযুক্তি দিয়ে কত কিছু করা যায়! সৌরভ বিশ্বাস ধৈর্য নিয়ে তাদের সামনে প্রযুক্তির দুনিয়ার একটি ঝলক তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “শৈশবেই যদি শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হয়, তবে ভবিষ্যতে আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবে। তখন তারা কেবল প্রযুক্তি ব্যবহারকারী হবে না, বরং প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও দক্ষতার মাধ্যমে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করবে।”
সৌরভের চোখে প্রযুক্তি শিক্ষা শুধু একটি দক্ষতা নয়, বরং সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার। তিনি মনে করেন, দেশের অনেক মেধাবী শিশু-শিক্ষার্থী রয়েছে, কিন্তু সুযোগের অভাবে তারা পিছিয়ে পড়ে। যদি প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে ধারণা দেওয়া যায়, তবে তারা আগামী দিনের প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে সহজেই নিজেদের জায়গা করে নিতে পারবে।
তার মতে, “আজকের শিশুরাই আগামী দিনের রাষ্ট্রনেতা, বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী কিংবা উদ্যোক্তা। তাদের হাতে আমরা যত বেশি প্রযুক্তির আলো পৌঁছে দিতে পারব, দেশ তত দ্রুত এগিয়ে যাবে।”
সৌরভ বিশ্বাস মনে করেন, এই যাত্রা তাঁর একার নয়। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ যদি এগিয়ে আসে, তবে আগামী প্রজন্মকে দক্ষ, আত্মবিশ্বাসী ও প্রযুক্তি-সচেতন হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। তিনি বলেন, “আপনাদের ভালোবাসা, সহযোগিতা আর উৎসাহই হবে আমার আসল শক্তি। আসুন, আমরা সবাই মিলে শিশুদের হাতে তুলে দিই প্রযুক্তির আলো।”
নড়াইলের মতো শহরে যেখানে এখনও অনেক শিশু প্রযুক্তির ছোঁয়া পায়নি, সেখানে সৌরভ বিশ্বাসের এই প্রচেষ্টা এক নতুন আশার আলো জাগিয়েছে। তাঁর স্বপ্ন— ভবিষ্যতে একটি বড় আকারের বিনামূল্যে প্রযুক্তি শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরাও সমানভাবে শিখতে পারবে কম্পিউটার ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার।
শিশুদের মুখে হাসি দেখে সৌরভ বিশ্বাস আরও অনুপ্রাণিত হন। তিনি বিশ্বাস করেন, ছোট্ট এই পদক্ষেপ একদিন বড় পরিবর্তন আনবে। আগামী প্রজন্মই হবে প্রযুক্তিনির্ভর এক আলোকিত সমাজের নির্মাতা, আর সেই স্বপ্ন পূরণে তিনি নিরন্তর কাজ করে যেতে চান।
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
