মৌলভীবাজারে মনু নদীর বাঁধ নিয়ে আতঙ্ক

মৌলভীবাজারের জেলার রাজনগর উপজেলার টেংরাবাজার ইউনিয়নের মনু নদীর বন্যা রক্ষা প্রকল্পের আওতায় আদনাবাজ, টগরপুর ও কোনাগাঁও নামক স্থানে অপরিকল্পীত বল্ক ফেলায় লক্ষাধিক মানুষ রয়েছেন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। বর্ষা মৌসুমের আগে বাঁধ নির্মাণের কাজ ধীর গতিতে শঙ্কিত নদীপাড়ের বাসিন্দারা।
বিজ্ঞাপন
এলাকাবাসীর অভিযোগ অপরিকল্পীত ভাবে বালু উত্তলোন করার কারণে ধ্বসে পড়ে নদীর পাড়। সেই সঙ্গে আবাদি জমি, বসতভিটা বিলীন হওয়ার আশঙ্কা আছে। বর্ষা মৌসুমের রাজনগরে উপজেলায় অসম্পন্ন মনু নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ নিয়ে চরম আতঙ্কে স্থানীয়রা।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যার কবল থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষা করতে মনু নদী খননসহ বাঁধে সিমন্টের বল্ক ফেলছেন ঠিকাদারের মাধ্যমে। মনু নদী পাড়ের ভুক্তভোগীরা বরাবরই অতীতের সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করছেন। ভাঙন রোধে এখনই ব্যবস্থা না নিলে শতাধিক বাড়িঘর নদীতে তলিয়ে যাবে।
জানা যায়, বিগত ২০২৩ সাল থেকে নদীর খনন কাজসহ বল্কের কাজ চলছে। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে বল্ক না ফেলে কোনো কোনো স্থানে স্তুপ করে রেখে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। এর ফলে যে কোনো সময় নদীর পানি বাড়লে বা বর্ষা মৌসুমে দুর্বল বাঁধ ভেঙে যাবে।
বিজ্ঞাপন
বছরের পর বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ রক্ষার কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু স্থায়ী কোনো সমাধান হচ্ছে না। আর নদীর পানি বাড়লে বা বর্ষা মৌসুম এলে সময় বন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে যায়। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলসহ পানি নেমে এলেই পানির অস্থিতিশীলতার কারণে মনু নদের বাঁধের কোথাও না কোথাও ভাঙন দেখা দেয়। প্রকল্পটির কাজ আংশিক শেষ হয়েছে। তার মধ্যে বিভিন্ন স্থান ক্ষতিগ্রস্ত। অরক্ষিত এই প্রতিরক্ষা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন অংশে সংস্কারকাজ করা সম্ভব হয়নি।
এ পর্যন্ত মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে সামান্য ব্লক ও জিও ব্যাগ কিছু কিছু স্থানে ফেলা হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ গত বছরের ক্ষয়ক্ষতির কথা মাথায় রেখে পানি উন্নয়ন বোর্ড আগাম ব্যবস্থা নেয়ার কথা, কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
বিজ্ঞাপন
ভোক্তভুগী আলামিন মিয়া জানান, কিছু এলাকায় সিমেন্টের ব্লক ফেলে, বালুর বস্তা ফেলে হয়েছে।‘কোনো জায়গায় সিমেন্টের ব্লক নেই, আবার বস্তা নেই। সরকারি টাকার কোনো মূল্য নেই তাদের কাছে। নদীপাড়ের বাসিন্দা নদীর বাঁধ সাথে মিশে গেছে,এ বছরের মনে হয় বাড়ি-ঘরও ভেঙ্গে যাবে। দেড় বছরের উপর হয়ে গেছে ব্লক আজও কোনো কাজ হয় না। আগামী বর্ষাকাল আসতেছি বর্তমানে এখন বর্ষাকাল নয় তারপরে নদীর পাড়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গে চলে আসতেছে। যেদিকে নদী ভাঙ্গন নয় সেদিকে ব্লক ফালানো হয়েছে,আর যেদিকে বেশি ভাঙ্গন হয়েছে সেই দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন নজরে নেই।
আরও পড়ুন: মাগুরায় পানিতে ডুবে ৩ শিশুর মৃত্যু
নদীপাড়ের বাসিন্দা আমিনুল হক বলেন আমরা বড় অসহায় এই যে ব্লক মনে করেন ব্লক এলোমেলো ফালানো হয়েছে আমাদের কোনাগাঁও গ্রামে। আমার বাড়িঘর মনে করেন এক হাজার ফুট ছিল, এখন রয়েছে প্রায় দেড়শ ফুট। ব্লকগুলো সঠিকভাবে পরিচর্যা করা হতো আমরা এই লাঞ্ছিত হতাম না। আগামী বর্ষা মৌসুমে বন্যা থেকে বাঁচতে পারতাম।
বিজ্ঞাপন
আরোকজন নদীপাড়ের বাসিন্দা ফারুক মিয়া জানান নদীর ভাঙনের মধ্যেই রয়েছি ওই যে নদী দেখছেন অর্ধেক উপরে হবে আমাদের বাড়িঘর। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণে আজকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। বারবার যদি ঘরবাড়ি ভাঙ্গে তাহলে বাঁচব কী করে? কেউ আমাদের কথা শোনে না।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন অলীদ বলেন, গাড়ি যাওয়ার জন্য রাস্তা করা দরকার! আর রাস্তাটা কিন্তু ব্যক্তির মালিকানার ওপর। যেহেতু ব্যক্তির মালিকানা, সেহেতু জায়গায় দিবে না। সেক্ষেত্রে আমরা ব্লক করতে পারি নাই। খুব শীর্ঘই কাজ শুরু করতে পারব। দু’বছর আগেই আমাদের ব্লকগুলো বানানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা ব্লকগুলো ডাম্পিং কাজ করতে পারব। এবং আশা করতে আমরা এই সূক্ষ মৌসুমেই ব্লক ডাম্পিং এবং প্রেসিং কাজ শেষ করতে পারব। সপ্তাহ ২/১ এর মধ্যে আমরা কাজ শুরু করব। কাজটা বাস্তবায়ন হলে ভাঙনের সমস্যা থাকবে না। টিকাদারের কোনো ভুল নাই, ভুল হল আমরা জায়গা দিতে পারি নাই।