প্রেমের টানে বাংলাদেশে ভরতীয় তরুণী অতপর...

প্রেমের টানে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে এসে ফিরে যেতে হয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার এক তরুণীকে।
গত এক সপ্তাহ লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থেকে অবশেষে শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উভয় দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে তাঁকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি থানার পূর্ব দালাইগাঁও চাংমারি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রহিমের মেয়ের (রিয়া পারভীন রিংকি) সাথে অনলাইনে পরিচয় হয় পাটগ্রাম পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের রসুলগঞ্জ থানাপাড়া এলাকার আমিনুর রহমানের ছেলে রবি ইসলামের।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দীর্ঘদিনের আলাপ- আলোচনার পর তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিয়ে করবে প্রতিশ্রতি দিয়ে ছেলে রবি মেয়েকে সীমান্ত পেরিয়ে তাদের বাড়িতে আসতে বলে। এতে উভয়দেশের চোরাকারবারিদের হাত করে কাঁটাতারের বেড়া কেটে বাড়িতে নিয়ে আসার যাবতীয় পরামর্শ ও অর্থের যোগান দেন রবি।
গত শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে মেয়েটি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সীমান্তে প্রহরারত ভারতের বিএসএফ ও বাংলাদেশের বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে গোপনে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এই দিন সকালে শহরের জুম্মাপাড়া এলাকার একটি বাড়িতে মেয়েটিকে নিয়ে যায় রবি। এতে বিষয়টি স্থানীয়দের নজরে আসে। এ সময় বিয়ে দেওয়ার কথা বলে ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে যায় ছেলের বড় বোন শিখা ও ছেলের চাচা বাপ্পি ইসলাম। বাড়িতে মেয়েটিকে নিয়ে লাপাত্তা হয় রবি।
ঘটনা ধামাচাপা দিতে রবির বড় বোন শিখা মেয়েটিকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ফেরত যেতে বলে। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ালে স্থানীয় প্রশাসনের নজর আসে পড়ে শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) পাটগ্রাম থানা-পুলিশ মেয়েটিকে হেফাজতে নেয়।
অপরদিকে মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে ভারতের ময়নাগুড়ি থানায় সাধারণ ডায়েরী করে মেয়ের বাবা আব্দুর রহিম।
বাংলাদেশের থানা-পুলিশ, বিজিবি ভারতীয় পুলিশ ও বিএসএফের সাথে যোগাযোগ করে। পাঁচদিন পর শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের প্রধান পিলার ৮৪২ এর ১ নম্বর উপপিলারের বুড়িমারী স্থলবন্দর শূন্যরেখায় পতাকা বৈঠকের আহবান জানায় বিজিবি।
বৈঠকে ভারতের পক্ষে উপস্থিত ছিল ভারতের ৯৮ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের চ্যাংড়াবান্ধা ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সুরেশ শিং গজ্জার, ময়নাগুড়ি থানা পুলিশের আইসিপি সুবল ঘোষ, ওসি গণেষ মর্ম। বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ৬১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের বুড়িমারী কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার হাফিজুর রহমান, পাটগ্রাম থানার উপপুলিশ পরিদর্শক (এসআই) শাহাজান আলী, বুড়িমারী পুলিশ ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (এসআই) আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ।
পতাকা বৈঠক শেষে উভয় দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে মেয়েটিকে তাঁর বাবা আব্দুর রহিমের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে মেয়ের বাবা আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমার মেয়েকে প্রেম ও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশি যুবক রবি সীমান্ত পার করে এনে পালিয়ে যায়। আমার মনে হয় রবি আমার মেয়েকে পাচার এবং বিক্রি করার জন্য এনেছে। যদি ভালোবাসতো তাহলে তো বিয়ে করতো। বিজিবি-বিএসএফের মাধ্যমে মেয়েকে ফিরে পেয়ে আমি খুশি।’
ভারতে যাওয়ার সময় রিংকি বলেন, ‘রবির সাথে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয়। দীর্ঘদিন সম্পর্ক। বিয়ের আশ্বাসে সীমান্ত পেরিয়ে আমি বাংলাদেশে আসি। রবির পরিবার আমাকে মেনে না নিয়ে তাকে (রিবকে) লুকিয়ে রেখে আমাকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। তাহলে কি রবি আমাকে পাচারের জন্য মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে এনেছে। আমার মত আর কেউ যেন এমন ভোগান্তির শিকার না হয়।’
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
